কিডনি রোগীরা কী খাবেন, কী খাবেন না
আমরা জানি, কিডনি রোগীদের খাবারের বেলায় অনেক সতর্ক থাকতে হয়। অনেকেই জানতে চান, কিডনি রোগীরা কী খাবেন আর কোন খাবারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। আজ আমরা সে বিষয়ে জানব একজন পুষ্টিবিদের কাছ থেকে।
কিডনি রোগীরা কী খাবেন, কী খাবেন না—এ নিয়ে এনটিভির স্বাস্থ্যবিষয়ক এক আয়োজনে পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, আজকাল অনেক বেশি ভেজাল খাবার, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, প্রেশার ছাড়াও আরো বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আমাদের চারপাশে কিডনি রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কিডনি রোগীর ডায়েটের কথা বলার আগে আমি বলব, এ ডায়েটটি একদমই স্বতন্ত্র। রোগীভেদে ডায়েটটির ভিন্নতা রয়েছে। তবে সাধারণ দিকনির্দেশনা যদি দিতে হয়, তা হলে কিডনি রোগীর প্রথমেই দেখতে হবে, তার ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা রক্তে কতটুকু আছে। এ ছাড়া আরো বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা থাকে, সেসবের রিপোর্ট দেখে ডায়েট ঠিক করতে হবে।
পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী বলেন, কিডনি রোগীর ডায়েটের ক্ষেত্রে আমরা বলে থাকি, প্রোটিন নিয়ন্ত্রণ সবার আগে জরুরি। রোগীর ওজনের ওপর ভিত্তি করে আমরা সাধারণত প্রোটিন হিসাব করে থাকি। তবে সাধারণভাবে ডাল, ডালজাতীয় যেকোনো খাবার, বাদাম এবং বিচি; অর্থাৎ যে বিচিগুলোকে আপনারা রান্না করতে পারেন, যেমন—মটরশুঁটি, কাঁঠালের বিচি, শিমের বিচি... এ ধরনের দ্বিতীয় শ্রেণির প্রোটিনকে কিডনি রোগীদের এড়িয়ে চলা একান্ত প্রয়োজন। দ্বিতীয় হচ্ছে লবণ। আপনাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, আপনার খাবারে যেন বাড়তি লবণ বা টেবিল সল্ট না থাকে। এ ক্ষেত্রে অনেকের একটি ধারণা হচ্ছে, লবণ তেলে ভেজে গ্রহণ করলে খুব একটা ক্ষতি হয় না। কিন্তু এটা ভুল। কেননা, আপনাকে এক্সট্রা লবণ, যেটি তেলে ভেজে বা যেকোনোভাবেই হোক, আপনাকে এড়িয়ে যেতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে লবণের মাত্রা অবশ্যই আপনার রক্তের সোডিয়ামের ওপর ডিপেন্ড করে নির্ধারণ করতে হবে।
তামান্না চৌধুরী বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, কিডনি রোগীদের জন্য পানি। যখন দেখা যায়, আপনি একজন চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার আগে বুঝতে পারলেন যে আপনার কিডনিতে সমস্যা; অনেকেই পানি খাওয়ার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাদের ধারণা, হয়তো বেশি পানি খেলে কিডনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে। এটা সম্পূর্ণ ভুল। কেননা, অসুস্থ কিডনিতে আপনি যত বেশি পানি খাবেন, তত তার ফাংশন বেশি করতে হবে এবং আরো বেশি দুর্বল হয়ে পড়বে। তাই কিডনি রোগীদের উদ্দেশে বলছি, সাধারণত এটি আমরা রিপোর্ট দেখে বিচার করে থাকি, কিন্তু সাধারণভাবে বলতে পারি, দেড় থেকে দুই লিটারের ওপর কোনোভাবেই পানি বা অন্য কোনো তরল খাওয়া যাবে না। যাদের কিডনি সমস্যা অনেক বেশি, তাদের এক লিটারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে।
এ পুষ্টিবিদ আরো বলেন, রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে সবজি বা ফলের ওপরও আমরা বেশ কিছু বিধিনিষেধ দিয়ে থাকি। সাধারণত আপেল, পেঁপে এবং নাশপাতি কিডনি রোগীদের জন্য নিরাপদ ফল। তবে এটিও খেতে হবে পরিমাণের মধ্যে। আর বেশ কিছু সবজি, যেমন—শসা, টমেটো, গাজর ছাড়াও ঢেঁড়শ ও ফুলকপি; এ জাতীয় সবজি, যেগুলো আমাদের রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়াতে পারে, সেগুলো আপনাকে এড়িয়ে যেতে হবে।
তামান্না চৌধুরীর পরামর্শ, কিডনি রোগ হলে ভয় পাবেন না। সঠিকভাবে ব্যালেন্স ওয়েতে খাবার মেইনটেইন করলে কিডনি রোগ নিয়ে অনেক দিন সুস্থ থাকা সম্ভব।