খাবারে বেশি কীটনাশক ব্যবহার করলে ক্ষতি কী?
অনেকেই বেশি ফসল পাবার আসায়, লোভে পড়ে জমিতে বেশি কীটনাশক ব্যবহার করে। এতে কী ধরনের ক্ষতি হয়, এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩৪৮৩তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. মো. শাকিল মাহমুদ।
বর্তমানে মো. শাকিল মাহমুদ গণস্বাস্থ্য সমাজ ভিত্তিক মেডিকেলের বায়োক্যামেস্ট্রি ও পুষ্টি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : খাদ্য, প্রত্যেক মানুষকে বেঁচে থাকার জন্য খেতে হয়। এর মধ্যে নিরাপদ বা অনিরাপদ বিষয়টি কী?
উত্তর : খাদ্য মানুষের একটি মৌলিক চাহিদা। মৌলিক যে পাঁচটি চাহিদা রয়েছে, এর মধ্যে খাদ্য হলো অন্যতম। অবশ্যই সে খাবারটা হতে হবে নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর ও ভেজালমুক্ত। আমরা খাদ্য খাই বাঁচার জন্য, শক্তির জন্য ও পুষ্টির জন্য। তবে যে খাদ্য খাওয়ার পর আমার শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়, বিভিন্ন ঝুঁকি বাড়ে, বিশেষ করে খাবার খাওয়ার পর পাতলা পায়খানা শুরু হয়, আমশার মতো সমস্যা হয়, জন্ডিসের ঝুঁকি বাড়ে, ফুড পয়জনিং হয়, এগুলো খাবার নয়, এগুলো বিষ। এসব বিষাক্ত খাবার, অনিরাপদ খাবার নিয়ে আমাদের প্রশ্ন।
আমরা জানি, খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে, খাবার টেবিলে আসা পর্যন্ত প্রত্যেকটি পর্যায়ে যদি খাবার নিরাপদ না থাকে, খাদ্য বিশুদ্ধ না থাকে, দুষণমুক্ত না থাকে, তাহলে খাদ্য হবে না। খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে টেবিলে আসা পর্যন্ত খাদ্য যদি নিরাপদ থাকে, একে আমরা নিরাপদ খাদ্য বলব।
প্রশ্ন : খাদ্য উৎপাদন থেকে টেবিলে আসা পর্যন্ত কোন কোন ক্ষেত্রে খাবারের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে?
উত্তর : আমাদের মূল যে ধারণা, এর মধ্যে খাবারে কার্বোহাইড্রেট থাকবে, প্রোটিন, লিপিড, ডায়াটারি ফাইবার, ভিটামিন ও মিনারেল থাকবে। এগুলোর বাইরে যদি অতিরিক্ত এডিটিভ দেওয়া হয়, সেটি আর খাদ্য থাকবে না। সেটি হয়ে যাবে বিষ। এ বিষাক্ত খাদ্য মানবদেহের তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদে বিভিন্ন স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
প্রশ্ন : একজন কৃষক খাদ্য উৎপাদন করছেন মাঠে, সেখানে কী কী ভাবে খাবারের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে?
উত্তর : খাদ্য উৎপাদনের সময় স্বাস্থ্যঝুঁকি কী হয়, কৃষকরা কিন্তু জানে না। যারা কীটনাশক বিক্রি করে কৃষকরা তাদের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে, অতিরিক্ত মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার করে। কীটনাশক ব্যবহার করা নিষেধ নয়। তবে একটি মাত্রা রয়েছে। এর বেশি ব্যবহার করলে এটি মানবদেহের জন্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে। একটি ক্ষেত্রে যদি কীটনাশক দিতে হয় একবার, যে কীটনাশক বিক্রি করে সেই দোকানদার তার ব্যবসার কথা চিন্তা করে, কৃষককে প্রভাবিত করে বেশি বিক্রি করে। এতে কৃষকের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কৃষকটির যাওয়ার দরকার ছিল, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের তত্ত্বাবধানের যে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাদের কাছে। আমাদের সহজ-সরল কৃষক তাদের কাছে না গিয়ে মুনাফা লোভী , স্বার্থসন্ধানী কিছু ব্যবসায়ীর মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করছে।
প্রশ্ন : বেশি কীটনাশক ব্যবহার করলে কী ক্ষতি হয়?
উত্তর : প্রত্যেকটি প্রাণীর কিন্তু ডিএনএ/ আরএনএ রয়েছে। কীটনাশক কোষের মিউটেশন ঘটাতে পারে, পুষ্টিমান কমিয়ে দিতে পারে। অতিরিক্ত কীটনাশক কিন্তু খাদ্যের উপাদান নয়। এটি একটি কৃত্রিম উপাদান, যেটি পোকা-মাকড় থেকে খাদ্যকে রক্ষা করবে। যেই মাত্রায় দেওয়ার কথা আমার কৃষক সেটি দিচ্ছে না। এর জন্য খাদ্যের যে গুণগত মান, পুষ্টিগুণ সেটি থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। এ খাবারের মধ্যে যদি এখন জিনগত কোনো পরিবর্তন হয়, এর ভবিষৎ প্রভাব কিন্তু আমাদের মানবদেহে চলে আসবে। এখন দেখুন, অটিস্টিক শিশু বাড়ছে। এগুলো কিন্তু কীটনাশক থেকে শুরু হচ্ছে। একজন কৃষক সকালে কীটনাশক দেয়, বিকেলে এটি বাজারে নিয়ে আসছে।
একটি কীটনাশকযুক্ত সবজি বাজারে আসা পর্যন্ত অন্তত দুই দিন একে সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। কীটনাশকের যে প্রাণকোষ থাকে, একে নষ্ট করার পর বাজারে নিয়ে আসতে হবে। আমাদের কৃষকদের এ জ্ঞানটি নেই। কৃষকরা কী করে? সকালে কীটনাশক দিচ্ছে, বিকেলে বাজারে নিয়ে আসছে। আমরা কী করছি? বাজার থেকে খাবার কিনে সরাসরি খেয়ে ফেলছি। কীটনাশকবাহিত ঝুঁকি কিন্তু দিন দিন বাড়ছে।