কোরবানির মাংস রান্নার স্বাস্থ্যকর উপায়
ঈদুল আজহার মূল আকর্ষণ বিভিন্ন মাংসের মজাদার রেসিপি। তাই ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় কোরবানির ঈদে প্রচুর খাওয়া-দাওয়া হয়। এতে হঠাৎ করে খাদ্য হজম, পরিপাক ও বিপাকে সমস্যা দেখা দিয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়তে পারে।
আমাদের মনে রাখতে হবে, খাবারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সুস্থ, সবল, কর্মক্ষম ও রোগমুক্ত থাকা। তাই হঠাৎ করে কোনো খাবার বেশি করে না খেয়ে বরং খাদ্য ও পুষ্টি সম্বন্ধে সঠিক ধারণা নিয়ে খাওয়া উচিত। আমরা যেন খাবার থেকে সঠিক পুষ্টিগুণ পাই, সে জন্য স্বাস্থ্যকর উপায়ে মাংস রান্না করতে হবে।
কোরবানির মাংস রান্নার উপায়
১. মাংস থেকে পুষ্টি নিতে হলে স্বাস্থ্যকর উপায়ে মাংস রান্না করা খুবই জরুরি। তাই কোরবানির মাংস জবাই করার পর পর রান্না না করে প্রায় আধা ঘণ্টা পর্যন্ত স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখা উচিত। এতে রান্না করার সময় মাংসের ওপরের ও অভ্যন্তরীণ অংশ ভালোভাবে সিদ্ধ হয়। মাংস রান্না করার সময় কম তাপে বেশি সময় নিয়ে রান্না করুন।
২. কোরবানির মাংসের মধ্যে গরু বা মহিষের তুলনায় ছাগল, খাসি কিংবা ভেড়াতে প্রায় ২০ ভাগ বেশি চর্বি থাকে। তাই মাংস কাটার সময় চর্বি কেটে ফেলে দিয়ে রান্না করতে হবে। এতে ক্ষতিকর চর্বি কমে যাবে। স্বাস্থ্যঝুঁকি কমবে।
৩. মাংস রান্নার সময় পাতলা ও ছোট টুকরা করুন। এতে চর্বি কমে যাবে। মাংস রান্নার সময় আগে সিদ্ধ করে পানি ফেলে নিন। কারণ, সিদ্ধ করার সময় মাংস থেকে লুকানো চর্বি পানিতে চলে আসে। এই পানি ফেলে দিলে মাংসের চর্বি অনেকটাই কমে আসে।
৪. মাংস রান্নার সময় উপকারী এইচডিএল (HDL) কোলেস্টেরলযুক্ত জলপাইয়ের তেল বা সূর্যমুখীর তেলে রান্না করলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি কিছুটা হলেও কম হবে এবং মাংসের পুষ্টিগুণ ঠিক থাকবে।
৫. মাংস রান্নার সময় আলাদাভাবে ক্ষতিকর ঘি, মাখন, পাম অয়েল, টেস্টিং সল্ট, ক্ষতিকর সস, রং ব্যবহার করবেন না। এতে যেমন খাদ্য পুষ্টিগুণ কমবে, তেমনি স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়বে।
৬. মাংস বেশি তেলে ভাজা যাবে না। এতে পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়। মাংস রান্নার সময় কাঁচামরিচ, বেশি পেঁয়াজ, রসুন, হলুদ, ভেষজ গুণের মসলা বেশি ব্যবহার করুন। মাংসের ঝোল বেশি খাবেন না।
৭. একসঙ্গে বেশি পরিমাণ মাংস রান্না না করে প্রতিদিন অল্প করে রান্না করুন এবং রান্না করার পর মাংস বারবার গরম করবেন না। এতে মাংসে ক্ষতিকর উপাদান তৈরি হয়, পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়।
৮. কয়লার আগুন দিয়ে মাংস রান্না হলে ক্ষতিকর আরোমেটিক হাইড্রোকার্বন তৈরি হয়। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে। তাই সাবধান। বার-বি-কিউ না করে গ্রিল করা মাংসে চর্বি প্রায় থাকে না বললেই চলে, তাই গ্রিল খাওয়া অনেক স্বাস্থ্যকর।
লেখক : সভাপতি, বিশুদ্ধ খাদ্য চাই এবং সহকারী অধ্যাপক, গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ, সাভার।