পয়লা বৈশাখে সুস্থ থাকতে ছয় পরামর্শ
রাত পোহালেই নতুন সূর্য, নতুন বছর; বঙ্গাব্দ ১৪২৬। নতুন বছরকে বরণ করে নিতে চলছে নানা প্রস্তুতি। রমনা বটমূলের গান, মঙ্গলশোভা যাত্রা, পান্তা- ইলিশের সঙ্গে চলবে এ পার্বণ। আর সারাদিন ঘোরাঘুরি।
এই উৎসব আনন্দে শরীরটা যেন সুস্থ থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। অসুস্থ হয়ে পড়লে কিন্তু পুরো আনন্দটাই মাটি হয়ে যাবে।
বৈশাখে সুস্থতায় করণীয় বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসিডেন্ট গুলজার হোসেন উজ্জ্বল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু। আসুন জানি, কীভাবে সুস্থ থাকবেন বৈশাখে।
১. গরমের সমস্যা
ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক হুমায়ুন কবীর হিমু বলেন, ‘বৈশাখে অনেক বেশি তাপমাত্রা থাকে। এর মধ্যে সবাই ঘোরাঘুরি করে। অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও ঘোরাফেরা দুটো মিলিয়ে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এই তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে তাপ জনিত সমস্যা তৈরি হয়। স্ট্রোক হতে পারে।’
তাপামাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে বেড়ে গেলে একে হিট স্ট্রোক বলা হয় জানিয়ে ডা. হিমু বলেন, ‘আর ৩৬ থেকে ৪০ হলে হিট এক্সোশন হয়। হিট স্ট্রোকটা সবচেয়ে ভয়ের। কারণ, হিট স্ট্রোক শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলে। এতে মৃত্যু হয়। এ ধরনের সমস্যা হলে রোগীকে অবশ্যই কোনো ছায়াযুক্ত স্থানে নিতে হবে। বরফ কুচি পাওয়া গেলে বগলের নিচে, কুচকিতে রাখতে হবে। শীতল পানি দিয়ে শরীর মুছিয়ে দিতে হবে। বরফ পানি বা বরফ ব্যবহার করবেন না।
ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু আরো বলেন, ‘বাইরে বের হলে পানি সঙ্গে রাখতে হবে। তাপমাত্রা অতিরিক্ত থাকলে রোদে টানা থাকা যাবে না। যতক্ষণ বাইরে থাকবে একটু একটু করে পানি পান করতে হবে। দুপুরবেলা রোদ বেশি থাকলে না বেরোনোই ভালো। ভোর বা বিকেলে বের হোন।’
২.পানিশূন্যতা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসিডেন্ট গুলজার হোসেন উজ্জ্বল বলেন, ‘বৈশাখের এই সময়ে থাকে প্রচণ্ড দাবদাহ; বাইরে তীব্র রোদ। বাতাসে কিছুটা আর্দ্রতাও থাকে। তাই এ সময় প্রচণ্ড ঘাম হয়। বাইরে ঘোরাঘুরির সময় শরীর থেকে লবণপানি বেরিয়ে গিয়ে পানিশূন্যতা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে। বিশেষ করে শিশু ও প্রবীণরা সহজেই ধরাশায়ী হয়ে পড়ে। পানিশূন্যতার কারণে আক্রান্ত ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে কিডনিও আক্রান্ত হয়। তাই বাইরে বের হলে সঙ্গে স্যালাইন পানি রাখতে ভুলবেন না।’
৩. পেটের পীড়া
ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক হুমায়ুন কবীর হিমু বলেন, পান্তা-ভাত আমাদের ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে পান্তা-ভাত কীভাবে কোথায় খাচ্ছেন, সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। বাসায় বানালে খাওয়া যেতে পারে। পান্তা বানানোর প্রক্রিয়ায় মশা, মাছি, টিকটিকি, তেলাপোকা যেন না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। না হলে পেটের পীড়া হতে পারে। ডায়রিয়া, বমি, পেট ব্যথা হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। আসলে এ সময় বাইরের খাবার না খাওয়াই ভালো।’
৪. ত্বকের সমস্যা
বৈশাখের এই সময়ে থাকে প্রচণ্ড দাবদাহ জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসিডেন্ট গুলজার হোসেন উজ্জ্বল বলেন, ‘এই সময় গরম ও সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির কারণে কারো কারো ত্বকে অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। ত্বকে ফুস্কুড়ি, লাল লাল র্যাশ, চুলকানি হতে পারে। ঘামাচি এই সময়ে ত্বকের একটি অতি সাধারণ সমস্যা। এ ছাড়া ঘাম শরীরে জমে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হতে পারে।’
৫. বাইরের শরবত
ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক হুমায়ুন কবীর হিমু বলেন, রাস্তার শরবত এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। এগুলো থেকে জন্ডিস, টাইফয়েডের মতো সমস্যা হতে পারে।’
৬. ঠাণ্ডা-জ্বর
ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক হুমায়ুন কবীর হিমু বলেন, ‘অনেকে এই সময় অনেক ঠাণ্ডা পানি, আইসক্রিম, কোক খায়। এগুলো খেলে গলার স্বর বসে যেতে পারে। সর্দি হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। হাঁপানি থাকলে, সেটি দেখা দিতে পারে; জ্বর আসতে পারে।’
বৃষ্টিতে ভিজলে আপত্তি নেই। তবে ভেজা কাপড়ে বেশিক্ষণ থাকলে ঠাণ্ডার সমস্যা হতে পারে। তাই এ ধরনের কাপড়ে বেশিক্ষণ না থাকার পরামর্শ তাঁর।