স্থূলতার কারণ ও করণীয়
বিভিন্ন কারণে একজন ব্যক্তির স্থূলতা হয়। স্থূলতা বিভিন্ন জটিল রোগব্যাধি তৈরি করতে পারে। স্থূলতার কারণ ও করণীয় বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৮৮৮তম পর্বে কথা বলেছেন পুষ্টিবিদ শবনম মোস্তফা। বর্তমানে তিনি শিওর সেল মেডিকেলের পুষ্টি বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : স্থূলতার সমস্যা সমাধানে করণীয় কী?
উত্তর : আমরা যদি চিন্তা করি স্থূলতা কেন হচ্ছে, সেটা থেকে আমরা ব্যবস্থাপনায় চলে যেতে পারব। আমি একটু কারণগুলো বলছি। কিছু থাকে জন্মগতভাবে স্থূল। এটি সাধারণত ১৫ ভাগ ক্ষেত্রে হচ্ছে। বাকি ভাগগুলো কিন্তু আমরা নিজেরাই তৈরি করছি। আমাদের খাদ্যাভ্যাসটা অনেকটা সম্পর্কিত এর সঙ্গে। পাশাপাশি আমরা যে খাবার খাচ্ছি, সেটি হয়তো কম ঝরছে। এটি একটি কারণ হতে পারে।
আর আমাদের সম্প্রতি খাদ্যাভ্যাস কিন্তু অনেক বদলে গেছে। আমরা কিন্তু এখন অনেক বেশি পাশ্চাত্য খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। জাঙ্ক ফুডের প্রধান উপাদান কী? কৃত্রিম চিনি, ট্রান্সফ্যাট, প্রক্রিয়াজাত খাবার। তিনটিই খুবই ক্ষতিকর আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য। এটা একটা কারণ হতে পারে। আরেকটি বিষয় হলো, শারীরিক পরিশ্রমের মাত্রাটি কিন্তু আমাদের আগের থেকে কমে গেছে। আমরা এখন ডেস্কে কাজ করছি। সারাক্ষণই বসে থাকছি।
আরেকটি হলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের দুশ্চিন্তা। আমি ভাবছি যে আমি চিন্তা করব না, তবে চিন্তা কিন্তু আমার মাথায় চলছে। সম্প্রতি গবেষণা কিন্তু বলছে, দুশ্চিন্তা থেকে মানুষ স্থূল হচ্ছে। স্থূলতা ও মানসিক চাপের কিন্তু একটি বায়োলজিক্যাল সম্পর্ক রয়েছে।
আবার কিছু ওষুধ রয়েছে, যার কারণে স্থূলতা হচ্ছে। আমরা যেমন অ্যান্টিডিপ্রিসেন্ট ওষুধ দিচ্ছি বা স্টেরয়েড দিচ্ছি। এটা থেকেও পরবর্তীকালে স্থূল হওয়া আশঙ্কা থাকছে। এই কারণগুলো বের করলে ব্যবস্থাপনা করা সহজ হয়ে যাবে।
আমরা ব্যবস্থাপনায় আসি। যে বাচ্চা জন্ম থেকেই স্থূল, তার ক্ষেত্রে কিছু করার থাকছে না। এরপরও আমরা জীবনযাপনের ধরনটা মোটামুটি ব্যবস্থাপনা করব। তার প্রথম খাবারের বিষয়টি কমার্শিয়াল ফুড দিয়ে করা যাবে না। চাল-ডালের খিচুড়ি দিয়ে শুরু করতে হবে। সবজি খাওয়াতে হবে। কোনো বাইরের জুস দেওয়া যাবে না।
বড়দের ক্ষেত্রে, শারীরিক কার্যক্রমের মাত্রাটা একটু বাড়াতে হবে। আমরা এখন একদম হাঁটতে চাই না। আমরা লিফট দিয়ে উঠে যাই। একটু সিঁড়ি দিয়ে ওঠা অভ্যাস করা, একটু ব্যায়াম করা, একটু সাঁতার কাটা, আর না হলে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা। এগুলো হতে পারে। পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাস যেটা, সেটাকে পরিবর্তন করতে হবে। আমি প্রক্রিয়াজাত খাবার খাব না। আমি কৃত্রিম চিনি খাব না। ট্রান্সফ্যাট রয়েছে এ রকম কোনো খাবার আমি খাব না। সোজাকথা আমি জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে যাব।
প্রশ্ন : দৈনিক প্রতিদিন কতটুকু ক্যালরি খাওয়া দরকার, সেটি কি জানতে হবে?
উত্তর : আসলে আমার মনে হয়, ক্যালরিতে আলোকপাত না করে আমি পুষ্টিতে আলোকপাত করব। কারণ, একটি কাপ কেক, ধরুন ১০০ ক্যালরি। আর দুটো সেদ্ধ ডিমেও কিন্তু ১২০ ক্যালরি। আমি যদি মনে করি কাপ কেক খেয়ে নিলাম, ১০০ ক্যালরি গেল। তবে আমি কিন্তু গুণটা পাচ্ছি না। কাপ কেকে সুগার থাকছে, ময়দা থাকছে, এরপর ট্রান্সফ্যাট থাকছে। তাই পুষ্টিটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর ক্যালরির তো একটি বিষয় রয়েছে। আমার এখন প্রয়োজন ২৫০০ ক্যালরি বা ২০০০ ক্যালরি, তবে আমি যদি এখন ৩০০০ ক্যালরি খেয়ে ফেলি, তাহলে সেটি অবশ্যই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
প্রশ্ন : শিশুদের ক্ষেত্রে তো ঘরে খেলাধুলা প্রয়োজন?
উত্তর : হ্যাঁ, করতে হবে। এগুলোর কোনো বিকল্প নেই। কারণ, আমাদের বাচ্চাদের খেলার জায়গা নেই। আমাদের বাচ্চারা সারা দিন ট্যাব নিয়ে বসে রয়েছে, না হলে কম্পিউটারে গেম খেলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কিন্তু আরেকটি কথা বলেছে, ২৪ ঘণ্টায় স্ক্রিনের সময় দুই ঘণ্টা হতে পারবে। আমাদের বাচ্চারা কিন্তু ১৪/১৫ ঘণ্টা ট্যাব, কম্পিউটার নিয়ে বসে থাকছে। এটা থেকে বাচ্চাদের বেরিয়ে আসতে হবে। কিছু দড়ি লাফ করানো যেতে পারে। বাস্কেটবল, সাঁতার ইত্যাদি প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে।