ছেলেদের মেয়েলি কণ্ঠস্বর পরিবর্তন করবে ফনোসার্জারি
নাক, কান, গলার বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য বর্তমানে এক ধরনের বিশেষ চিকিৎসা এসেছে, যাকে ফনোসার্জারি বলা হয়। সারা বিশ্বসহ আমাদের দেশেও এখন এই সার্জারি চালু হয়েছে। আজ ৭ জানুয়ারি, এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২২৫৯তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. শেখ হাসানুর রহমান। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাক, কান, গলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : ফনোসার্জারি আসলে কী? কোন ক্ষেত্রে এই সার্জারি করা হয়?
উত্তর : আসলে ফনোসার্জারি বিষয়টি নতুন। সারা বিশ্বে এবং আমাদের দেশেও এটি নতুন একটি বিষয়। তবুও উন্নত বিশ্বে এর ব্যাপ্তি অনেকটা এগিয়ে গেছে। আমাদের দেশেও খুব সম্প্রতি শুরু হয়েছে।
ফনোসার্জারি মানে হলো ভয়েজ বা কণ্ঠস্বরের সার্জারি। অনেকের বিভিন্ন রোগের কারণে কণ্ঠস্বর পরিবর্তন হয়ে যায়। অথবা শুরু থেকেই কণ্ঠস্বরটি অন্য রকমের। যেমন : পুরুষ মানুষের মেয়েলি কণ্ঠ।
নিশ্চয়ই কোনো পুরুষ চায় না যে আমার মেয়েলি কণ্ঠ থাকুক। আবার বিভিন্ন কারণে ভোকাল কর্ড পরিবর্তন হয়। ভোকাল কর্ডে প্যারালাইসিস হয়। সেগুলো ঠিক করার জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের সার্জারি করি। মূল কথা, কণ্ঠস্বরকে সংরক্ষণ করা এবং ঠিক করা। এটি ঠিক করার জন্য যে সার্জারি করা হয়, একে আমরা ফনোসার্জারি বলি।
প্রশ্ন : সাধারণত কোন কোন সমস্যা নিয়ে আপনাদের কাছে আসে সার্জারি করার জন্য?
উত্তর : পুরুষের মেয়েলি কণ্ঠের বেলায়, কিছু সার্জারির কারণে, ভাইরাল ইনফেকশন অথবা ট্রমার কারণে, কণ্ঠস্বর ফ্যাসফ্যাসে হয়—এসব ক্ষেত্রে।
প্রশ্ন : আপনারা কীভাবে রোগী নির্ধারণ করেন এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ফোনোসার্জারি করতে পরামর্শ দেন?
উত্তর : কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটি করা খুব জরুরি। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগীর চাহিদা অনুসারে করা হয়। যেমন : পুরুষের মেয়েলি গলা, এখানে রোগীই চায় সার্জারি করতে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে সার্জারি করা অত্যন্ত জরুরি রোগীর ক্ষেত্রে। যেমন : ভোকাল কর্ড প্যারালাইসিস যখন হয়, তখন রোগী কথাও বলতে পারে না এবং খাওয়ার সময় তাঁর কণ্ঠনালিতে খাদ্য চলে যায়। এতে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। নিউমোনিয়া এবং অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। রোগীর জীবনমানের অত্যন্ত অবনতি ঘটতে পারে। সে ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার করা জরুরি।
কণ্ঠস্বর অনেক সময় পেশাগত কারণেও দরকার। যেমন : একজন শিক্ষক। তাঁর কণ্ঠস্বর যদি প্যারালাইসিস হয়ে যায়, তিনি তো শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে পারবেন না। আবার রাজনীতিবিদ, তাঁর জন্য কণ্ঠ অত্যন্ত জরুরি। জনলেনদেন (পাবলিক ডিলিংস) যাঁরা করেন, তাঁদের জন্য কণ্ঠস্বর অত্যন্ত জরুরি। একজন মানুষ যখন কথা বলতে পারবে না, তখন তো তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ হবে না। অনেক সময় ট্রমার কারণে অনেকের কণ্ঠনালি সরু হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে সে শ্বাসও নিতে পারে না। কথাও বলতে পারে না। আমরা ট্রাকিউস্টোমি নামক একটি অস্ত্রোপচার করে তাঁকে অস্থায়ীভাবে শ্বাস দিয়ে থাকি।
সেই রোগীকে লেজারের মাধ্যমে সরু হয়ে যাওয়া জায়গাটাকে প্রশস্ত করে একটি টিউব দিয়ে থাকি, কিছুদিনের জন্য। পরে টিউবটি আমরা খুলে ফেলি। এই টিউব নিয়েও সে স্বাভাবিকভাবে পড়াশোনা-কাজকর্ম করতে পারে।
প্রশ্ন : কী ধরনের পদ্ধতি আপনারা এই চিকিৎসার সময় ব্যবহার করেন?
উত্তর : এখানে লেজার, মাইক্রোস্কোপ দিয়ে সার্জারি করা হয়। কণ্ঠনালির মধ্যে কিছু পরিবর্তন করে আমরা এগুলো ঠিক করে থাকি।
প্রশ্ন : পরবর্তীকালে এই জিনিস ঠিক রাখার জন্য ফলোআপের কোনো প্রয়োজন হয় কি?
উত্তর : আমাদের নিয়মিত ফলোআপের জন্য ফলোআপ ক্লিনিক রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। বেসরকারিভাবে যেখানে কাজ করি, সেখানেও ফলোআপের ব্যবস্থা রয়েছে। কখনো কখনো সমস্যার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। তাই আমরা যাতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারি, সে জন্য ফলোআপ করা প্রয়োজন হয়।