‘ভালোবাসা হোক সার্বজনীন’
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2018/02/14/photo-1518602135.jpg)
আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। ভালোবাসা ও মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্কের বিষয়ে আজ এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৯৯৯ তম পর্বে আলোচনা হয়। আলোচনায় অংশ নেন কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট সেলিম চৌধুরী,ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট সেলিমা ফাতেমা বিনতে শহীদ।
এনটিভি : নর-নারীর ভালোবাসার সঙ্গে চিকিৎসা বিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক কী?
সেলিমা ফাতেমা বিনতে শহীদ : আমরা সার্বজনিন ভালোবাসার বিষয়টিকে আসলে বেশি গুরুত্ব দেব। যদি সার্বজনিন ভালোবাসার দিকে গুরুত্ব দিতে যাই, সেখানেও নরনারীর ভালোবাসা কিন্তু প্রথম। কারণ, পরিবার গঠিত হয়, তারপর সন্তান জন্মদান। এরপর সেখান থেকে আরো ব্যপ্তি। পাশাপাশি দেখা যায় এই সন্তানগুলো জাতির ভবিষৎ।
পাশাপাশি নর-নারী দেখা যায় তাদের কাজের ক্ষেত্রে ছড়িয়ে যাচ্ছে। এখানে যখন ভালোবাসাহীনবোধ করবেন তিনি তখন কাজের ক্ষেত্রে সবকিছুর ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে।
এনটিভি : একজন মানুষ প্রেমে পড়ে কেন?
সেলিমা ফাতেমা বিনতে শহীদ : বায়োলজিক্যাল অবস্থা থেকে যদি আমরা দেখি, তাহলে দেখব তিনটি প্রধান ড্রাইভ থাকে। একটি হলো সেক্স ড্রাইভ, আরেক হলো অ্যাটাচমেন্ট পাবার একটি ড্রাইভ, আরেকটি হলো আমরা কী ধরনের সঙ্গী পছন্দ করি, আগে থেকে আমার প্রি সেট থাকে সেটি। সন্তানের সঙ্গে যদি মায়ের অ্যাটাচমেন্ট থাকে, তাহলে সে মায়ের মতো দেখতে কাউকে পছন্দ করবে।
আর মেয়েদের ক্ষেত্রে বাবাকে যদি সে হিরো মনে করে সে বাবার গুণগুলো দেখতে যাবে।
সেক্স হরমোনের ক্ষেত্রে বলা হয় অক্সিটোসিন হলো সেক্স হরমোন, যেটা আমাদের আন্দলিত করে। হঠাৎ করে হয়তো কাউকে আমার দেখে ভালো লাগল, সেই সময় সেই হরমোনগুলো নিঃসৃত হলে দেখা যায় তার প্রতি এই অ্যাটাচমেন্ট কাজ করছে।
এ ছাড়াও যদি মনোবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলি, স্টানবাগ নরনারীর ভালোবাসার মধ্যে তিনটি বিষয়কে খুব গুরুত্ব দিয়েছেন। একটি হলো ইনটিমেসি, তার মানে হলো, আবেগীয় ঘনিষ্টতা। আরেকটি হলো প্যাশন। মানে, জৈবিক একটা আকর্ষণ থাকবে। পাশাপাশি দায়বদ্ধতা।
আমরা অনেক ভালোবাসার সম্পর্ক দেখি, নরনারী ভীষণ ভালোবাসার সম্পর্কের মধ্যে রয়েছেন, ভীষণ তাদের মধ্যে জৈবিক আকর্ষণ রয়েছে। আবেগীয় ঘনিষ্টতাও রয়েছে, তবে দায়বদ্ধতা নেই। তখন আস্তে আস্তে দেখা যাচ্ছে ঘনিষ্টতা কমে যাচ্ছে। আবার অনেক সময় দেখা যাচ্ছে স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে দায়বদ্ধতা রয়েছে। অনেক সময় জৈবিক আকর্ষণও রয়েছে। তবে আবেগীয় ঘনিষ্টতা নেই। এর অভাবে অনেকে খুব হতাশ হয়ে যাচ্ছে। তিনটির ভারসাম্য থাকতে হবে।
এনটিভি : ভালোবাসার কথা বলতে গেলে অনেকের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়, অনেকের মুখ নার্ভাস হয়ে যায়। এই শারীরিক পরিবর্তনটা কেন হয়?
কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট সেলিম চৌধুরী :ভালোবাসা দিবস পালন করতে গিয়ে আমরা যেন শুধুমাত্র নরনারীর মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকি। তবে ভালোবাসার বিষয়টি প্রথম তৈরি হয়,নরনারীর ভিত্তি থেকেই। তবে আসলে ভালোবাসার যে জায়গাটা তৈরি হয়, সেটি একটি শিশুর জন্মের পর সেই অ্যাটাচমেন্টের ওপর ভিত্তি করেই কিন্তু হয়।একজন মানুষ পরবর্তী জীবনে কীরকম ভালোবাসা চায় বা অন্যকে সে কীভাবে ভালোবাসাবে, সেই বিষয়গুলো এর ওপর নির্ধারিত হয়। সুতরাং গোড়াটাই একদম জন্মের পর থেকে শুরু হয়ে যায়। তার ওপর ভিত্তি করে সে পরে কী ধরনের ভালোবাসার মানুষ হবে সেটি নির্ভর করে। সে কি গেইম প্লেইং ভালোবাসবে, নাকি পেশেনয়েড ভালোবাসাবে, সে কি নির্ভর করে ভালোবাসবে, সেকি বিশ্বাস করে ভালোবাসবে, না কি মানুষকে কমপেশনয়েড ভালোবাসবে। এই বিষয়গুলো নির্ধারিত হয় একদম জন্মের পর থেকে, তিন চার বছরের মধ্যে। সে কীরকম ভালোবাসা পেয়েছে, তার পরিবার থেকে, তার সমাজের অন্যান্য মানুষের কাছ থেকে, প্রকৃতির কাছ থেকে,এর ওপর বিষয়গুলো নির্ভর করে। আমাদের ঢাকা শহরে যেসব শিশুরা বড় হচ্ছে, তাদের মধ্যে ভালোবাসার একটি জায়গা হলো বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। মোবাইল, কম্পিউটার। তবে যেসব শিশুরা প্রকৃতির সঙ্গে বড় হয়, তাদের ভালোবাসা কিন্তু প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত হয়। তারা যখন ভালোবাসবে মানুষকে,সেটি হবে পেশনয়েড ভালোবাসা। ভালোবাসা কিন্তু উভয় পাক্ষিক। আমি কাউকে কীভাবে ভালোবাসা দিলাম, এর ওপর নির্ভর করবে সে কীভাবে পরে আমাকে, আমার সমাজকে এব্ং আমার দেশকে ভালোবাসবে সেটি।
এনটিভি : একটি শিশু ছোটবেলায় যেভাবে ভালোবাসা পেয়েছিল, এর ওপর ভিত্তি করে সে জঙ্গীবাদে জড়াবে কি না, সন্ত্রাস বা অন্যদিকে যাবে কি না- সেগুলো নির্ভর করে?
সেলিমা ফাতেমা বিনতে শহীদ :পরিবার হলো শিশুর শিক্ষার ভিত্তি। শুধু শিক্ষা নয়, পাশাপাশি তার শারীরিক গঠন কেমন হবে, তার সঠিক সাপ্লিমেন্ট তার মা-বাবা দিচ্ছে কি না, এটা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তারা অন্যের প্রতি নির্ভরশীল। ঠিক মানসিক বিষয়গুলো তৈরি করার জন্য অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া, অন্যকে ভালোবাসা, অন্যকে সম্মান করা, এই বিষয়গুলো কিন্তু পরিবার থেকেই আসে।
একটি মানুষের যখন নিজের আত্মসম্মানবোধ থাকে এবং তার আত্মবিশ্বাস সঠিক থাকে, তখন সে অন্যকেও দিতে পারে। তবে যখন নিজেই হীনমন্যতায় ভোগে, নিজেই নিজেকে গ্রহণ করতে পারে না, তখন সেতো নিজের সঙ্গে লড়াই করছে, অন্যকে দেবে কি। আমরা সবসময় বলি তোমাকে অন্যকে সাহায্য করতে গেলে আগে নিজেকে সাহায্য করতে হবে। সুস্থতার মূল প্রয়োজনের মধ্যে একটি হলো ভালোবাসা পাওয়া। আমরা জানি, আমাদের বাবা-মা আমাদের সবসময় ভালো চান। অবশ্যই তারা ভালোবাসেন। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় তারা নিজেরা যদি কোনো টানাপোড়েনের মধ্যে থাকেন, তখন নিজেকে সামলাতে গিয়ে বাচ্চাকে সেইভাবে প্রদর্শন করা হয় না। তখন বাচ্চা মনে করে আমি মূল্যহীন। পরে দেখা যায় ছোট খাটো ঝামেলার মধ্যে, সে ভাবে এই তো আমাকে পছন্দ করছে না। মা-বাবার সম্পর্ক যদি ভালো হয়, তাহলে মা-বাবার সম্পর্কের প্রতি শিশুর একটি আস্থা তৈরি হয়। একটি বিশ্বাস তৈরি হয়। সেই বিশ্বাস তার নিজের সম্পর্কেও প্রতিফলিত হয়। তবে যখন দেখে মা-বাবার সম্পর্ক ভালো ছিল না, এর প্রভাব তার ওপরও পড়েছে। সম্পর্ক নিয়ে তার একটি ভীতি তৈরি হয়। কেউ কেউ এক্সট্রিমে চলে যায়, বলে আমি সম্পর্ক করবোই না, আমার দরকার নেই। আর কেউ কেউ অতি কল্পনাপ্রবণ হয়ে যায়। আমার মা-বাবার এত খারাপ সম্পর্ক আমারটা খুব ভালো হবে। তখন সে নাটক, সিনেমায় যেখানে যতো ভালো দিকগুলো দেখে, কেবল সেগুলোকে দেখতে থাকে, নিতে থাকে। আর মনে করতে থাকে আমার একটা জীবন হবে সেখানে আমি সেগুলো প্রয়োগ করবো। আসলেতো জীবনটা এমন না। তখন সঙ্গীর একটু আধটু ভুল দেখলে সে ব্লেম করতে থাকে।
এনটিভি : স্যার কি এর সঙ্গে কিছু যোগ করবেন?
কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট সেলিম চৌধুরী : তাকে ধন্যবাদ। খুব চমৎকার করে কিছু বিষয় উপস্থাপন করেছে। তার কথার সঙ্গে কিছু যোগ করি। শিশুর জন্মের পর তার যে বন্ধন, অর্থাৎ তার মা-বাবার সঙ্গে তার যে বন্ধন, এই বন্ধন কিন্তু অতি ছোট সময়েই তৈরি হয়। কোনো কোনো বন্ধনকে আমরা বলি নিরাপদ বন্ধন। অর্থাৎ যেখানে সে আস্থা পায়, ভালোবাসা পায়, যত্ন পায়, সেবা পায়। কিছু কিছু ভালোবাসা রয়েছে সে বুঝতেই পারে না, তার বাবা মা তাকে ভালোবাসছে, না কি ঘৃণা করছে। আবার কিছু কিছু মা-বাবার আচরণ এমন থাকে যে ভালোবাসা দেয়াতো দূরে থাক, মানসিকভাবে তাকে দূরে সরিয়ে রাখে। অর্থাৎ শিশু বুঝতেই পারে না তার বাবা-মা কীভাবে তাকে ভালোবাসছে। সেটা কি নিরাপদ ভালোবাসা, সেটা কি বৈষম্যপূর্ণ ভালোবাসা। না কি সেটি হলো একটু বিদ্বেষপূর্ণ ভালোবাসা।
আসলে প্রতিটা মা-বাবার জন্য প্রতিটি শিশুকে সমানভাবে ভালোবাসা এটি মা-বাবার ক্ষেত্রে সঠিকভাবে সম্ভব নয়।
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট সেলিমা ফাতেমা বিনতে শহীদ : এর সঙ্গে একটু যোগ করতে চাই,একদম শূন্য বয়সের বাচ্চা থেকে তাদের মধ্যে বিশ্বাসহীনতা ও অবিশ্বাসহীনতা তৈরি হয়। সেটা কীভাবে? সেতো একদমই একটি পরনির্ভশীল একটি শিশু, তখন বিছানা ভিজিয়ে ফেলল কিংবা তার ক্ষুধা পেল, ওই সময় সে কাউকে পাচ্ছে না। সেই সময় তার বিছানা ভিজে যাওয়া বা খেতে দেওয়া এসব বিষয় নিয়ে অবিশ্বাস তৈরি হয়। সে ভাবে, আমি মনে হয় নিরাপদ নই। আমি এখানে একটি অনিরাপদ অবস্থায় রয়েছি। যেকোনো সময় আমি ডিপ্রাইভ হতে পারি। তো ওই সময় একটা এটাচমেন্ট ফিগার থাকা খুব জরুরি।
এনটিভি : কাউকে ভালোবাসছে তাকে না পেলে তার কোনো ক্ষতিতে লিপ্ত হচ্ছে। তাকে খুন করে ফেলছে। ভালোবাসা থেকে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠা। ঘৃণায় কেন যাচ্ছে?
কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট সেলিম চৌধুরী : একটি শিশু যখন জন্মের পর থেকে বড় হচ্ছে, প্রতি ধাপে সে যখন বড় হচ্ছে, সেই বড় হওয়ার সময় যখন ভালোবাসা পাওয়ার কথা, সেই ভালোবাসা যদি সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তাহলে কাউকে সে যদি ভালোবাসা পেতে ব্যর্থ হয়, একে সে শক্তিশালীভাবে রূপান্তরিত করবে। মানে সে ইতিবাচক কিছু করবে। আবার প্রতিটি ধাপে ধাপে যে ভালোবাসা পাওয়ার কথা সেটা সে যদি ইতিবাচকভাবে না পেয়ে বৈষম্যপূর্ণ পায় বা অবহেলাপূর্ণ পায়, অথবা কোনো নিরাপদ ভালোবাসা সে যদি না পায়, তাহলে সে পরে এরকম ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়ে, এগ্রেসিভ হবে। হঠাৎ করে আমরা দেখছি ভালোবাসায় ব্যর্থ হয়ে সে এসিড ছুঁড়ে মারছে। অথবা কারো ক্ষতি করছে। ফেসবুক, ইন্টারনেটে ক্ষতি করছে। এমনকি কাউকে হত্যা করছে বা নিজে আত্মহত্যা করছে। এই ঘটনাগুলো যে ঘটছে তার ভিত্তিটা তার জীবনের আগে থেকে হয়ে এসছে। এটা আমরা আসলে দেখতে পারছি না। ভালোবাসা ব্যর্থ হয়ে সে নেতিবাচক কিছু করছে, সে দিকেই আমরা কেবল মনোযোগ দিচ্ছি। তবে মনোযোগটা দেয়া দরকার সারা জীবন। পরিবার, সমাজ, প্রকৃতির ওপর। সুতরাং এই পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে তাকে এই বোধটা দিতে হবে যে তুমি হলে ভালোবাসা পাওয়ার মতো একজন যোগ্য মানুষ।
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট সেলিমা ফাতেমা বিনতে শহীদ: আমি একটু যোগ করি, আমরা বলি যে ভালোবাসা না পাওয়ার কারণে এসিড মেরেছে, খুন করেছে। ভালোবাসা আসলে ইতিবাচক একটি অনুভূতি। ভালোবাসা থাকা অবস্থায় এরকম কখনো করতে পারবে না। ভালোবাসা যদি শেষ হয়ে যায়, তাহলে সেটি করবে, আবার ভালোবাসার সঙ্গে আরো কিছু অনুভূতি যদি যোগ হয়ে যায়, তাহলে সে সেটি করবে। ভালোবাসার মধ্যে যদি দায়বদ্ধতা থাকে, তাহলে যাকে ভালোবাসি তার ক্ষতি করতে পারি না। আর সত্যিকার ভালোবাসার কিছু সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, এটি শর্তহীন হবে। আমি যেটা চেয়েছি, সবসময় সেটি পাবো সেটি নাও হতে পারে। নিশর্ত ও নিঃস্বার্থ হতে হবে।
আমি কিছু করার বিনিময়ে ওকে পাবো। সে মনে করছে, আমি ওকে এতো ভালোবাসি, সে বাসবে না কেন। শর্তহীন থাকতে হবে। পাশাপাশি যাকে আমি ভালোবাসি তাকে তার মতো করেই গ্রহণ করা প্রয়োজন। সে আমার সঙ্গে না থেকেও যেন ভালো করে, ভালো থাকে এটিই সত্যিকারের ভালোবাসা। ভালোবাসার মানুষের ভালো কামনা করা এটিই হওয়া উচিত।
থিওরিতে বলে, আবেগের এপিঠ ওপিঠ থাকে। মুদ্রার মতো। যখনই ভালোবাসা শেষ হয়ে যায় তখন আসে ঘৃণা। যখন ঘৃণা এলো, তখনই কিন্তু সে সহিংসতাটা ঘটাতে পারলো। ভালোবাসার সঙ্গে সহিংসতা সম্পর্কযুক্ত হতে পারে না। ওই ধরনের ভালোবাসা কাম্য নয়। আর অবশ্যই সে কীভাবে পেয়েছিল ভালোবাসা সেটির ওপরও নির্ভর করে।