শিশু বিছানা ভেজায়-কী করবেন?

শিশুর রাতে বিছানা ভেজানো নিয়ে চিন্তার কারণ নেই। কিছু পদক্ষেপ নিলে এ সমস্যা প্রতিকার করা যায়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৬৯৭তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু কার্ডিওলজি বিভাগে কর্মরত ডা. আহমেদ নাজমুল আনাম।
প্রশ্ন : কী কারণে শিশু বিছানা ভেজাচ্ছে—বিষয়টি বুঝতে পারলে কী করেন?
উত্তর : আমরা দুটো ভাগে ভাগ করি, প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি। প্রাইমারি হচ্ছে যাদের কোনো দিনও নিয়ন্ত্রণ হয়নি। বেড ওয়েটিং হয়েই যাচ্ছে তাদের। সেকেন্ডারি যারা, তাদের কিছুদিন হয়তো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে ছিল। হঠাৎ করে মা বলছে, আমার বাচ্চা তো ভালোই ছিল। হঠাৎ করে ছয় মাস ধরে দেখছি তার রাতের বেলা বেড ওয়েটিং হচ্ছে। তখন আমরা প্রথমে কিছু শারীরিক পরীক্ষা করি। আমরা দেখি, তাদের মেরুদণ্ডে কোনো সমস্যা আছে কি না। কিডনির জায়গায় কোনো সমস্যা আছে কি না। আমরা কিছু পরীক্ষা করি। যেমন : ডায়াবেটিস মেলাইটাস, দীর্ঘমেয়াদি কিডনির রোগ হলেও রাতের বেলা প্রস্রাব করে ফেলার কোনো সমস্যা হতে পারে। সেগুলোর কোনো লক্ষণ আছে কি না আমরা দেখার চেষ্টা করি। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা এটি স্বাভাবিক পাই।
প্রশ্ন : তার পরের পদক্ষেপ আপনাদের কী থাকে?
উত্তর : এ ক্ষেত্রে আচরণগত কিছু থেরাপি আছে। চিকিৎসাগত কিছু থেরাপি আছে। আচরণ বা বিহেভিয়াল থেরাপিগুলো মজার। আমরা একে বলি স্টার থেরাপি। আমরা বাচ্চাকে সুন্দর একটি খাতা কিনে দিতে বলব, আর ডায়েরি ব্যবহার করতে বলব। তাকে আমরা দায়িত্ব দেব যে সে যেই রাতে বেড ওয়েটিং করছে না, সেই রাতের কথা সুন্দর করে ডায়েরিতে লিখে রাখতে। আবার যেই রাতে সে বেড ওয়েটিং করল সেই রাতের কথাও সে লিখবে। এভাবে যদি খাতাটা মেনে চলে এর একটি মানসিক প্রভাব তার ওপর পড়বে।
মা-বাবাকে আমি বলব, যেদিন সে বিছানা ভেজাল না সেদিন আপনি ভালো কিছু কিনে দেন, এতে বাচ্চা উৎসাহিত হবে। এটা খুবই ভালো কাজ করে। আর আমাদের দেশে ডায়াপারের একটি অ্যালার্ম পাওয়া যায়। বাচ্চার প্রস্রাব চলে এলেই সেই অ্যালার্মটা বেজে ওঠে। তখন বাচ্চা সতর্ক হয়ে যেতে পারে। মা-বাবাকে বলব, ঘুমের আগে বাচ্চাকে প্রস্রাবটা করিয়ে দিতে যেন সে পরিষ্কার হয়ে থাকে। আর রাত ৭টা-৮টার পরে আমরা অতিরিক্ত পানি খেতে মানা করি। সাধারণত চিনিজাতীয় খাবার খেতে মানা করি।
প্রশ্ন : এই আচরণগত সমস্যা কত দিন চলতে থাকে? তখন আপনারা কী দেখেন, ফলোআপে কখন আসতে বলেন?
উত্তর : আমরা বলি মেয়ে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সাধারণত ১০০ ভাগ ঠিক হয়ে যায়। সুতরাং মেয়েদের ক্ষেত্রে ১০ বছর। তবে ছেলেদের ক্ষেত্রে, এক থেকে দুই ভাগের ক্ষেত্রে ১৫ বছর পর্যন্ত বেড ওয়েটিংয়ের সমস্যা থাকতে পারে। ফলোআপে আমরা দেখি, তার প্রস্রাবে সংক্রমণের কোনো লক্ষণ আছে কি না। তার কোনো ধরনের পেশির প্যারালাইসিস বা ভার্টিব্রা বা মেরুদণ্ডের কোনো সমস্যা আছে কি না বা ডায়াবেটিস বা অন্য কিছুর লক্ষণ আছে কি না—সেগুলো আমরা একটু দেখার চেষ্টা করি। তারপর যখন কোনো রোগের কারণে এই জাতীয় সমস্যা হয়, তখন আমরা রোগের চিকিৎসা দিই। আমরা সাত বছর পরে এর সঙ্গে মেডিকেল চিকিৎসা দিয়ে দিই। একটি ওষুধ আমরা দিই, বাচ্চার রাতে যাতে প্রস্রাব না হয়। এ ছাড়া আমরা ব্যবহার করি ট্রাইসাইকলিক অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট। তবে ওষুধের চেয়ে সাইকোলজিক্যাল থেরাপি, আচরণগত থেরাপি এগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর শেষে মা বাবাকে অবশ্যই কাউন্সেলিং করাতে হবে।