ডায়াবেটিস রোগী কতদিন পর কিডনি পরীক্ষা করাবেন?
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2018/10/25/photo-1540479668.jpg)
ডায়াবেটিস হলে কিডনি রোগের আশঙ্কা থাকে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মিত কিডনির কার্যক্রম পরীক্ষা করানো উচিত। এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩২৩৬তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. শামীম আহমেদ।
ডা. শামীম আহমেদ জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটে নেফ্রোলজি বিভাগের প্রাক্তন পরিচালক ও অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : একজন ডায়াবেটিস রোগীর কতদিন পর পর কিডনি পরীক্ষা করাতে হবে? এবং কী কী পরীক্ষা করতে হবে?
উত্তর : ব্লাড সুগার তো নিজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। স্ক্রিনিং আলাদা জিনিস। ছয় মাস বা এক বছর পর পর স্ক্রিনিং করতে হবে। যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, উচ্চরক্তচাপ রয়েছে, কিডনি রোগ রয়েছে, ৪০ বছরের ওপরে গেলে আমার মনে হয় সবার এই পরীক্ষা করা উচিত। আর যারা রোগ নির্ণয় করে ফেলেছে, তারা ব্লাড সুগারের পরীক্ষা নিজেরা করবে। আমার মনে হয় ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা তিন থেকে ছয় মাস পরে করলেই হবে। কারণ, আমরা বলি না খুব ঘন ঘন চিকিৎসকের কাছে আসেন। আপনারা নিজেরাই এটা করেন। ছয় মাস পর আপনি পরামর্শ নিন। শুধু ওষুধের পরামর্শ, খাদ্যতালিকার পরামর্শ খুব গুরুত্বপূর্ণ।
ডায়াবেটিস রোগীদের খাবারের প্রতি কিন্তু আমরা খুব গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা কোনটা খাব, কোনটা খাব না, সেটি বুঝতে হবে। আমরা যখন বলি ডায়াবেটিস কিডনি ফেইলিউর তখন প্রোটিন জাতীয় খাবার এড়িয়ে যেতে হবে। কার্বোহাইড্রেট কতটুকু খেতে হবে, চর্বি কতটুকু খেতে হবে, ভিটামিন কতটুকু খেতে হবে, পানি কতটুকু পান করতে হবে, এসব কিছুর উপদেশ আমরা দেই। পাশাপাশি আপনার ডায়াবেটিসটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ব্লাড প্রেশার কতটুকু থাকবে সেটি আমরা বলে দেই। সংক্রমণ থাকলে চিকিৎসা করাতে হবে। কোনো ব্যথার ওষুধ খেতে পারবে না।
প্রশ্ন : তাহলে ব্যথা হলে কী করবে?
উত্তর : সুন্দর প্রশ্ন। আমরা বলি, এক/দুটা হয়তো ব্যথার ওষুধ দিতে। তবে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ কিডনিতে কম প্রভাব ফেলে। ফিজিওথেরাপি দিন। ফিজিওথেরাপি দিয়ে পেশির শক্তিটা বের করেন। যদি এতেও না হয় তাহলে খুব নির্বাচন করে ওষুধ দিতে হবে। ওষুধ সবসময় আপনি দিয়ে যাবেন, রোগীর কিডনি আক্রান্ত হবে, সেটি তো সে জানতেও পারবে না। অনেকে কি করে? কাউন্টার থেকে নিয়ে ব্যথার ওষুধ পাশাপাশি স্টেরয়েড দেয়। রোগীর ভালো লাগছে স্টেরয়েড খাচ্ছে। তবে দুই তিন বছর পর যখন স্টেরয়েডের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয়, তখন আমাদের কাছে আসে। তখন আমরা স্টেরয়েড বাদ দিতে পারছি না, আবার কিডনিটাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। পদ্ধতি পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। কাউন্টার থেকে নিজে নিজে ওষুধ খাওয়া আমাদের পরিহার করা উচিত।
প্রশ্ন : ডায়াবেটিস হয়নি তবে কিডনি রোগ রয়েছে, আবার ডায়াবেটিসসহ কিডনি রোগ- দুটোর চিকিৎসার মধ্যে কি কোনো তারতম্য রয়েছে?
উত্তর : প্রথমে হলো ডায়াবেটিস যাদের রয়েছে, তাদের চিকিৎসা রয়েছে। আপনার ডায়াবেটিসের জন্য হাইপোগ্লাইসেমিক এজেন্ট, ইনসুলিন যা রয়েছে, সেটি দিতে হবে। পাশাপাশি যখন প্রোটিন যোগ হয়,তার ব্লাড প্রেশার বাড়বে, চোখও আক্রান্ত হবে। ডায়াবেটিস কিডনি যদি আক্রান্ত করে ৯০ ভাগ চোখ আক্রান্ত করে। চোখ আক্রান্ত হলে, কিডনি আক্রান্ত নাও হতে পারে।
এই ক্ষেত্রে কিন্তু আলাদা। যখন কিডনি আক্রান্ত হয়ে যায়, তখন কিডনির চিকিৎসা করাতে হবে। যদি কিডনির কার্যকারিতা ৫০ ভাগ কমে যায়, তখন কিছু কিছু ডায়াবেটিসের ওষুধ আমরা কমিয়ে দিতে চাই। আরেকটি মজার বিষয় হলো, ডায়াবেটিসের কারণে কিডনি যদি ৫০ থেকে ৭০ ভাগ নষ্ট হয়ে যায়, তখন কিন্তু ইনসুলিনের প্রয়োজন কম হয়। এই সময় ইনসুলিন ভাঙে না। কিডনির ভিতর থেকে যায়। এই ক্ষেত্রে ইনসুলিনের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে।
কিডনির কার্যকারিতা যখন কমতে থাকবে ডায়াবেটিসের ওষুধগুলো পরিবর্তন হতে থাকবে। এটা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে করতে হবে।