কেন মানুষ আত্মহত্যা করে?
সাধারণত খুব চাপযুক্ত পরিস্থিতিতে একজন ব্যক্তি আত্মহত্যা করে বা আত্মহত্যা প্রবণ হয়ে উঠে। আবার কিছু জটিল মানসিক রোগের কারণেও একজন ব্যক্তি আত্মহত্যা করে।
একজন ব্যক্তির আত্মহত্যা প্রবণ হয়ে উঠার বিভিন্ন কারণের বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩২৫৫তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. দেওয়ান আবদুর রহীম। বর্তমানে তিনি বিআরবি হাসপাতালের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের জ্যেষ্ঠপরামর্শক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : আত্মহত্যা প্রবণতা কী? কী কারণে একজন ব্যক্তি আত্মহত্যা প্রবণ হয়ে উঠে?
উত্তর : আত্মহত্যা বাংলাদেশে দিন দিন বাড়ছে, এটি ঠিক। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের মধ্যে মুসলিম দেশগুলোতে তুলনামূলকভাবে আত্মহত্যা কম হয়, যেহেতু ধর্মগত একটি বিষয় থাকে। এটি একটি ভালো দিক। তবে ইদানীং তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যায়। কারণ, তারা ইদানীং ফেসবুক, সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সম্পর্ক খুবই বাড়ছে। হয়তো দুজন ব্যক্তির মধ্যে সম্পর্ক হলো, আবার ভেঙে গেল। এই ক্ষেত্রে মেয়েটা কিন্তু আত্মহত্যা করে। ইদানীং এটি বেশি বাড়ছে। এই ক্ষেত্রে কিন্তু ছেলে আত্মহত্যা করে না, মেয়েটা করে। সারা বিশ্বের পরিসংখ্যানে আত্মহত্যার ক্ষেত্রে মেয়েদের সংখ্যা বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা তিনগুণ বেশি আত্মহত্যা করে।
আবার আরেকটি বিষয় হলো প্যাকড সুইসাইড। এই বিষয়টি হলো দুজন মিলে আত্মহত্যার সীদ্ধান্ত নেওয়া। যেমন : হয়তো, ছেলেটি মেয়েটিকে বা মেয়েটি ছেলেটিকে বলল, ‘তোমার পরিবার হয়তো আমাকে মানছে না, আমার পরিবার হয়তো তোমাকে মানছে না। চল, আমরা চলেই যাই তাহলে’। তখন একসঙ্গে আত্মহত্যা করতে যায়। একসঙ্গে করতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে মেয়েটি আত্মহত্যা করে বসে। এতে ছেলেটি ভয় পেয়ে গেল বা অন্য কেউ দেখে ফেলল। এভাবে ছেলেটা বেঁচে যায়।
প্রশ্ন : কোনো নির্দিষ্ট মানসিক রোগের কারণে কি এই সমস্যাটা বাড়ছে?
উত্তর : এতক্ষণ যেগুলো বললাম, সেগুলো হলো সামাজিক বা পারিবারিক বা ব্যক্তিগত বিষয়। অসুখের কারণে অনেক সময় আত্মহত্যা করে। যেমন : বিষণ্ণতা একটি রোগ। মানুষ বুঝবে কীভাবে? সব কিছুর মধ্যে ‘না’। খেতে ভালো লাগে না, চলতে ভালো লাগে না। হাঁটতে ভালো লাগে না। ঘুমাতে ভালো লাগে না। ভেতর থেকে কোনো কিছুই সে ইতিবাচকভাবে নিতে পারে না। এদের যদি চিকিৎসা না হয়, তাহলে তারা আত্মহত্যা করতে পারে। বিষণ্ণতা ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের মধ্যে চারগুণ বেশি।
আর আরেকটি হলো সিজোফ্রেনিয়া। এই রোগীরা আত্মহত্যা করতে পারে। সিজোফ্রেনিয়া একটি গুরুতর মানসিক ব্যাধি। একে আমরা সাহিত্যের ভাষায় বলতে পারি মনের ক্যানসার।
সিজোফ্যানিক রোগীরা দেখা যায় রাস্তাঘাটে থাকে। বট গাছের নিচে থাকে, ময়লা কাপড় পড়ে, হাতের নখ বড় থাকে। বিড় বিড় করে কথা বলে।
প্রশ্ন : সিজোফ্যানিয়া রোগের শুরুটা কীভাবে হয়?
উত্তর : পরিবার থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্যই তাদের এই সমস্যা। এদের যদি ঠিকমতো চিকিৎসা করা হয়, এদেরও সুস্থ করা সম্ভব।