বিষণ্ণতার লক্ষণ ও কারণ
আমাদের অনেকের কাছে বিষণ্ণতা অন্যতম সমস্যা। আর বিষণ্ণতা থেকে মনকে ভালো রাখতে হলে বিশেষ কিছু পরামর্শ মেনে চলতে হয়। আর তা অবশ্যই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকে নিতে হবে। আজ আমরা একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছ থেকে জানব, ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা কী ? কী কী কারণে ডিপ্রেশন হতে পারে।
এনটিভির নিয়মিত স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠান স্বাস্থ্য প্রতিদিনের ৪৭৭৯ একটি পর্বে ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফাতিমা জোহরা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেছেন ডা. সামিউল আউয়াল সাক্ষর।
ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা কখন বলব, সঞ্চালকের প্রশ্নের জবাবে ডা. ফাতেমা মারিয়া খান বলেন, সাধারণত কেউ মন খারাপ করলেই, তাকে ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতায় ভুগছেন বলা মনে করা হয়। বিষণ্ণতা হলো মন বা মেজাজের একটি রোগ। এই মেজাজ হচ্ছে মস্তিষ্কের কাজের একটি অংশ। মানুষের আবেগ, মেজাজ, চিন্তা হচ্ছে মস্তিষ্কেরই অংশ।
যখন কোনো একটি অবস্থা আমাদের পক্ষে না যায়, তখন এটা মন খারাপের কারণ হয়। আর মন খারাপের তিনটি অংশ হচ্ছে- প্রিডমিন্টে, পার্পাসিভ, পার্সিসটেন্ট। পার্সিসটেন্ট হচ্ছে কারও ক্ষেত্রে মন খারাপ যদি একটানা ১৪ দিন বা এর অধিক থাকে এবং দিনের বেশিরভাগ সময়ই যেকোনো কর্মকাণ্ডে আপনার মন খারাপ থাকে। তখন তাকে প্রধান বিষণ্ণতাজনিত ব্যাধি (Major depressive disorder) বলে। এ ছাড়া কোনো কারণ ছাড়াও মন খারাপ হতে পারে।
যখন আপনার মন খারাপ দৈনন্দিন কাজকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। ফলে সব ধরনের সম্পর্ক অবনতি হয়, খিটখিটে মেজাজ হয়, কাজে মনযোগ থাকে না, অল্পতে রাগ হয়, আত্মহত্যার চেষ্টা ইচ্ছ তৈরি হয়, তখন এটাকে প্যাথলজিক্যাল স্যাডনেস (আবেগপূর্ণ বা অসুস্থজনিত বিষণ্ণতা) বলা হয়।
কোন কোন কারণে মানুষ ডিপ্রেশনে পড়ছে, ডিপ্রেশন কি কি কারণে হচ্ছে, সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. ফাতেমা মারিয়া খান বলেন, যখন কারও ভেতরে ডিপ্রেশন থাকবে। সেক্ষেত্রে ৪টি লক্ষণ বা এর অধিক লক্ষণ প্রকাশ পায়। প্রথমত,বিষণ্ণতা বা দুঃখ। দ্বিতীয়ত, কোনো কিছু ভালো লাগবে না।
উপরের দুটি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে কারও মধ্যে পার্সিসটেন্ট যদি একটানা ১৪ দিন হয়। এর সঙ্গে আরও ৪টি লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন, অনেকের ক্ষেত্রে ঘুমের সমস্যা হয়, কেউ বেশি ঘুমায়। কারও খাবারের অরুচি থাকে, আবার অনেক বেশি খায়। কোনো কিছুতে মনোযোগ দিতে পারে না, সেক্ষেত্রে দুর্বলতা বেশি কেন্দ্রীভূত হয়। অনেকের ক্ষেত্রে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায়, খুব বেশি অসাড় হয়ে গেছে, সারাক্ষণ অলসতা থাকে। তখন এটাকে ডিপ্রেশন বলা হয়।
আবার কোনো কারণ ছাড়াই ডিপ্রেশন হতে পারে। এক্ষেত্রে কোনো অর্গানিক ডিজিজ থাকলে। উদাহারণস্বরপ এটাকে এন্ডোজেনাস ডিপ্রেশন বলা হয়। এটাকে বিভিন্ন শারীরিক ব্যাধিকে দায়ী করা হয়। কারও দেহে যদি দীর্ঘ দিন কোনো রোগ থাকে। যেমন: ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, অনেকে দীর্ঘ দিন স্টেরয়েড খাচ্ছে, নিউরোলজিক্যাল সমস্যা আছে, হাইপোথাইরয়েডিজম সমস্যা আছে, হরমোনাল সমস্যা আছে ও দীর্ঘ দিন ওসিপি খাওয়ার ফলে বিষণ্ণতার সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া বিষণ্ণতার অন্যতম কারণ হচ্ছে মাদকাসক্তি। অনেকে দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন ধরনের মাদক গ্রহণ করার ফলে ডিপ্রেশনের বিকাশ হয়, তাদের অনেক ধরনের পরিণতি বরণ করতে হয়।
এ ছাড়া এক্সোজেনাসের মধ্যে বলা হয় বিভিন্ন চাপযুক্ত পরিস্থিতির অন্যতম কারণ। যেমন: চাকরি নেই, অর্থনৈতিক সমস্যা, প্রেমঘটিত সমস্যা, ডিভোর্স হয়ে গেছে। তাই যে কোনো ধরনের চাপযুক্ত পরিস্থিতিতে অনেক দিন থাকলে, সেক্ষেত্রে কোনো মানসিক স্বাস্থ্য সমাধানে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে বিষণ্ণতা হতে পারে।
ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা সম্পর্কে আরও জানতে উপর্যুক্ত ভিডিওটি সম্পূর্ণ দেখুন। এ ছাড়া স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত জানতে এনটিভি হেলথ ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং জানুন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ।