শরীরে অবাঞ্ছিত লোম হলে করণীয়
শরীরে যে অংশে লোম থাকার কথা নয়, সেখানে লোম হলে আমরা তাকে অবাঞ্ছিত লোম বলি। অবাঞ্ছিত লোম নিয়ে অনেকে বিব্রত হন। আজ ২৭ মে এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২০৪৮তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ঢাকার বনানীর স্কিন লেজার সেন্টারের পরামর্শক ডার্মাটোলজিস্ট এবং লেজার বিশেষজ্ঞ ডা. শেহরিন এম হক।
প্রশ্ন : শরীরে যে অংশে লোম থাকার কথা নয়, সেখানে লোম হলে সেটি উদ্বেগের কারণ হয়। এগুলো সৌন্দর্যহানি ঘটায়। এই অবাঞ্ছিত লোম মানুষের হয় কেন?
উত্তর : আমাদের ত্বকে যে সমস্যা হয়, তা সাধারণত দেহের ভেতরের বিভিন্ন কারণে প্রকাশ পায়। যাদের হরমোনাল সমস্যা থাকে, বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রম থাকে, সেই ক্ষেত্রে অবাঞ্ছিত লোম হয়। এটি বিশেষ করে মুখে হয়ে থাকে। এটি বিব্রতকর তাদের জন্য। আবার অনেক মেয়েদের ক্ষেত্রে পুরুষালি হরমোন বেশি থাকে। সেই ক্ষেত্রে তাদের চুল গজায়। এ সমস্ত পদ্ধতিগত কারণে দেখা যায় তার বিভিন্ন জায়গায় অবাঞ্ছিত লোম গজাচ্ছে। এই লোমগুলো সাধারণত থাকার কথা না।
প্রশ্ন : এর বাইরেও আমরা দেখতে পাই কোনো নির্দিষ্ট একটা জায়গায় কালো করে অনেক লোম গজেছে। এর কারণ কী?
উত্তর : এর কারণটা অবশ্য ভিন্ন। ওদের যদি আমরা জিজ্ঞেস করি তবে দেখা যাবে এটি জন্মগত। এদের বলা হয় লিভাস স্পাইলাস। লিভাস হলো তিল। আমরা যখন সেখানের চুলটা ফেলব তখন দেখব ওখানে একটা কালো তিল রয়েছে। তিলটার ওপরে চুল থাকবে। এটা অনেক সময় মুখের পাশে হয়। পিঠে হয় অনেক বড় করে। এটা পুরোপুরি জন্মগত বিষয়। তবে এটি পদ্ধতিগত না।urgentPhoto
প্রশ্ন : যদি পদ্ধতিগত কারণে হয় অথবা এ রকম জন্মগত কারণেই যদি সমস্যা হয়, সেই চুল ফেলার জন্য কী কী পদ্ধতি রয়েছে? এটি ফেলে দেওয়া কতটা জরুরি এবং কেন?
উত্তর : আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এই বিষয়টি বিব্রতকর। এ জন্য তারা করতে চায়। আমি তখন তাদের কিছু পরীক্ষা করতে দিই। পরীক্ষাগুলো করার পর হয়তো আমরা দেখতে পেলাম তার সিস্ট আছে। পুরুষ হরমোন হয়তো বেশি। সেই ক্ষেত্রে ওষুধ দিয়ে থাকি। ওষুধের মাধ্যমে তার হরমোনের মাত্রাটা কমে গেলে অবশ্যই তার চুলের বৃদ্ধিটা কমে যাবে। কিন্তু আগের চুলগুলো রয়ে যাবে। সেই ক্ষেত্রে আমরা লেজার ব্যবহার করে থাকি।
প্রশ্ন : আপনি বলছিলেন পদ্ধতিগত কারণেও চুল গজাতে পারে। সেই ক্ষেত্রে যে কারণ ছিল তারও কী চিকিৎসা লাগবে?
উত্তর : আমি এই ক্ষেত্রে কোনোভাবেই সমঝোতা করতে রাজি না। কারণ যেহেতু চুল গজানোটা ভেতরের রোগের কারণে হচ্ছে, তাই ভেতর থেকে রোগটা যদি সরাতে না পারি তাহলে শুধু লেজার করে কমবে না। পুনরায় হওয়ার আশঙ্কা রয়ে যাবে।
প্রশ্ন : এই অবাঞ্ছিত লোম দূর করতে ঐতিহ্যগত (ট্রাডিশনাল) বিষয় চলে আসছে। পাশাপাশি উন্নত চিকিৎসা লেজারও ব্যবহার হচ্ছে। দুটির মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর : ট্রাডিশনাল যেই বিষয়গুলো ছিল, বিশেষত জন্ম থেকে যেই সমস্যাটি হচ্ছে এর কোনো চিকিৎসা ছিল না, ওয়াক্স বা শেভ করা ছাড়া। আর আরেকটি যেটা করা হতো, ইপিলিশন করে তুলে ফেলা হতো। একটা একটা করে গোড়া থেকে চুল তুলে ফেলা হতো। যেটা ত্বকের ক্ষতির জন্য একটি বড় কারণ।
প্রশ্ন : কেন?
উত্তর : কারণ গোড়াটা তো রয়েই যাচ্ছে। ফলে আবার ওখান থেকে চুল গজাচ্ছে। আর এখন যেই লেজার দিয়ে চিকিৎসা করা হচ্ছে, তার লক্ষ্যই হচ্ছে গোড়া এবং হেয়ার ফলিকল। আমরা প্রথমে শেভ করে নিই। অনেক রোগী প্রশ্ন করে শেভই তো করে নিলেন তাহলে কীভাবে বুঝব?
তখন বলি, কারণ শেভ না করে যদি আমরা লেজার করি তবে চুলটা গায়ে পড়বে এবং পুড়ে যাবে। আর আমাদের লক্ষ্য হলো গোড়া এবং হেয়ার ফলিকল। লেজার করলে এটা একদম মরে যায়। এটিই হলো এর চিকিৎসা। এ ছাড়া আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে আমরা আরো কিছু জিনিস করতাম। তবে এটাতে পুনরায় চুল হতো। লেজারে স্থায়ীভাবে আমরা চুলের গোড়াটা নষ্ট করে দিই। এতে আস্তে আস্তে চুল বৃদ্ধি কমতে থাকে। তবে এর জন্য কয়েকটা সেশন প্রয়োজন হয়। চার থেকে ছয়টা সেশন লাগে।
প্রশ্ন : কতদিন পরপর লাগে?
উত্তর : একটি সেশনের পর আমরা দেখি যে বৃদ্ধিটা কেমন হলো। একজন হয়তো খুব ঘন মোটা চুল নিয়ে এলো, সেইটাই আমরা পরের সেশনে আশা করব অনেক পাতলা হয়ে যাচ্ছে, লম্বা হচ্ছে। এবং তারপরের সেশনে আরো পাতলা হয়ে যাচ্ছে, আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে।
প্রশ্ন : এত সেশনে যে লেজার দিচ্ছেন এতে ত্বকের মানের এবং রঙের কোনো পরিবর্তন হয় কি না?
উত্তর : না ত্বকের রঙের কোনো পরিবর্তন হয় না। কারণ আমাদের দেশের ত্বকের ধরন টাইপ –থ্রি থেকে শুরু হয়। লেজারটা মূলত এশিয়ান ত্বকের ধরনের জন্য। এটাতে প্যারামিটার নির্দিষ্ট করা থাকে। আমরা পাশ্চাত্যের কোনো যন্ত্র ব্যবহার করি না যে বাদামি রং বা সোনালি রং দিতে পারব। যেটা করব অবশ্যই সেটা ত্বকবান্ধব।
প্রশ্ন : লেজার করার পরে কি তা পুনরায় হওয়ার আশঙ্কা থাকে?
উত্তর : যদি ভেতরের সমস্যাটা দূর করা যায়, তা আর পুনরায় হবে না। এই চিকিৎসায় তো চার-পাঁচ মাস লেগেই যায়। যদি ভেতরের সমস্যাটি দূর করতে পারি তবে আর হওয়ার আশঙ্কা নেই। এতে স্থায়ীভাবে অবাঞ্চিত লোম দূর করা যায়।
প্রশ্ন : লেজার চিকিৎসার নাম শুনলেই আমাদের সবার চিন্তা হয় এটা ব্যয়বহুল চিকিৎসা। কারণ আধুনিক যত চিকিৎসা আসে, সেটা ব্যয়বহুল হয়। এই স্থায়ীভাবে অবঞ্চিত লোম দূর করার খরচ কেমন?
উত্তর : আগে ত্বকের জন্য ওষুধ ছিল, মলম ছিল। এগুলো আমরা ব্যবহার করতাম। এখন লেজারটা বাড়তি ভালো বিষয়। যেটা আমরা আরো কিছু করতে পারব। যেমন, যেটা বলা হয় লিভাস স্পাইলাস। এর জন্য আলাদা লেজার আছে। কিউ সুইচ লেজার। আগে আমরা এই চিকিৎসা দিতে পারতাম না। দেখা যেত অনেক মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না। এগুলো এখন আমরা দূর করতে পারি। তাই লেজার আলাদা কিছু না। এটা চর্মরোগেরই একটি অগ্রবর্তী চিকিৎসা।
আমার পক্ষ থেকে বলব, এর মোটেও বেশি খরচ না। যদি থুতনির নিচের অংশ করে থাকি প্রতি সেশনে দুই হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করছি। লেজার করার খরচটা অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে অনেক কম।