জাফরান খাওয়ার ৫ উপকারিতা
জাফরান বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল মশলাগুলোর মধ্যে একটি। এক পাউন্ড জাফরানের দাম প্রায় ৫০০-৫০০০ ডলার। এর বেশ উপকারিতা রয়েছে। যার কারণে এটি প্রাচীনকাল থেকেই জনপ্রিয় মশলা। জাফরানের সুন্দর রঙ এবং গন্ধ রয়েছে। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন মিষ্টি খাবারে এটি ব্যবহৃত হয়। মাঝে মাঝে চা হিসাবেও এটি খাওয়া হয়। প্রাচীনকালে, জাফরানের নির্যাস বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার চিকিৎসার জন্যও ব্যবহৃত হয়েছে। ঋতুস্রাবের সমস্যা, পেটের সমস্যা, আলসারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য জাফরান বেশ পরিচিত।
জাফরান ক্রোকাস স্যাটিভাস লিনের ফুল থেকে আসে। এই ফুলটি প্রতি বছর অক্টোবর এবং নভেম্বর মাসে ফোটে। এটি তিন থেকে চার সপ্তাহ স্থায়ী হয়। এগুলো থেকেই জাফরান সংগ্রহ করা হয়। এর উৎপত্তি নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। সম্ভবত ইরানে এর আবিষ্কার হয়েছে। বর্তমানে ভারত, গ্রীস এবং ইউরোপে চাষ করা হয়। জাফরান তার ঔষধি বৈশিষ্ট্যের জন্য জনপ্রিয়। এটি লিবিডো বাড়াতে, স্মৃতিশক্তি এবং মেজাজ উন্নত করতে খাওয়া হয় বলে জানা যায়
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
জাফরান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এটি ফ্রি র্যাডিকাল এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে। জাফরানের অন্য স্বাস্থ্য উপকারিতার মধ্যে এটি একটি। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো কোষের ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। গবেষণায় আরও প্রমাণিত হয়েছে যে, জাফরানের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের জন্য উপকারী হতে পারে। এর নির্যাস থেকে ক্রোসিনের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। যা স্মৃতিশক্তি এবং শেখার ক্ষমতা উন্নত করতে সহায়তা করতে পারে। জাফরানের একটি স্বতন্ত্র স্বাদ এবং সুগন্ধ রয়েছে। জাফরান ফুলের পাপড়িতে কেম্পফেরল পাওয়া যায়। এটি প্রদাহ কমায়।
মেজাজ উন্নত করে এবং হতাশার লক্ষণগুলো দূর করে
জাফরান আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। আচরণগত এবং মস্তিষ্ক বিজ্ঞানের জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, জাফরানের নির্যাস মস্তিষ্কে ডোপামিনের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে ভূমিকা পালন করে। অন্য একটি গবেষণা থেকে জানা যায় যে, প্রতিদিন ৩০ মিলিগ্রাম জাফরান গ্রহণের ফলে এমন প্রভাব দেখা দিতে পারে
যা ইমিপ্রামাইন এবং ফ্লুওক্সেটিন ড্রাগ চিকিত্সার অনুরূপ। মানুষ ড্রাগ চিকিত্সার তুলনায় জাফরান ব্যবহার করে কম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অনুভব করে। হতাশা দূর করার জন্য জাফরান কার্যকর।
ক্যানসার মোকাবেলা
জাফরান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফ্ল্যাভোনয়েড সমৃদ্ধ। যা ফ্রি র্যাডিকালগুলোকে নিরপেক্ষ করতে সহায়তা করে। ফ্ল্যাভোনয়েডগুলো একটি রাসায়নিক। এটি উদ্ভিদকে রোগ এবং ছত্রাক থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। টেস্ট টিউব স্টাডিতে দেখা গেছে যে, জাফরান এবং এর যৌগগুলি কোলন ক্যানসার কোষগুলোকে মেরে ফেলে। এই প্রক্রিয়াতে স্বাস্থ্যকর কোষগুলো আমাদের দেহে থাকে। এই প্রক্রিয়ায় ফুসফুস, স্তন, প্রোস্টেট, জরায়ু এবং অন্যান্য ক্যানসার প্রতিকার হয়।
পিএমএস লক্ষণগুলিতে সহায়তা করে
পিএমএস হল প্রাক মাসিক সিন্ড্রোম। মহিলাদের পিরিয়ড শুরু হওয়ার আগে মানসিক, শারীরিক এবং সংবেদনশীল লক্ষণগুলো পিএমএস । জাফরান পিএমএসের লক্ষণগুলো মোকাবেলায় কার্যকর হতে পারে। কিছু গবেষণা অনুসারে এটি পিএমএস সম্পর্কিত হতাশার লক্ষণগুলো কমাতে সাহায্য করে। ২০-৪৫ বছর বয়সী মহিলাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রতিদিন ৩০ মিলিগ্রাম জাফরানের নির্যাস গ্রহণ করলে তৃষ্ণা, মাথাব্যথা, এবং বিরক্তির মতো পিএমএস লক্ষণগুলি কমে যায়। ঘরোয়া প্রতিকার হিসাবে এটি একটি ভাল বিকল্প হতে পারে।
হার্টের জন্য ভালো
জাফরানে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান রয়েছে। এরা রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করতে পারে। যার ফলে আপনি হৃদরোগ থেকে সুরক্ষা পাবেন। জাফরান শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরল দূর করে থাকে। জাফরানের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যগুলো হৃদরোগের জন্য প্রতিরক্ষামূলক উপাদান হিসাবে কাজ করতে সহায়তা করতে পারে।
গরম পানিতে কয়েকটি জাফরান ভিজিয়ে রাখতে পারেন। এটি চা হিসাবে পান করতে পারেন। জাফরান মাংস, শাকসবজি বা বেকড পণ্য রান্না করার সময়ও ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলো খাবারের স্বাদ আরও বাড়িয়ে তুলবে। খাবারে হলুদ-কমলা রঙ যুক্ত করবে।
প্রতিদিন ১.৫ গ্রাম জাফরানের নির্যাস নিরাপদ হিসাবে বিবেচিত হয়। তবে এর চেয়ে বেশি গ্রহণ করলে বিষাক্ত হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, বেশি জাফরান খেলে অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভবনা থাকে। উচ্চ পরিমাণে জাফরান খেলে ভ্রূণের বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে। অনেক সময় গর্ভপাতের সম্ভাবনা বাড়ায়। অতএব গর্ভবতী এবং বুকের দুধ খাওয়ানো মহিলাদের অবশ্যই উচ্চ মাত্রায় জাফরান খাওয়া এড়ানো উচিত।
সূত্র- পিঙ্কভিলা