ভাইরাসজনিত সমস্যায় অ্যান্টিবায়োটিক নয়

অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার খুব বুঝেশুনে করা প্রয়োজন। যে কোনো রোগের ক্ষেত্রেই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার ঠিক নয়।
এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৬০৬তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. ইফতেখার উল হক খান। বর্তমানে তিনি কুমিল্লা ট্রমা সেন্টারের শিশু বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : কখনো কখনো বাবা-মায়েরা মনে করেন শিশুদের অ্যান্টিবায়োটিক লাগবে। এটা তারা নিজেরাই কিনে খাওয়ান। কখনো চিকিৎসকের কাছে গিয়ে তাঁরা একটু জোর দেন যে আমার সন্তানকে ভালো অ্যান্টিবায়োটিক দিন। এ বিষয়ে আপনার মত কী।
উত্তর : এ বিষয়ে আসলে অভিভাবকদের আরো সচেতন হওয়া জরুরি। আপনি যেটি বলছেন ঠিকই আছে। আসলে দুই ধরনের ঘটনাই ঘটে। কিন্তু মূলত বুঝতে হবে আসলে শিশুটির অ্যান্টিবায়োটিক লাগবে কি লাগবে না। যদি অ্যান্টিবায়োটিক লেগে থাকে, অর্থাৎ যদি ব্যাকটেরিয়াজনিত সমস্যা হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই ভালো করতে হলে তাকে অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে। শুধু দিলেই চলবে না, এটি সঠিক মাত্রায়, সঠিক কোর্সে এবং সেই সংক্রমণের জন্য সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হবে।
প্রশ্ন : সেটি কীভাবে সম্ভব?
উত্তর : মনে করেন একটি বাচ্চার শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ বা নিউমোনিয়া হয়েছে, সে ক্ষেত্রে আমাদের ধারণা করে বুঝতে হবে যে এটি সাধারণ নিউমোনিয়া নাকি মারাত্মক নিউমোনিয়া। যদি দেখা যায় সেটি মারাত্মক নিউমোনিয়া নয়, সে ক্ষেত্রে হয়তো মুখে খাওয়ার অ্যান্টিবায়োটিক দিলেই আশা করা যায় শিশুটি ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় মারাত্মক নিউমোনিয়া হয়ে গেছে। সে ক্ষেত্রে কেবল মুখে খাওয়ার অ্যান্টিবায়োটিক দিলেই হবে না। সেই ক্ষেত্রে হয়তো ইন্টারভেনাসলি অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া লাগতে পারে।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করল তবে দুদিন, চারদিন পর একটু উন্নতি হলো, অ্যান্টিবায়োটিক কোর্সটা বন্ধ করে দিল। পুরোপুরি কোর্সটা শেষ না করে দিয়ে আগেই বন্ধ করে দিচ্ছেন। আরেকটি যেটা হচ্ছে সেটি হলো ভাইরাসের কারণে ইনফেকশন।
আমরা আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখতে পাই, প্রতিদিনই ৬০ থেকে ৭০ ভাগ বাচ্চা ভাইরাসজনিত সংক্রমণের কারণে আমাদের কাছে আসে। ভাইরাসজনিত সংক্রমণের কারণে দেখা যায় শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ, টনসিলাইটিস বা ফ্যারিংজাইটিস বা ইনফ্লুয়েঞ্জা জাতীয় রোগ নিয়ে আমাদের কাছে আসছে।
সম্প্রতি আমাদের দেশে মহামারীর মতো হয়ে গেল হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ। এটা কিন্তু ভাইরাসজনিত। এখানে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন নেই। হয়তো শিশুটি অনেক অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। বাবা-মা মনে করছেন অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে। চিকিৎসকের কাছে এসে অনেক সময় জোরাজুরি করছেন অ্যান্টিবায়োটিক দিতে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে নিজেরাই হয়তো অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে দিচ্ছেন। এতে রোগ তো ভালো হচ্ছেই না, রোগ হয়তো এমনিতেই একটি সময় ভালো হয়ে যেত, সেই ক্ষেত্রে হয়তো একটি দীর্ঘসূত্রতার মধ্যে শিশুটি প্রবেশ করছে। সুতরাং দুই ধরনের সমস্যারই আসলে আমরা মুখোমুখি হচ্ছি।