হাড়ের জন্মগত ত্রুটিগুলো কী

জন্মগতভাবে হাড়ে কিছু ত্রুটি হতে পারে। শুরুতেই এর চিকিৎসা জরুরি। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৬২৬তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. মনোয়ারুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল অর্থোপেডিকস সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : হাড়ের জন্মগত ত্রুটি কী ধরনের হয়ে থাকে?
উত্তর : জন্মগত ত্রুটি আমাদের অনেক হয়। এই ত্রুটি আমরা যদি জন্মের সঙ্গে সঙ্গে ধরতে পারি, তার চিকিৎসাও অনেক সহজ। জন্মগত ত্রুটির মধ্যে একটি বিশাল দৃশ্যমান ত্রুটি হলো পা। দেখবেন যে পা বাঁকা হয়। সাধারণ বাংলায় আমরা বলি ক্লাব ফুট। জন্মের পরপরই এর চিকিৎসা শুরু করতে হবে। এর চিকিৎসায় যত দেরি করব, তত ফল খারাপ হবে।
কিছু জন্মগত ত্রুটি আছে, যেগুলো পরীক্ষা না করলে ধরা পড়ে না। যেমন পৃষ্ঠদেশ। এখানে যদি নবজাতক শিশুকে একজন ভালো অর্থোপেডিকস সার্জন না দেখেন, সে এটা ভুল করতে পারে। পৃষ্ঠদেশের বৃদ্ধির এ সমস্যা যদি রোগী প্রথমে ভুল করে, তখন সমস্যা হয়। এসব বাচ্চার হাঁটাটাও দেরিতে শুরু হয়। আমরা জানি, শিশু হাঁটে এক থেকে সোয়া বছরের ভেতরে। দেখা যায় হাঁটা শুরু করেছে ১৫ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে। এই যে হাঁটতে একটু দেরি হওয়া, এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে। সে যখন হাঁটবে দেখা যাবে, দুটো পা ফাঁক করে হাঁসের মতো হাঁটে। এই সময় যদি রোগ নির্ণয় হয় যে পৃষ্ঠদেশ দুটো জন্ম থেকেই বাইরে রয়ে গেছে, চিকিৎসা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। জন্ম নেওয়ার পরই শিশুকে চিকিৎসা করতে হবে। জন্মের পরপরই সে যদি চিকিৎসা শুরু করে, এটা সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য। জন্মের পরপরই দেখতে হবে কোনো সমস্যা আছে কি না।
প্রশ্ন : সমস্যা যাতে ধরা যায়, সেজন্য কী করণীয়?
উত্তর : মা যখন গর্ভে সন্তানকে ধারণ করেন তখনই এটা ধরে ফেলে। তবে আমাদের দেশ যেহেতু অনগ্রসর দেশ, আমরা সেই পর্যায়ে যাইনি, তবে প্রসব যদি একটি প্রতিষ্ঠানে হয়, যেকোনো একজন জেনারেল ফিজিশিয়ানও যদি এই বাচ্চাকে দেখে, সে কিন্তু এটি ধরে ফেলতে হবে। আমরা বিরাট একটি বিপর্যয় থেকে বাচ্চাকে রক্ষা করতে পারি।
প্রশ্ন : আর কী কী ধরনের ত্রুটি রয়েছে?
উত্তর : অনেক জন্মগত ত্রুটি হতে পারে। তবে সবচেয়ে প্রচলিত যেটি সেই সম্বন্ধে বলতে পারি। অনেক সময় পিঠে মেরুদণ্ড ভালো করে হয় না; বিশেষ করে নিচে। তখন দেখা যায়, শিশুটি কান্নাকাটি করলে পেছনের দিকে ফুলে যায়। এটি প্রাথমিক অবস্থায় ধরতে হবে এবং চিকিৎসা করতে হবে। এটা যদি চিকিৎসা না করা হয়, তার দৈনন্দিন কাজে পায়খানা, প্রস্রাব ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্যারালাইসিস হতে পারে। এটা একটি বাজে ধরনের অসুখ। কোনো কোনো সময় উপযুক্ত চিকিৎসা দেওয়ার পরও আজীবন বাচ্চাটি পঙ্গু হয়ে থাকে। সুতরাং একদম জন্মের পরপরই জিনিসটিকে ভালো করে খেয়াল রাখতে হবে।
প্রশ্ন : আপনাদের কাছে রোগীরা এলে কী ধরনের সমস্যা নিয়ে আসে?
উত্তর : আমাদের কাছে নিয়ে এসে বলে যে বাচ্চা প্রস্রাবের কাপড় নষ্ট করে দেয়। এরপর তার পায়ে কোনো অনুভূতি নেই। যে সময় তার দাঁড়ানোর কথা সে দাঁড়ায় না। অল্পতেই কেটে যায়। যেহেতু অনেক সময় বাচ্চার এমন হয় যে, তার স্নায়ুর পদ্ধতি বৃদ্ধি পায়নি, তার অনুভূতিপ্রবণ ত্বক তৈরি হয়নি, সে হয়তো হাঁটছে তবে চামড়া কেটে গেছে। এভাবে বাচ্চা যদি আসে, তখন সত্যিকার অর্থে তেমন কিছু করার থাকে না।