মুখমণ্ডলের বিকৃতির চিকিৎসায় কী করবেন

বিভিন্ন কারণে মুখমণ্ডলে বিকৃতি হয়। তবে বর্তমানে এর উন্নত চিকিৎসা আমাদের দেশেই রয়েছে। আজ ১ জানুয়ারি, ২০১৬ এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২২৫২তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন বিশিষ্ট ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জন অধ্যাপক মতিউর রহমান মোল্লা।
urgentPhoto
প্রশ্ন : সাধারণত কী কী ধরনের ডিফরমেটি হয়? এর পেছনে কারণগুলো কী কী?
উত্তর : আমাদের দেশে অনেক জায়গায় দেখবেন বিভিন্নভাবে মুখের বিকৃতি নিয়ে চলাফেলা করছে। কারো ওপরের চোয়াল ছোট-বড়, নিচের চোয়াল বা চিবুক ছোট-বড়, নাকটা ঠিক জায়গায় নেই, চোখ ঠিক জায়গায় নেই। এর একটি কারণ হতে পারে জন্মগত। যেমন, আমরা ঠোঁটকাটা, তালুকাটা ইত্যাদি দেখি। এ ছাড়া কিছু বংশগতভাবে আসে। দেখা যায় নিচের চিবুকটা অনেক বেশি বড়। ওপরের চোয়ালটা ছোট। এ ছাড়া জন্ম নেওয়ার পর বিভিন্ন কারণে, যেমন আঘাতজনিত কারণে, অথবা রোগের কারণে মুখে বিকৃতি হতে পারে।
মুখমণ্ডলের চোয়ালের, বিশেষ করে হাড়ের যে কোনো বিকৃতিতে নকশা অনুযায়ী প্রতিস্থাপন করে মুখটি ঠিক করা সম্ভব। এটি বাংলাদেশেই সফলভাবে করা হচ্ছে। এর জন্য বিদেশে যাওয়ার খুব বেশি প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।
প্রশ্ন : আপনি বিভিন্ন কারণের কথা বলছিলেন। এসবের চিকিৎসার কোনো পার্থক্য রয়েছে কি?
উত্তর : কনজেনিটাল বা জন্মগত যেটি এটি একবারে ঠিক করা যাবে না। পর্যায়ক্রমে করতে হবে। ঠোঁট, তালু ইত্যাদি ঠিক করার বিষয় সেখানে জড়িত থাকবে। এর সঙ্গে চোয়াল বৃদ্ধি ঠিকমতো হচ্ছে কি না দেখতে হবে। যেখানে হাড় নেই, হাড় দিতে হবে। অথবা ঠিক করার পর প্রায়ই দেখা যায় ওপরের চোয়ালটা ঠিকমতো বড় হচ্ছে না। সেই ক্ষেত্রে কিছু অগ্রবর্তী সার্জারি করে মুখের গঠন ঠিক করে দিতে হয় বা নাক ঠিক করে দিতে হয়।
আবার ডাউন সিনড্রোমের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা করে নিয়ে ঠিক করা সম্ভব। মাথার হাড় থেকে শুরু করে মুখের সব হাড় ঠিক করা সম্ভব।
অন্যদিকে যদি একুয়্যার হয়ে থাকে, ধরেন চোয়ালের টিউমার হয়েছে, সেটিও ঠিক করা সম্ভব। শরীরের অন্য জায়গা থেকে একটি সুন্দর হাড় নিয়ে এসে লাগিয়ে দেওয়া যায়।
প্রশ্ন : অনেকে বলেন, জায়গাটিকে কেটে ফেললে আমি চলব কেমন করে? এটা নিয়েও অনেকে ভীত থাকেন। এ বিষয়ে আপনার পরামর্শ কী?
উত্তর : সার্জারি করে কেটে বাদ দিয়ে দিলে তো চলবে না, আগের মতো সামাজিক অবস্থায় ফিরে যেতে হবে। কাজ করতে হবে। সে জন্য এসথেটিক্যাভাবে এবং ফাংশনালভাবে ঠিক করতেই হবে। যেই সার্জারিই করা হোক না কেন। যেকোনো কারণে মুখণ্ডলের চোয়ালের বা হাড়ের যদি বিকৃতি হয়, ছোট হয়, বড় হয় সেগুলোকে আবার আগের জায়গায় নিয়ে আসা যায়। সার্জারির মাধ্যমে সরিয়ে আমরা এটাকে ঠিকঠাক করতে পারি।
প্রশ্ন : ফাংশনালি ঠিক করার কি কোনো দরকার রয়েছে। সেটি কী কারণে?
উত্তর : যদি তালু ঠিক না থাকে, তবে খেতে অসুবিধা হবে। কথা বলতে পারবে না। প্রায়ই দেখা যাবে ফুসফুসে সংক্রমণ হচ্ছে। আর যদি ওপরের চোয়াল থেকে নিচের চোয়ালটা বেশি বড় হয়ে গেল, সেই ক্ষেত্রে তার দাঁতের সঙ্গে দাঁতের কোনো মিল থাকবে না। সে খেতে পারবে না। কিছু কিছু বিশেষ শব্দ রয়েছে সেগুলো সে তৈরি করতে পারবে না। আরেকটি জিনিস তো আপনি বললেনই, এসব মানুষকে আমরা সামাজিকভাবে গ্রহণ করতে চাই না। এর কারণে তারা মানসিকভাবে স্পর্শকাতর থাকে। এর জন্য তারা কারো সঙ্গে মিশতে পারে না। অথচ এদের যদি পরামর্শ দেওয়া যায় যে তারা আসলে স্বাভাবিক, তাহলে তারা সবই করতে পারবে।
প্রশ্ন : ঘুমের অসুবিধার (স্লিপ এপনিয়া) সঙ্গে চোয়ালের বিকৃতির একটি সম্পর্ক রয়েছে। এ বিষয়ে আপনি কী পরামর্শ দেবেন?
উত্তর : স্লিপ এপনিয়া নিয়ে আমাদের দেশে এখন একটু হৈ চৈ হচ্ছে। শুতে গেলে নাকে প্রচণ্ড শব্দ হয়, ঘুমাতে পারে না। এটা জিহ্বার জন্য হতে পারে, নাকের জন্য হতে পারে, তালুর জন্য হতে পারে। আর বিশেষ আরেকটি কারণে হতে পারে। ম্যান্ডিবল বা নিচের চোয়াল যদি ছোট থাকে তাহলে সমস্যা হয়। আমরা জানি শুলেই জিহ্বার পেশিগুলো সামনের চোয়ালের দিকে আটকে থাকে। বাচ্চা যদি শুয়ে পড়ে, জিহ্বা যদি পেছনের দিকে চলে যায়। তখন শ্বাসপথে বাধা পড়ে। শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। তখন সে শুতে পারে না। এসব সমস্যা থাকলে সার্জারি করে ঠিক করতে হবে। আমরা জিহ্বার পেশি ঠিক করার জন্য নিচের চোয়ালকে সামনের দিকে এগিয়ে দিতে পারি। আসলে স্লিপ এপনিয়া যদি সব সময় ওষুধ দিয়েই চিকিৎসা করেন, সমাধান নাও পেতে পারেন। আসলে কারণ বুঝে এর চিকিৎসা করতে হবে।
প্রশ্ন : এসব সার্জারি করার সময় ফরেন বডি শরীরে ঢোকানো হচ্ছে। এতে অনেকে ভয় পান। এ বিষয়ে কিছু বলুন।
উত্তর : আমাদের দেশে এখন একদম টাইটেনিয়ামের মিনি প্লেট, মাইক্রো প্লেট পাওয়া যায়, যেটা শারীরিকভাবে স্থিতিশীল। এটি সারা জীবন দেহের মধ্যে ভালোভাবেই থাকে।
তবে যদি বাজে মানের ব্যবহার করে সেই ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে টাকা বেশি লাগলেও ভালো মানের জিনিস দিয়ে করিয়ে নেওয়া ভালো।