হাড়ের ক্ষয়রোগে করণীয়
হাড়ের ক্ষয়রোগ বা অস্টিওপোরোসিস প্রধানত প্রবীণদের রোগ। হরমোনাল কিছু তারতম্যের কারণে প্রবীণ নারীর এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। তবে কিছু অসুখের কারণে অনেক সময় তরুণরাও এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। আজ বৃহস্পতিবার (০৫ মার্চ ২০১৫ তারিখ) এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ১৯৬৫তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মোতলেবুর রহমান।
প্রশ্ন : অস্টিওপোরোসিস রোগে কী ঘটে এবং কারা এতে বেশি আক্রান্ত হয়?
উত্তর : ডিসঅর্ডার ইন বোন মেট্রিকস। আমাদের ঘরে ছাদ যেমন থাকে তাকে বলে মেট্রিকস। মেইন স্কেলেটন। এই মেট্রিকসের অভাব হয়। হাড়ের ভঙ্গুরতা দেখা দেয়। এটাতে নারীরা বেশি আক্রান্ত হয়। বিশেষ করে মেনোপোজাল বয়সে। বয়স্ক নারীর যখন ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যায়, এর পরবর্তী সময়কে আমরা বলি মেনোপোজাল বয়স। এখানে শরীরে ফিমেল হরমোন কমে যাওয়ার ফলে আগে থেকে রোগী আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তবে পুরুষরাও আক্রান্ত হতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে একটা বয়সের পরে। আবার অনেক সময় কিছু কিছু রোগে তরুণরাও আক্রান্ত হয়ে যেতে পারেন। যেমন : কিছু বাতজনিত সমস্যা। কোমরের বাত, আবার অন্ত্রের প্রদাহের কারণে। এগুলো ব্যক্তি ঠিকমতো গ্রহণ করতে পারেন না। শরীরের যে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো থাকে যেমন ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, মিনারেলস এগুলো ভালো করে গ্রহণ করতে না পারলে অনেক আগেই হয়তো শরীরে অস্টিওপোরোসিস হয়ে যায়।
প্রশ্ন : একজন মানুষ যখন অস্টিওপোরোসিসে আক্রান্ত হয়, তখন সে হয়তো আগে থেকে বুঝতে পারে না। তখন কী ধরনের লক্ষণ তাঁর দেখা দিতে পারে এবং কী ধরনের ঝুঁকি তাঁর হতে পারে?
উত্তর : প্রধান ঝুঁকি হচ্ছে ফ্র্যাকচার। সাধারণ ব্যক্তি হয়তো পড়ে গেলে, অতটুকু চাপে তাঁর হাড় ভাঙবে না। কিন্তু এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির হাড় ভেঙে যাবে। যেমন শরীরে ব্যথা বা লো ব্যাক পেন ইত্যাদি। আর শরীরে যে জায়গায় অস্টিওপোরোসিস আছে, সেই জায়গাটিতে হয়তো ব্যথা অনুভূত হয়। আর অনেক সময় দেখা যায় বয়স্কদের উচ্চতা কমে যায়। শরীরে বিভিন্ন জায়গায় হয়তো অল্পতেই ভেঙে যাওয়ার লক্ষণ।
প্রশ্ন : আপনারা কী করে বোঝেন রোগীটি অস্টিওপোরোসিসে আক্রান্ত হয়েছে?
উত্তর : এ ক্ষেত্রে প্রধানতম কাজ হচ্ছে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যাওয়া। সাধারণত মানুষ শরীর ব্যথা হলেই মনে করে আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হয়েছে। কিন্তু তাঁর আর কোনো সমস্যা আছে কি না এটি জানতে অবশ্যই তাঁকে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। তখন চিকিৎসক বুঝে তাঁর চিকিৎসা করবেন।
সে ক্ষেত্রে একটি পরীক্ষা করা হয়। বিএমডি বলে একটি পরীক্ষা রয়েছে। বোন মিনারেল ডেনসিটি। হাড়ের ঘনত্ব কতটুকু এটি দেখার জন্য এই পরীক্ষা করা হয়।
প্রশ্ন : অনেকেই হয়তো শরীরে ব্যথা হলে ব্যথানাশক ওষুধ খান এবং হয়তো ক্যালসিয়ামের স্বল্পতা হয়েছে এটি ভেবে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খান। এঁদের সম্বন্ধে আপনার কী পরামর্শ রয়েছে?
উত্তর : আমরা সাধারণত সব সময় শারীরিক যেকোনো ব্যথা দুর্বলতা হলেই আমরা মনে করি আমাদের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি রয়েছে। অনেকের প্রবণতা আছে বহুদিন ধরেই ক্যালসিয়াম খাওয়ার। হাড় ক্ষয়রোগে আসলে শুধু ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেয়ে কোনো কাজ হবে না। তাই রোগ বুঝে চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে ক্যালসিয়াম খাবেন।
প্রশ্ন : অনেক সময় দেখা যায়, চিকিৎসক হয়তো কোনো একসময় লিখে দিয়েছিলেন ক্যালসিয়াম খাবেন। এরপর ব্যক্তি হয়তো বছরের পর বছর ধরে ক্যালসিয়াম খেয়ে যাচ্ছেন। এ জন্য তাঁর উপকার হচ্ছে কি না? উপকার যদি না হয়, তার জন্য যে অর্থ ব্যয় হচ্ছে সেই বিষয়ে কিছু বলুন।
উত্তর : এটা খুবই একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এতে শরীরে অনেক সময় ক্ষতি করতে পারে। শরীরে রেনাল স্টোন বেড়ে যায়। তাঁর কর্মক্ষমতাতেও ব্যাঘাত করতে পারে।
প্রশ্ন : বলছিলেন অস্টিওপোরোসিস মূলত বয়স্কদের রোগ। তার মধ্যেও বয়স্ক নারীরা যাঁরা মেনোপোজ অবস্থার পরে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এর প্রতিরোধের জন্য করণীয় কী বা এর কোনো হরমোন রিপ্লেসমেন্ট চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে কিনা?
উত্তর : যেসব নারীর অস্টিওপোরোসিস ছাড়াও মনোপোজাল কিছু লক্ষণ আছে যেমন হট ফ্লাস। গরম লাগে বেশি। হাত-পা জ্বালা পোড়া, বিরক্ত হয়ে যাওয়া। এসব ক্ষেত্রে দেখা যায় সারাক্ষণ মাথা হয়তো গরম হয়ে যাচ্ছে। তাঁদের আমরা বলি ঠাণ্ডা বেশি খাবে। আবার প্রয়োজনে তাঁরা হরমোনাল রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি নিতে পারেন। কারণ হরমোনের অসাম্যতার কারণে তাঁর অস্টিওপোরোসিস হচ্ছে। তখন হরমোনাল রিপ্লেসমেন্ট করা যেতে পারে। আবার আগে থেকে কিছু ডায়েট আছে এগুলো খেলেও এসব প্রতিরোধ করা যাবে। আর যাঁদের অস্টিওপোরোসিস হয়ে গেছে, তাঁদের আরো সাবধানে চলাফেরা করতে হবে; যেন পড়ে না যান বা আঘাতপ্রাপ্ত না হন।