শরতে ত্বকের যত্নে কী করবেন?
কখনো বৃষ্টি, কখনো গরম এ রকম একটি আবহাওয়া থাকে শরতে। এই সময় ত্বক শীতের জন্য প্রস্তত হতে শুরু করে। শরতে ত্বকের যত্নের বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩২১১তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. তাওহীদা রহমান ইরিন।
ডা. তাওহীদা রহমান ইরিন বর্তমানে শিওর সেল মেডিকেলের ডার্মাটোলজি বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : শরতে ত্বকে কী কী ধরনের সমস্যা হতে পারে?
উত্তর : এখন প্রকৃতিতে চলছে শরতের ছোঁয়া। হালকা বৃষ্টি। আবহাওয়া বেশ অনুকূলে। এটি কিন্তু দারুণ উপভোগের একটি সময়। আর শরতকে বলা হয় ট্রানজিশনাল পিরিয়ড অব দ্য ইয়ার অর্থাৎ বছরের ক্রান্তিকাল। শীতের শুরুতে প্রকৃতির একটি প্রস্তুতি। এই প্রস্তুতি কেবল প্রকৃতিতে নয়, ত্বকের ওপরও। আসন্ন শীতে রুক্ষ্মতা যেন আমাদের ত্বককে ম্লান করতে না পারে, পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে আমার দর্শকদের জন্য ছোট ছোট কিছু পরামর্শ দেব।
প্রশ্ন : শরতে ত্বকে কী কী সমস্যা হয়?
উত্তর : প্রথমে আমি আসি আর্দ্রতা নিয়ে। শরতে যেহেতু আবহাওয়া আর্দ্র থাকে, তাই আমরা অনেকে ভাবি আমাদের ত্বকে ময়েশ্চারাইজারের দরকার নেই। তবে এই সময় কিন্তু ত্বক প্রস্তুত হচ্ছে শীতের জন্য। এ কারণে আমাদের আর্দ্রতাকে ধরে রাখতে হবে। সেই আর্দ্রতাটাকে আমরা ধরে রাখব, ত্বকের ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে। অবশ্যই ত্বকের ধরন অনুযায়ী। এক এক জনের ত্বক তো একেক রকম। যাদের ত্বক স্বাভাবিক তারা অনেক ভাগ্যবান। স্বাভাবিক ত্বকে আমরা আলফা হাইড্রা এসিডযুক্ত কোনো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করব। যাদের ত্বক একটু শুষ্ক বা এটোপিক ডার্মাটাইটিজ বা এক্সিমার প্রবণতা থাকে, তারা তাদের ময়েশ্চারাইজারে কিছু জিনিস দেখবে। ফ্যাটি এসিড, সেরামাইড এগুলো যেন থাকে। সবচেয়ে ভালো হয় একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাছাই করা। এই ফ্যাটি এসিড, সেরামাইড থাকে নারকেল তেল, নারকেলের দুধে। আর যাদের ত্বক তৈলাক্ত, তারা অবশ্যই ব্যবহার করবেন জোজবা ওয়েল, টি ট্রি ওয়েল সমৃদ্ধ কোনো ময়েশ্চারাইজার, যেগুলো পানি সমৃদ্ধ হবে এবং দ্রুত ত্বকে মিশে যাবে।
তবে ময়েশ্চারাইজারের ক্ষেত্রে একটি বিষয় রয়েছে। অনেকে হয়তো জানেন বা অনেকে জানেন না, সেটি হলো টাইমলেস ময়েশ্চারাইজার।
টাইমলেস ময়েশ্চারাইজার হলো যেই ময়েশ্চারাইজারটি আমাদের ত্বকে অনেকক্ষণ ধরে থাকবে,পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললেও। কারণ, শরতে কিন্তু পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলার একটি বিষয় থাকে। ধুয়ে ফেললেও পানির সঙ্গে এটি ধুয়ে যাবে না। পানিতে যে প্রোটিলাইটিক এনজাইম থাকে, তা এই ময়েশ্চারাইজারের সঙ্গে আটকে ত্বকে একটি সুরক্ষাচক্র হিসেবে কাজ করবে।
প্রশ্ন : এটি কি সহজলভ্য? চাইলেই কি সবাই নিতে পারবে?
উত্তর : হ্যাঁ। আমাদের দেশেই এখন তৈরি হচ্ছে। তা না হলে আমরা কোনো স্প্রে বোতলে পানি রেখে স্প্রে করতে পারি বা অ্যালোভেরার সঙ্গে মিশিয়ে স্প্রে করতে পারি, যদি অ্যালোভেরাতে অ্যালার্জি না থাকে। এখন স্প্রিং ওয়াটার বা থার্মাল ওয়াটার পাওয়া যায়। এগুলো স্প্রে করতে পারি। তাহলে কিন্তু প্রটোলাইটিক এনজাইম আমাদের ত্বকের আর্দ্রতাকে হারাতে দিচ্ছে না।
প্রশ্ন : আরো কী কোনো পরামর্শ রয়েছে সুস্থ ত্বকের জন্য এই সময়টায়?
উত্তর : এই ময়েশ্চারাইজারকে আরো সুন্দরভাবে ত্বকে সংযোগের জন্য আরো সুন্দরভাবে কাজ করে এক্সফোলিয়েটের।
প্রশ্ন : এটি কী?
উত্তর : এটি হলো স্ক্রাবার, যা ত্বক থেকে মৃত কোষকে দূর করবে। বাজারেও এক্সফোলিয়েটর পাওয়া যায়। যারা কিনবেন, দেখে নেবেন এটা যেন মাইক্রোবিট ফ্রি হয়। আর ঘরে বসেও নানা রকম সামগ্রী দিয়ে তৈরি করতে পারে। যাদের ত্বক স্পর্শকাতর, তারা টকদই দিয়ে, ওটমিল দিয়ে তৈরি করতে পারেন। যাদের ত্বক ভীষণ তৈলাক্ত, তারা একটু ত্বক দইয়ের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে নিতে পারেন। যাদের ত্বক ভীষণ তৈলাক্ত তারা একটু টক দইয়ের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে তৈরি করতে পারেন। শুষ্ক ত্বকে কফি বা অলিভ ওয়েলের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে বা চালের গুঁড়া, মুলতানি মাটি এগুলো মিশিয়েও কিন্তু স্ক্রাবার তৈরি করতে পারেন। সেই এক্সফোলিয়েটর আপনারা পুরো মুখে ও শরীরে ব্যবহার করতে পারেন।
প্রশ্ন : এটি কী প্রতিদিনই ব্যবহার করা যায়?
উত্তর : না, এটি সপ্তাহে একদিন অথবা দুদিন ব্যবহার করা যায়।
আমাদের কিছু কিন্তু অবহেলিত অংশ থাকে। যেমন, হাতের কনুই, পায়ের গোড়ালি, ঠোঁট। এগুলোর যত্ন আসলে তেমন করে হয় না, তাই স্বাভাবিকভাবেই শুষ্ক থাকে। আর এখানে মৃতকোষ তৈরি করার ক্ষমতাটাও বেশি। এগুলো যদি আমরা ঘষে নেই, তাহলে পরে যে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করব, সেটি আমাদের ত্বকে সুন্দরভাবে শোষণ হবে। ত্বক থাকবে কোমল, মসৃণ। আসন্ন শীতে রুক্ষ্মতা সেভাবে আমাদের ত্বককে কাবু করতে পারবে না।