নবজাতকের জন্ডিসের চিকিৎসা কী?
জন্মের পর অনেক নবজাতকেরই জন্ডিস হতে দেখা যায়। নবজাতকের জন্ডিসের চিকিৎসার বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩১৫৮তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. নাজমুন নাহার। বর্তমানে তিনি বিআরবি হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের ইউনিট প্রধান হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : বিভিন্ন ধরনের জন্ডিসের ক্ষেত্রে কী কী করণীয়?
উত্তর : চিকিৎসা করার আগে অবশ্যই মাত্রাটা নিরূপণ করতে হবে। আমরা চোখে দেখে আন্দাজ করতে পারি। যদি মুখে থাকে, তাহলে আমরা বলি বিলিরুবিনের মাত্রা পাঁচ থেকে সাতের মধ্যে হবে। যদি বুকে চলে আসে তাহলে আমরা বলি, এটি আট থেকে দশের মধ্যে হবে। এভাবে করে নিচে নামতে থাকলে বাড়তে থাকে। উরুতে যদি উঠে আসে, তাহলে এটি বারোর উপরে চলে যায়। পায়ে যদি চলে আসে, সে ক্ষেত্রে এটা ষোলোর উপর উঠে যায়। তখন এটি মারাত্মক।
এরপর আরেকটি নতুন একটি যন্ত্র এখন আমাদের দেশে এসেছে। এটি দিয়ে আমরা রক্ত পরীক্ষা ছাড়াই জন্ডিস নির্ণয় করতে পারি। শুধু স্পর্শ করেই আমরা জন্ডিসের মাত্রা নিরূপণ করতে পারি। এটা বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে। ইউনাইটেড হাসপাতালেও এটি ব্যবহার হচ্ছে। এরপর আমরা যেটি করবো সেটি হলো রক্তের বিলিরুবিন পরীক্ষা। এভাবে বিলিরুবিনের মাত্রা জেনে মারাত্মক জন্ডিসের প্রকার বের করব। এরপর আমরা চিকিৎসা দেব। বুকের দুধ এক নম্বর চিকিৎসা। যদি জন্ডিসের মাত্রা ফটোথেরাপির মাত্রায় পড়ে, তাহলে তাকে ফটোথেরাপি দিতে হবে। এর পরের চিকিৎসা হলো রক্ত পরিবর্তন করা। দেখা যায়, মারাত্মক জন্ডিসের ক্ষেত্রে অনেক সময় রক্ত পরিবর্তন করতে হয়। রক্ত পরিবর্তন পর্যন্তই আমাদের শেষ চিকিৎসা।
প্রশ্ন : মারাত্মক জন্ডিস হলে কোন পর্যায়ে গেলে হাসপাতালে যাবে?
উত্তর : আসলে নবজাতকের জন্ডিস, এমন একটি বিষয় এটা কখনোই অবহেলা করা যাবে না। জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি হলুদভাব চলে আসে শরীরে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এ ছাড়া খুব দ্রুত জন্ডিস বাড়ছে। হয়তো সে আজকে দেখল, একটু হলুদ। এরপর দেখল পুরো হলুদ হয়ে গেছে। তাহলে তাকে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। আর জন্ডিসকে কখনোই অবহেলা করা যাবে না। কারণ, জন্ডিসের যে বিলিরুবিনটা, এটা মস্তিষ্কের যে বেরিয়ার আছে একে খুব সহজে পার করে যায়। গিয়ে এটি মস্তিষ্কে জমা হয়। একবার যদি সেখানে জমা হয়, তাহলে সেখান থেকে আর কিছুইতেই বিলিরুবিন বের করা সম্ভব হয় না। সেই ক্ষেত্রে এ থেকে ভবিষ্যতে এক ধরনের প্রতিবন্ধী তৈরি করে।
প্রশ্ন : এটি থেকে আমরা রক্ষা পাব কীভাবে?
উত্তর : আমরা আগেই সচেতন হবো। যখনই আমরা দেখব, জন্ডিস বাড়ছে বা নিচের দিকে যাচ্ছে, যেমন মুখ, বুক, পেট এবং পায়ের দিকে চলে আসছে, তখন আমরা আর দেরি করব না। খুব দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাব।