শিশুদের হৃদরোগের চিকিৎসা কী?
শিশুদের হৃদরোগের চিকিৎসায় সার্জারি করা হয়। শিশুদের হৃদরোগের চিকিৎসার বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩২৬৫তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান সেলিম।
ডা. মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান সেলিম বর্তমানে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : শিশুদের হৃদরোগের চিকিৎসা কী থাকে? চিকিৎসা নির্ভর করে কিসের ওপর?
উত্তর : আসলে রোগ নির্ণয় কঠিন আমাদের দেশে। রোগ নির্ণয়ের জন্য যে পদ্ধতিগুলো রয়েছে, সেটি আমাদের দেশে অপ্রতুল বলব না। তবে পর্যাপ্ত কোনোভাবেই নয়। কারণ, যন্ত্র হয়তো আমরা পয়সা দিয়ে কিনতে পারব, বিভিন্ন হাসপাতালে, কিন্তু এই যন্ত্র চালানোর জন্য যে পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্ট, এর অভাব না বললেও পর্যাপ্ত রয়েছে বললে খুব মুশকিল হয়ে যাবে। কারণ, পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্ট যারা, যারা শিশুদের হৃদরোগ নিখুঁতভাবে ধরতে পারেন, তাদের সংখ্যা হাতে গোনা কয়েকশ হবে। যারা এই হৃদরোগের সার্জারি করতে পারে, পুরো দেশের ১৬ কোটি জনসাধারণের জন্য, ছয় থেকে আটজন শিশুদের হৃদরোগ সার্জন রয়েছে, যারা শুধু শিশুদের হৃদরোগের সার্জারি করে থাকে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য যে খরচ, এই খরচটি আমাদের দেশের মানুষদের জন্য অবশ্যই ব্যয়বহুল। যেমন অনেক চিকিৎসা ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ করলে হয়ে যায়। একটি সিজারিয়ান সেকশন বলেন বা অন্য একটি পিত্তথলির অস্ত্রোপচার বলেন, করা যায়। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে, এই হৃদরোগের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে শিশুদের হৃদরোগের ক্ষেত্রে কার্ডিয়াক ক্যাথ বা সিটি স্ক্যান করতে যান, ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লেগে যাচ্ছে। তবে যে দেশের মানুষের নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা, তাদের জন্য ভীষণ কঠিন অবস্থা। আমাদের জন্য আসতেই তাদের ভাড়াটা জোগাতে পারে না। আমাদের কাছে এসে এই চিকিৎসার ব্যয়ভার যারা শুনতে পারে, একটি কথা বলে রোগীর মা-বাবা, ‘স্যার আমাদের এর থেকে মরে যাওয়াটা সহজ।’
কখনো কখনো তারা বলে, ‘স্যার আমরা আরেকটি শিশুর জন্য চেষ্টা করব। এর চিকিৎসা আমরা করতে পারব না।’
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার লাগে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়তো এএসডি ডিভাইস করা যায়। পিডিএ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, কিছু কিছু ভিএসডিতে এখন চেষ্টা করা হচ্ছে, ডিভাইসের মাধ্যমে বন্ধ করার জন্য। পিডিএ এবং এএসডি সফলভাবেই বন্ধ করা যায়। তবে বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারই উত্তর। এই অস্ত্রোপচারের জন্য যে আমি বলব, শুধু যে টাকাপয়সার সমস্যা তা নয়, অস্ত্রোপচারের জন্য যে সার্জন লাগবে, ইনটেনসিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞ লাগবে, অ্যানেসথিসিওলজিস্ট লাগবে, দক্ষ নার্স লাগবে, শুধু প্রশিক্ষিত নার্স হলেই হবে না, নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে এমন নার্স লাগবে। যেমন একটি মানুষ চাকরির জন্য কাজ করে। আরেকটি মানুষ দরদ নিয়ে কাজ করে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, প্রতিটি হার্টের অস্ত্রোপচার, বিশেষ করে শিশুদের হার্টের অস্ত্রোপচারে আসলে লক্ষাধিক টাকা প্রয়োজন। সরকারি সেক্টরের কথা বলব না। সরকার যথেষ্ট চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তবে সরকারের একার পক্ষে কিন্তু বিষয়টি কঠিন। এই জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে বলছে।