মাথাব্যথা কেন হয়?
মাথাব্যথা হয়নি এ রকম মানুষ বোধহয় খুঁজে পাওয়া মুশকিল। বিভিন্ন কারণে এই মাথাব্যথা হয়। এর মধ্যে একটি বড় কারণ সারভাইকোজোনিক মাথাব্যথা বা ঘাড়ের কারণে মাথাব্যথা। এই মাথা ব্যথায় অনেকেই ভুগে থাকেন। আজ ১৭ আগস্ট এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২১২৩তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন বিশিষ্ট লো ব্যাকপেইন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আলতাফ হোসেন সরকার।
প্রশ্ন : মাথাব্যথা কী কারণে হয়? এবং কোন কারণে মাথাব্যথা হচ্ছে সেটা বোঝার উপায় কী?
উত্তর : আমরা মাথাব্যথা সম্বন্ধে সাধারণত বলি, মাইগ্রেন হয়েছে। কেউ কেউ বলে সাইনোসাইটিসের জন্য ব্যথা হচ্ছে। কেউ কেউ বলে ক্লাস্টার মাথাব্যথা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত বলে আপনার অনেক দুশ্চিন্তা এ জন্য মাথা ব্যথা হচ্ছে। দুশ্চিন্তা কমান, ব্যথা ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু আমি যেই বিষয়ে বলব অধিকাংশ লোকেরই এই বিষয়ে খুব জানাশোনা নই। আমি কথা বলব সার্ভিক্যাল এলাকা নিয়ে। সার্ভিক্যাল এলাকা থেকে যে মাথাব্যথা হয় সেটা নিয়ে। স্পাইন ইনস্টিটিউট অব দ্য ওয়ার্ল্ড এবং যারা মাথাব্যথার চিকিৎসা করে থাকেন তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৭০ থেকে ৮০ ভাগ রোগী ভোগে এই সার্ভিকোজেনিক রোগে। কিন্তু এই রোগটি তেমনভাবে নির্ণয় হয় না।
প্রশ্ন : তার মানে মাথা ব্যথার উৎসটা হচ্ছে ঘাড়ে ...
উত্তর : আমি তো মেরুদণ্ডের চিকিৎসা করি কিন্তু মাথাব্যথার কেন চিকিৎসা করব? কিন্তু আমি এ কারণেই করি যে এই ব্যথাটা মেরুদণ্ড থেকে আসে। সে কারণেই আমি এই মাথাব্যথার চিকিৎসা করি এবং চমৎকারভাবে দ্রুত রোগ ভালো হয়ে যায়।
যখন একটি রোগী এই ব্যথা নিয়ে আসে তখন কপালের দুই পাশে, কপালের সামনে বা পেছনে এই ব্যথাটা হয়। এর কারণ হলো সামনের দিকে একটা পেশি আছে যেটাকে সাপলাই করে ঘাড়ের পেছনের সিওয়ান। দুই পাশে পেশি আছে একে সাপলাই করে সি টু। আর পেছনের দিকে যে পেশি এটাকে সাপ্লাই করে সি থ্রি। সারভাইকল এলাকা থেকে এটা সামনের দিকে সাপলাই হয়। অনেক সময় দেখা যায় মাথাব্যথার সঙ্গে চোখও ব্যথা করে। অর্থাৎ মাথাব্যথার স্নায়ুর সঙ্গে চোখের যে স্নায়ু রয়েছে সেটা মিশ্রিত স্নায়ু হয়ে সাপলাই করে। তো ঘাড়ে যদি কষ্ট হয় তখন চোখেরও সমস্যা হয়। এবং আমরা এক্ষেত্রে চোখের চিকিৎসকের কাছে যেতে বলি। চোখের চিকিৎসক সব দেখে বললেন, কোনো সমস্যা নেই।
তখন হয়তো এমআরই বা সিটিস্ক্যান করা হলো। কোনো কিছুই ধরা পড়ল না। ধরা পড়বে একমাত্র আঙুলে। কীভাবে? সে যদি বলে মাথার প্রথম দিকে ব্যথা তাহলে ঘাড়ের সি ওয়ান-এ হাত দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগী কেঁপে উঠবে।
কারণ ওই খানেই শুরু। যদি দুই পাশে ব্যথা হয় তবে ডান পাশের সি টু তে হাত দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বলবে ব্যথা। আর মাথার পেছনে যদি ব্যথা হয় তবে সি থ্রিতে হাত দিলে বোঝা যাবে। এর মানে সমস্যাটা আসলে ঘাড়ে।
প্রশ্ন: ওই সারভাইকাল এলাকায় হাত দিলে যখন ব্যথাটা কমে যাচ্ছে এরপর রোগীকে আবার কখন আসতে বলেন?
উত্তর : ওই জায়গাটায় হাত দিয়ে আমি চিকিৎসা করে দিই। কেবল অঙ্গবিন্যাসের মাধ্যমে এটা ঠিক করা যায়। আর আমার ওখানে চিকিৎসা লেজার দিয়ে করে দিই, ক্রায়ো থেরাপি দিয়ে করে দিই। অনেক সময় নরম টিস্যুকে হাত দিয়ে নেড়ে ঠিক করে দিই। দেখা যায় এটা কিছুক্ষণ করার পরই রোগী বলে আমার ব্যথা নেই। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এই ব্যথা আবার হবে। কিছুক্ষণ পরে বা কয়েক ঘণ্টা পরে হবে। কারণ এখনো জায়গা দৃঢ় হয়নি। একটা সেশন নিলেই তার মাথা ব্যথাটা ভালো হয়ে যাবে।
প্রশ্ন : আমি একটু আবারও জানতে চাইব মাথাব্যথা হওয়ার পেছনের কারণগুলো কী?
উত্তর : রিকশা বা বাসে চড়লে ঝাঁকি দেয় এতে ঘাড় আহত হয়। এই আহত হওয়ার কারণে ধীরে ধীরে তার মাথাব্যথা হয়। আরেক হলো আমাদের বসার ভঙ্গি। আমরা একই ভঙ্গিতে বসে অনেক সময় কাজ করি। আমরা সামনের ঝুঁকে কাজ করি। অঙ্গ পরিবর্তন করি না।
প্রশ্ন : তাহলে এক্ষেত্রে আপনার পরামর্শ কী থাকবে?
উত্তর : অঙ্গবিন্যাসের পরিবর্তন আনতে হবে। আপনি সামনে ঝুঁকে কম্পিউটারে কাজ করছিলেন ঘাড়টা সামনে পেছনে, ডানে বামে একটু ঘুরিয়ে নিলেন তাহলে আর ব্যথাটা থাকবে না। আপনার মাথা যখন সামনের দিকে আসবে, তখনই ঘাড়ে সংকুচিত হবে।
প্রশ্ন: এর ফিজিওথেরাপির সঙ্গে সঙ্গে কি কনজারভেটিভ কোনো ব্যবস্থা দিয়ে থাকেন?
উত্তর : ফিজিওথেরাপির সঙ্গে সঙ্গে স্ট্যান্দেনিং ব্যায়াম করতে বলি। বলা হয় কখনোই কলার আছে এমন পোশাক পরবেন না। প্রচুর পানি অথবা জুস খাবেন। কারণ ওখানে পানিশূন্যতা চলে আসে। এ জন্য পানি খেলে সেটা আর্দ্র হয়ে অনেক সময় ব্যথা কমে যায়।
প্রশ্ন : ফলোআপের জন্য কী আসার প্রয়োজন আছে?
উত্তর : আমরা বলি, যদি কখনো ব্যথা হয় আসবেন নয়তো আসবেন না। প্রায় সাতটা সেশন নিলে ব্যথাটি আর থাকে না। যদি খুব ব্যাখ্যা হয় তাহলে হয়তো দুই সপ্তাহ লাগে। তবে মাথাব্যথা ভালো হতে সাধারণত এতদিন লাগে না।
যদি সেটা সারভাইকোজোনিক মাথাব্যথা হয়। আসলে সবচেয়ে আগে প্রয়োজন উৎসকে জানা ব্যথা আসলে কী কারণে হয়েছে। আমি ব্যথার কারণের চিকিৎসা করি। কারণ সরিয়ে দিলে রোগ আর থাকে না।