বাংলাদেশি চিকিৎসকের প্রস্তাবে ‘মেডিসিন বাইবেল’ সংশোধন
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/07/12/photo-1436690888.jpg)
আমাদের দেশসহ বিভিন্ন দেশে মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তক হিসেবে Davidson’s principles & Practice of Medicine পঠিত হয়ে আসছে। বইটিকে রূপক অর্থে চিকিৎসাবিজ্ঞানের বাইবেল বলা হয়। বইটির কিছু অংশে ভুল শনাক্ত করে এবং বিষয়বস্তু নিয়ে নিজের চিন্তাভাবনা প্রস্তাবনা করে প্রশংসিত হয়েছেন চিকিৎসক ও শিক্ষক ডা. মো. আজিজুর রহমান। নতুন প্রস্তাবনা আনায় ডা. আজিজুর রহমানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বইটির প্রধান সম্পাদক ব্রায়ান আর ওয়াকার।
বইটির ‘রেসপাইরেটরি ডিজিজ’ অধ্যায়ে লিখিত বিষয় সম্পর্কে পরামর্শ দিয়ে কর্তৃপক্ষকে এই বছরের মে মাসে ই-মেইল করেন ডা. আজিজুর। ফিরতি ইমেইলে পুস্তকের পরবর্তী ২৩ তম সংস্করণে প্রস্তাবনাগুলো বিবেচনায় নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন ব্রায়ান আর ওয়াকার। বিশেষ করে নিউমোনিয়ার অংশটি বিবেচনায় আনা হবে বলে জানানো হয়।
ডা. মো. আজিজুর রহমান বর্তমানে সহকারী অধ্যাপক এবং বক্ষব্যাধি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে এম এইচ শমরিতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে কর্মরত। ডা. আজিজুর বলেন, ‘আমাদের দেশে Davidson’s principles & Practice of Medicine পাঠ্যপুস্তক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বইটি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীরাও পড়েন। এর ২২তম সংস্করণটি ২০১৪ সালে বেরিয়েছিল। বইটির চার বছর পর পুনর্মুদ্রণ হয়। আমি এর বক্ষব্যাধি অংশটুকু নিয়ে কাজ করেছি।
ডা. আজিজুর রহমান জানান, বক্ষব্যাধি অধ্যায়ে নিউমোনিয়া বিষয়ে চিকিৎসার ক্ষেত্রে লেখক ব্রিটিশ থোরাসিক সোসাইটির রেফারেন্স ব্যবহার করেছেন। তবে আমি দেখেছি ব্রিটিশ থোরাসিক সোসাইটির রেফারেন্সের সঙ্গে এর তেমন কোনো মিল নেই। অ্যাজমা বিষয়ে এমন একটি ওষুধের কথা বলা হয়েছে, যা রোগটির খুব কঠিন পর্যায়ে দেওয়া হয়। রোগী যতদিন বাঁচবে, ওষুধটি সাতদিন পরপর দিতে হয়। উন্নয়নশীল দেশে এই ওষুধটি বেশ ব্যয়বহুল। ওষুধটি সম্বন্ধে বিস্তারিত বলা হয়নি। এই ওষুধটি সম্বন্ধে বিস্তারিত লেখার প্রয়োজন ছিল। আমি তাঁদের অনুরোধ করেছি বিস্তারিত লেখার জন্য। এ ছাড়া অনুরোধ করেছি ব্রিটিশ থোরাসিক সোসাইটির পাশাপাশি গিনার (GINA) রেফারেন্স ব্যবহার করার জন্য।
বইটির সিওপিডি (ধূমপানজনিত স্থায়ী ক্ষতি) বিষয়ে সিটি ফিল্ম দেওয়া হয়েছে। এক্সরে দেখানো হয়নি। এটি দেখে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীরা তেমন কিছু বুঝতে পারবে না। আমি পরামর্শ দিয়েছি, একটি বুকের এক্সরে দেওয়ার জন্য। যার মাধ্যমে সিওপিডির ধারণা সহজে পাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া তারা ব্রনকায়োক্টোসিস বিষয়ে সিটি ফিল্ম দিয়েছে, এখানে বুকের এক্সরে দিলে ভালো হতো। এটি দেওয়ার জন্যও অনুরোধ করেছি।’
ডা. আজিজুর রহমান আরো বলেন, ‘যক্ষ্মার ক্ষেত্রে তারা বলেছে এটা টিপিক্যাল এক্সরে। টিবি ছাড়া আরো অনেক ধরনের রোগেই এই রকম পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। যেন যক্ষ্মা সহজে বোঝা যায় এ জন্য নির্দিষ্ট কোনো এক্সরে দেওয়ার অনুরোধ করেছি। স্মোকার কাফ নামে একটি রোগ রয়েছে, যা সিওপিডি রোগটির আগে হতে পারে। এই রোগ সম্বন্ধেও বইটিতে তেমনভাবে কিছু বলা হয়নি। এই রোগ সম্বন্ধে বলার অনুরোধ করেছি।
এ ছাড়া আরেকটি রোগ রয়েছে Cough-Variant Asthma(CVA)/Pseudo Asthma এ সমস্যায় রোগীরা কেবল কাশি নিয়ে আসে। অ্যাজমার অন্যান্য লক্ষণ নিয়ে আসে না। এ সম্বন্ধেও তেমনভাবে কিছু লেখা নেই বইটিতে। ফুসফুস সংক্রান্ত প্লুরাল ইফিউশনের এক্সরেটাও সুনির্দিষ্ট করতে বলেছি।’
বাংলাদেশের চিকিৎসকদের জন্য এটি একটি বড় অর্জন জানিয়ে জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট এবং হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক রাশিদুল হাসান বলেন, ‘ডা. আজিজুরের ভেতর একটি অনুসন্ধিৎসু মন রয়েছে। খুঁটিয়ে দেখার স্বভাব রয়েছে এ জন্য তিনি এই কাজটি করতে পেরেছেন। বাংলাদেশের চিকিৎসকদেরও এ ধরনের কাজের যোগ্যতা রয়েছে সেটা প্রমাণ হয়েছে।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রিউমাটোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক সৈয়দ আতিকুল হক বলেন, ‘আমাদের দেশের জন্য এটা নিঃসন্দেহে একটি বড় অর্জন বলেই আমি মনে করি। এ রকম একটি ভুল ধরা কৃতিত্বের ব্যাপার। বিষয়টির প্রশংসা করছি।’
ডা. আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমি অনুরোধ করব শিক্ষকরা তাদের ডিসিপ্লিন অনুযায়ী পাঠ্যপুস্তক (টেক্সট বুক) খুঁটিয়ে দেখবেন, পর্যালোচনা করবেন। আমি শুধু কাজের শুরু করেছি মাত্র, এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আমাদের সবার।’
শিক্ষকতার পাশাপাশি ডা. আজিজুর বিভিন্ন দৈনিকের স্বাস্থ্য পাতায় নিয়মিত লেখালেখি করেন এবং বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে স্বাস্থ্যবিষয়ক আলোচনায় অংশ নিয়ে থাকেন। তাঁর স্ত্রী ডা. মেহেরুন্নেসা এম এইচ শমরিতা মেডিকেল কলেজের এনাটমি বিভাগের প্রভাষক।