শিশুদের হৃদরোগ বাড়ছে কেন?
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2018/11/17/photo-1542449548.jpg)
শিশুদের হৃদরোগের কথা শুনলে অনেকেই চমকে যায়। বড়দের মতো শিশুদেরও হৃদরোগ হতে পারে। শিশুদের হৃদরোগের বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩২৫৯তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান সেলিম।
ডা. মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান সেলিম বর্তমানে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : শিশুদের হৃদরোগের হাড় বাড়ছে কেন?
উত্তর : আসলে শিশুদের হৃদরোগ শুনলে অনেকে চমকে উঠেন। শিশুদের কি হৃদরোগ হয়? আমরা বড়দের হৃদরোগের বিষয়টি বুঝি। আমরা বুঝি বড়দের হার্ট ব্লক হয়, ভাল্ভে বিভিন্ন ব্লক হয়, এটি নিয়ে আমরা সবাই চিন্তিত। কিন্তু শিশুদের হৃদরোগ চিন্তা করতেই আমরা বিস্মিত হয়ে যাই। আতঙ্কিত হওয়ার মতো একটি বিষয়। কিন্তু শিশুদের হৃদরোগ যে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে, সেটি আমি বলব না। এটা আগেও ছিল। তবে আমাদের বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতির অভাবে, সচেতনতার অভাবে এই রোগগুলো নিয়ে মানুষ অত বেশি চিন্তা করত না।
হয়তো দেখা গেল, একটি শিশুর জন্মের পর শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, নীল হয়ে যাচ্ছে। বলল যে, ভূতে ধরেছে, জিনের আছর। এই ধরনের কুসংস্কারের কারণে বাচ্চাটা মারা গেল। তবে ক্রমাগত যখন দেশের মানুষের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে, আমাদের প্রসব ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে, সামাজিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে, তখন বাড়িতে প্রসবের বদলে, হাসপাতালে প্রসব বাড়ছে। তখন এই জিনিসগুলো ধীরে ধীরে বৈজ্ঞানিক পর্যায়ে ধরা পড়ছে।
শিশুদের হৃদরোগকে আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে ভাগ করতে পারি। এর যে প্রকাশ, কখনো কখনো দেখা যায়, জন্মগ্রহণের ঠিক পর পরই শুরু হয়। জন্মগত হৃদরোগ নিয়ে জন্মানো শিশু কয়েকটি পর্যায় নিজেকে উপস্থাপন করে। প্রথম যেই পর্যায়, একে নিউনেটাল পর্যায় বলি। জন্মের এক মাসের মধ্যে যদি রোগ উপস্থাপন করে তাহলে তাকে নিউনেটাল হার্ট ডিজিজ বলি। তাদের সংখ্যা যে খুব কম তা নয়। কিন্তু এই শিশুগুলো বেশিরভাগই আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে খুব দ্রুত মারা যায়। চিকিৎসকের কাছে আসতে পারার আগে তারা খুব খারাপ অবস্থায় চলে আসে। কিছুই করা যায় না, তাদের জন্য।
দ্বিতীয় পর্যায় যেটি, এক মাসের পরে প্রকাশ পায়, নিউনেটালের পরের পর্যায়ে প্রকাশ পায়। তারা বেঁচে থাকে, পরবর্তী সময় পর্যন্ত। তাদের আমরা বলি ইনফ্যান্ট স্টেজে রয়েছে। এক বছর পর্যন্ত এই রোগীগুলোর প্রতি যত্ন নেওয়ার সময় পাচ্ছি আমাদের দেশে এ পর্যন্ত। কারণ, তাদের হৃদরোগটা অপেক্ষাকৃত কম জটিল, নিউনেটাল হার্ট ডিজিজের চাইতে। তারা চিকিৎসক পর্যন্ত আসতে পারে, পরীক্ষা করে তাদের জন্য অনেক কিছু করা সম্ভব। চিকিৎসা পর্যন্ত তাদের নিয়ে যাওয়া যায়। মা-বাবারা বুঝতে পারে, তার শিশুর হৃদরোগ রয়েছে।
অনেক শিশু যারা এক বছরের পরে আমাদের কাছে আসে, তারা আগেই হয়তো জানত, অথবা জানত না, তারা এক বছর বয়সের মধ্যে আমাদের কাছে আসে। অনেকে রয়েছে পাঁচ থেকে ছয় বছর বয়সে আমাদের কাছে আসে। অনেকেই জানত হৃদরোগ রয়েছে, আবার অনেকেই জানত হৃদরোগ নেই। হঠাৎ করে অন্য উপসর্গ বা অন্য কোনো সমস্যার কারণে যখন তারা চিকিৎসকের কাছে আসে, তখন আমরা এই রোগকে ধরতে পারি।
আবার অনেকে দেখা যায় ১৫-২০ বছর বয়স হয়ে গেছে, আবার অনেকে দেখা যায়, সন্তানের জনক বা জননী হয়ে গেছে, ৪০-৫০ বছর বয়স হয়ে গেছে- এ রকম পর্যায়েও অনেকে জন্মগত হৃদরোগ নিয়ে আসে। কিন্তু এই রোগটি যদিও পরে ধরা পড়ে, এটি নির্দিষ্ট যে মায়ের পেটে যখন ছিল, তখন থেকে সে নিশ্চিত রোগীর হৃদরোগ হবে এবং রোগীর জটিলতা অনুযায়ী, বিভিন্ন সময় প্রকাশ করতে পারে। কখনো জন্মের পরপর এক মাসের মধ্যে, কখনো ইনফ্যান্ট পর্যায়ে।