রোজায় গ্যাসট্রিকের সমস্যায় কী করবেন
রোজায় খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তনের কারণে অনেক সময় গ্যাসট্রিকের সমস্যা হয়। আজ ১৮ জুন এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২০৭০তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবদুল জলিল চৌধুরী।
urgentPhoto
প্রশ্ন : রোজা এলে আমাদের খাদ্যাভ্যাসের দুই রকম পরিবর্তন হয়। একটা হচ্ছে সময়ে। আগে সকালের নাশতা করতাম, দুপুরে খেতাম এবং রাতে খেতাম। তবে রোজার সময় এই সময় পরিবর্তন হয়ে যায়। এতে করে কোনো সমস্যা হয় কি না? আরেকটি হচ্ছে খাদ্যাভ্যাসের গুণগত মান বা ধরনের পরিবর্তন হয়, ইফতার মানেই তৈলাক্ত খাবারের প্রবণতা। এতে অনেকেরই্ গ্যাসট্রিকের সমস্যা হয় এই বিষয়ে আপনার পরামর্শ কী?
উত্তর : আপনি যেসব পরিবর্তনের কথা বললেন, তার সঙ্গে আরেকটি পরিবর্তন আছে। এখন তো গরমের দিন, রোজার সময় কিন্তু অনেক লম্বা দিন, প্রায় ১২ ঘণ্টা, আবার শীতকালে সময়টা কমে আসবে এটাও একটা পরিবর্তন।
এ ছাড়া খাদ্যাভাসের পরিবর্তনের কথা আপনি বলেছেন। একটা বিষয় আছে কেন যেন ক্ষুধা বেশি লাগলে মানুষের ঝাল, ভাজা-পোড়ার দিকে বেশি আকর্ষণ থাকে। সুতরাং স্বাভাবিকভাবে এই ঐতিহ্য গড়ে উঠছে যে ঝাল, ভাজাপোড়া খায়। ঝাল, ভাজাপোড়া খাবার কোথায় প্রস্তুত করে এটি একটি প্রয়োজনীয় বিষয়। কারণ রোজার সময় দোকানি বিভিন্নভাবে ইফতার তৈরি করেন। সেখানে কী ধরনের তেল বা মসলা ব্যবহার করা হয়, আমরা জানি না। আমরা ঠিকমতো জানি না যে কী খাচ্ছি।
যেহেতু আমরা অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকি, তখন যদি আমরা ঝাল, ভাজাপোড়া খাই, এর ফলে পাকস্থলীতে একধরনের এসিড-জাতীয় রস নিঃসরণ হয়। যদি আমরা ঘন ঘন খাই, এসিডের সঙ্গে সে খাদ্য মিশে গিয়ে এটা নিউক্লিয়াস হয়ে যায়। তবে যখন আমরা ক্ষুধার্ত থাকি, তখন শুধু এসিডই থাকে। আর কোনো খাদ্য সেখানে থাকে না। এই এসিডের সঙ্গে যখন ঝাল, ভাজাপোড়া মিশবে, তখন এমনি জ্বালাপোড়া হবে। যাদের গ্যাসট্রিক আছে, রিফ্লাক্স একটি অসুখ আছে গ্যাসট্রিকের মতোই বুক জ্বালাপোড়া করে, তাদের এই সমস্যাগুলো বাড়বে।
আগে তো দিনের বেলায় কয়েকবার খাওয়া হতো এখন সারা দিন আমরা না খেয়ে থাকি। না খেয়ে থাকার কারণে যাদের শরীরে আলসার বা গ্যাসট্রিক আছে সেগুলো বাড়ছে।
প্রশ্ন : এ সময় কী ধরনের খাবার খাদ্যতালিকায় থাকতে হয়?
উত্তর : প্রথম কথা হলো, আমরা রোজার সময় না খেয়ে থাকি। অনেকে মনে করে যে ওজন কমে। আসলে উল্টো হয় অনেকের। রোজার সময় অনেক সময় বেশি খাওয়া হয়। কেননা ইফতারের পর যা আমরা খাই, এরপর আবার সেহরির সময় অনেকে বেশি খাই, তাতে ওজন বেড়ে যাচ্ছে। সেটা হওয়া ঠিক না।
একটা জিনিস করা উচিত, যেহেতু আমরা অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকি রক্তের শর্করার পরিমাণ কমে যায়। সে জন্য রোজার সময়, রোজার শেষের দিকে একটু মাথা ঝিম ঝিম করা এগুলো হয়। এ সময় শর্করা যাতে বাড়ে এ সমস্ত খাবার দিয়ে যদি ইফতার করি তাহলে পুষ্টিটা হলো। সে ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো খেজুর। ধর্মেও আছে খেজুর ভালো জিনিস। তবে ডায়াবেটিস থাকলে সেটা ভিন্ন কথা।
তারপর ঘরে বানানো শরবত খাই লেবু-চিনি দিয়ে। এটিও একটি পুষ্টিকর খাবার। এরপর চিঁড়া, দুধ, দই-কলা এগুলো দিয়ে ইফতার করলে আমার তো ভালো হয়। এ ধরনের সহজ পাচ্য জিনিস যেখানে ভাজাপোড়া কম এগুলো দিয়ে যদি খাবার শুরু করি, আমার মনে হয় ইফতার ভালো হয়। তারপর যখন পেটটা একটু ভরা হলো, তখন নামাজ পড়ে বিরতি নিয়ে যদি ভাজাপোড়া খাই তাহলে মনে হয় ভালো হয়।
প্রশ্ন : ফলের বিষয়টি বলুন।
উত্তর : এখন তো ফলের মৌসুম। ডায়াবেটিস না থাকলে যেকোনো ফল খেতে পারেন। ফলে শর্করা আছে, কার্বোহাইড্রেট আছে এবং ফল খেলেও শর্করার পরিমাণ বাড়ে। তবে কথা হলো ইফতারের সময় যেন একেবারে ভূরিভোজ না হয়। এটা শরীরে কোনো ওষুধ থাক বা না থাক, সবার জন্যই পরিমিত খাওয়া উচিত। পরিমিত, সহজপাচ্য এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত।
প্রশ্ন : সেহরির সময় নিয়ে একটু বলুন।
উত্তর : বাংলাদেশে কোনো কোনো জায়গায় দেখবেন ওরা বিস্কুট খায় আর চা খায়, দুধ খায়। এটা ঠিক না। আবার কেউ কেউ মনে করে, সেহরির সময় খাবারটা একেবারে স্টক করে নেব। এটি স্টক করার জিনিস নয়। একটি পরিমাণে খেতে হবে। একটি বিষয় লক্ষ রাখতে হবে, যেহেতু আমাদের অনেকক্ষণ ধরে না খেয়ে থাকতে হবে, এমন খাবার খেতে হবে যেটা পাকস্থলীতে অনেকক্ষণ থাকে। যেমন আপনি যদি মিষ্টি খান কতগুলো সেটা বেশিক্ষণ পেটে থাকবে না। এমনকি যদি সেহরির সময় কতগুলো খেজুর খান, সেটিও বেশিক্ষণ থাকবে না। দুধ-কলা খেলে বেশিক্ষণ থাকবে না। শুধু সেহরির সময় চর্বিজাতীয় খাবার খেতে হবে। যেমন : মাংস, মাছ, ডিম। চর্বিজাতীয় খাবার খেলে পাকস্থলীর সংকোচন প্রসারণ কম হয়। খাবারটা পাকস্থলীতে অনেকক্ষণ থাকে। সেটা ধীরে ধীরে হজম হবে, অনেকক্ষণ থাকবে। সে জন্য সেহরির সময় পরিমাণমতো খাবেন। ওজন বেশি থাকলে কম খাবেন, হালকা থাকলে বেশি খাবেন। সুতরাং সেহরির সময় মিষ্টি পরিহার করা উচিত। আর যার যে ধরনের পছন্দ, সে অনুযায়ী মাংস খেতে পারি। যদি অন্য রোগ না থাকে। তাহলে এগুলো যদি আমরা সেহরির সময় খাই মনে হয় উপকার হবে।