প্রবীণদের শরীরে ব্যথা-বেদনা
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2016/01/24/photo-1453613708.jpg)
বার্ধক্য কোনো রোগ নয়। এটা জীবনের চলমান একটি প্রক্রিয়া। বর্তমানে বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। এতে বয়স্ক ব্যক্তি বা প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যাও বেড়েছে। আর এই প্রবীণ জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগই বয়সজনিত হাড়ের ক্ষয়রোগে আক্রান্ত।
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যেমন চুল পেকে যায়, তেমনি হাড়ের ক্ষয়ও হতে থাকে। বিশেষ করে মহিলাদের মেনোপেজের পরে হাড়ের ক্ষয় দ্রুত হতে থাকে। এই হাড়ের ক্ষয় ছাড়াও জয়েন্ট বা অস্থি-সন্ধির অভ্যন্তরীণ উপাদান সাইনোভিয়াল ফ্লুইডও কমে। এতে শরীরের জয়েন্টগুলোতে ব্যথা-বেদনা দেখা দেয়। বিশেষ করে মেরুদণ্ড, ঘাড়, কোমর, হাঁটু, কাঁধ ইত্যাদিতে বেশি ব্যথা দেখা যায়। এগুলো সাধারণত স্পনডাইলোসিস, অষ্টিওআর্থ্রাইটিস, অষ্টিওপরোসিস ইত্যাদি রোগের কারণে হয়ে থাকে।
স্পনডাইলোসিস
এটি মেরুদণ্ডের হাড় বা কশেরুকার ক্ষয়জনিত রোগ। আমাদের মেরুদণ্ড দুটি অংশে সবচেয়ে বেশি নড়াচড়া হয়। ঘাড় বা সারভাইক্যাল স্পাইন ও কোমর বা লাম্বার স্পাইন। যেহেতু সারভাইক্যাল স্পাইন ও লাম্বার স্পাইনে মুভমেন্ট বা নড়াচড়া বেশি হয়। এতে মেরুদণ্ডের এই অংশে হাড়ের ক্ষয়ও বেশি হয়ে থাকে। ঘাড়ের মেরুদণ্ডের এই ক্ষয় হয়ে যাওয়াকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস বলা হয়। এ ছাড়া কোমরের মেরুদণ্ডের এই ক্ষয় হয়ে যাওয়াকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় লাম্বার স্পনডাইলোসিস বলা হয়।
অষ্টিওআর্থ্রাইটিস
‘অষ্টিওআথ্রাইটিস’এটি একটি জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধির ক্ষয়জনিত রোগ। আমাদের অস্থিসন্ধি একধরনের নরম কাভার দিয়ে আবৃত থাকে। একে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় কারটিলেজ বলে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহারের কারণে কারটিলেজগুলো ক্ষয় হতে থাকে। অস্থিসন্ধির মার্জিন অমসৃণ হয়ে যায়। অস্থিসন্ধির ফাঁক কমে যায়। এতে অস্থিসন্ধি নড়াচড়া করার সময় ব্যথা অনুভূত হয়।
অষ্টিওআর্থ্রাইটিস বিভিন্ন অস্থিসন্ধিতে হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে-
-কবজি বা রিস্ট জয়েন্ট
-হিপ জয়েন্ট
-হাঁটু বা নি জয়েন্ট
-সারভাইক্যাল স্পাইন
-লাম্বার স্পাইন ইত্যাদি
হাঁটু আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ওজন বহনকারী জয়েন্ট। তাই হাঁটুতে অস্টিওআরথ্রাইটিস বেশি হয়। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, পঞ্চাশের বেশি বয়সের অধিকাংশ মানুষ হাঁটুর ব্যথায় ভুগে থাকেন। এর কারণ হলো অস্টিওআরথ্রাইটিস।
অষ্টিওপোরোসিস
অষ্টিওপোরোসিস বা অস্থি ক্ষয় বা হাড়ের ক্ষয় রোগে হাড়ের ঘনত্ব নির্দিষ্ট মাত্রায় কমে যায়। এতে হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। ২০ থেকে ৩৫ বছর হাড় তার পূর্ণতা লাভ করে। তারপর ৪০ বছরের পর থেকে হাড় তার ক্যালসিয়াম ও ফসফেট হারাতে থাকে। এতে হাড়ের পরিবর্তন হয়, হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। ৫০ বছর বয়সে ১৫ ভাগ এবং ৭০-৮০ বছর বয়সে ৩০ ভাগ নারীর হিপ বোন বা নিতম্বের হাড় ভেঙে যায়।
ব্যথার কারণে রোগীরা ব্যক্তিগত কাজকর্মগুলোও করতে পারে না। যেমন : বসা থেকে উঠতে পারে না, নিচে বসতে পারে না, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে পারেন না, টয়লেটে বসতে পারেন না ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়।
ওষুধ দিয়ে এই সমস্যাগুলোর চিকিৎসা করা যায়। যেমন : এনএসআইডি, এনডায়েটরি সাপ্লিমেন্ট- গ্লুকোসামিন হাইডোক্লোরাইড, কন্ড্রোটিন সালফেট, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি।
ওষুধের পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি বা থেরাপিউটিক ব্যায়াম করা যেতে পারে। এটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীনভাবে সমস্যাগুলো কমিয়ে এনে রোগীকে স্বাভাবিক জীবনযাপনের উপযোগী করে তুলবে। এভাবে করলে প্রবীণ বয়সের ব্যথাগুলো থেকে অনেকটা রেহাই পাওয়া যাবে।
লেখক : চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালটেন্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল