হেপাটাইটিস বি ও সি কী?
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2018/05/14/photo-1526296629.jpg)
হেপাটাইটিস বি ও সি এক ধরনের ভাইরাস। সাধারণত এটি লিভারকে আক্রান্ত করে। এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩০৮৭তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. এ কে এম শামসুল কবীর। বর্তমানে তিনি হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে মেডিসিন ও লিভার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : হেপাটাইটিস বি ও সি কী?
উত্তর : আসলে দুটো ভাইরাস হলো হেপাটোট্রপিক ভাইরাস। এদের বিশেষ ধরনের আসক্তি রয়েছে লিভারের প্রতি। কোনো জীবাণুর যদি লিভারের প্রতি আসক্তি থাকে, তার চরিত্র হলে লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলা। তাই দেখা যায় এ দুটো ভাইরাসের যেকোনো একটিতে যদি কেউ আক্রান্ত হয়ে যান, তাদের পরবর্তী জীবনে একটি দীর্ঘমেয়দি লিভারের রোগ হয়ে থাকে। সেটা যদি কারো হয়ে যায়, পরে দেখা যায় লিভার ফেইলিউর। লিভার ফেইলিউর মানে হচ্ছে, এখানে মৃত্যু অবধারিত। আবার কারো কারো লিভার ক্যানসার বাড়ে। এই জন্য এই দুটো ভাইরাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে দুটো ভাইরাসের মধ্যে একটি ভাইরাস ভিটামিন বি এর টিকাদানের ভেতর যদি আগে ভাগে টিকা নিয়ে থাকেন, তাহলে একে প্রতিরোধ করা সম্ভব। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। তবে সি ভাইরাসের ক্ষেত্রে এ রকম কোনো সুযোগ নেই। সি ভাইরাস হলো বহুরূপি ভাইরাস। একটি সি ভাইরাস প্রায় ৬০০ রকম চরিত্রে রূপ নিতে পারে। এই জন্য সি ভাইরাসের বিপরীতে সুনির্দিষ্টভাবে ভ্যাকসিন আবিষ্কার সম্ভব হয়নি এখনও। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ভুলের কারণে এই দুটো ভাইরাস একজন মানুষ থেকে আরেকজন মানুষের জীবনে সংক্রমিত হয়। এগুলো মানুষ চাইলেই প্রতিরোধ করতে পারে।
বি ও সি দুটোই রক্তের মাধ্যমে ছড়ায়। বি ও সি ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো মানুষ যদি তার রক্ত অন্য কোনো মানুষকে দান করে থাকে, তাহলে যিনি রক্ত গ্রহণ করবেন, তার ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। বি ও সি ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো মানুষের শরীরে ছুড়ি, কাঁচি বা কোনো যন্ত্র সার্জিক্যাল পদ্ধতির জন্য বা সার্জারি করার জন্য ব্যবহার করা হয়, সেটি যদি সুস্থ মানুষের শরীরে ভালোভাবে পরিশোধিত না হয়, আজকাল অবশ্যই সুঁই, সিরিঞ্জ পরিশোধিত করা হয়। এরপরও দেখা যায় পুরোপুরিভাবে স্ক্রিনিং না করার কারণে, অনেক সময় এটা হয়ে থাকে। যদি বি ভাইরাসে আক্রান্ত একজন মা কোনো সন্তান জন্ম দিয়ে থাকেন, তাহলে অনেক সময় সেটি সন্তানের শরীরে চলে যেতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ অনিয়ন্ত্রিত শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে এটি হতে পারে। অনেক সময় বি ও সি ভাইরাস ছড়িয়ে থাকে। এই হচ্ছে প্রচলিত কিছু ব্যবস্থা।
আমাদের দেশে ইদানিং কিছু বিষয় প্রচলিত হয়ে গেছে। যেমন টেকটুইন। যে প্রতিষ্ঠান বা যে বিউটিশিয়ান ট্যাকটুইন করছেন, তার জানা না থাকার আশঙ্কাই বেশি যে বি ভাইরাস বা সি ভাইরাস কী। একই যন্ত্র দিয়ে সবার শরীরে উল্কি আঁকা হচ্ছে। আমি অনেক মিউজিশিয়ানকে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রিং পড়তে দেখি। এটি কে পরান? একটি বিউটি পার্লারে এটি করা হয়। তো তখন যে যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে, সে একই ধরনের যন্ত্র কোনো একজন বি বা সি ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো একজনের শরীরে ব্যবহার করা হয়, তাহলে অন্যদের হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বিউটি পার্লারে নাক কান ফোঁড়ানোর যে বিষয়গুলো হয়, তাতেও কিন্তু সমস্যা হতে পারে। সেলুনে সেভ করা থেকে সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আজকাল অবশ্য খুড়ের ব্লেড পরিবর্তন করে ফেলে। তবে খুর যেটি, তার সীমাতো পরিবর্তন হয় না। এই জিনিসগুলো কেউ যদি এড়িয়ে যেতে পারে, তাহলে ভালো। প্রতিরোধই সর্বত্তম পন্থা। আর ডাব্লিউ এইচও গাইড লাইন করে দিয়েছে, জন্মের পরপরই সব শিশুকে টিকা দিতে হবে। এর কারণেই আমরা বি ভাইরাস প্রতিরোধ করতে সক্ষম হচ্ছি। তবে সি ভাইরাসের ক্ষেত্রে হচ্ছে না। চিকিৎসার জন্য নতুন নতুন অনেক বিষয় চলে আসছে, যেগুলো খুবই কার্যকর। কিন্তু হলে তো একটি ঝুঁকি রয়েই যায়।