ডায়াবেটিস হলে হতে পারে যক্ষ্মাও
আমাদের দেশের স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে ডায়াবেটিস ও যক্ষ্মা অন্যতম। যেহেতু যক্ষ্মা একটি জীবাণুঘটিত রোগ, তাই যেসব কারণে শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়, ওই সব রোগীর যক্ষ্মা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। আমাদের দেশে এখনো এই রোগের ব্যাপকতা এত বেশি নয়। তবে একটি বিশাল জনগোষ্ঠী ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। আর শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ।
ডায়াবেটিস রোগী যক্ষ্মায় আক্রান্ত হলে অনেক ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় করতে যথেষ্ট দেরি হয়ে যায়। কারণ ডায়াবেটিস রোগীদের যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ সাধারণ যক্ষ্মা রোগীদের মতো নাও হতে পারে। যদিও যক্ষ্মা রোগে প্রধানত ফুসফুস আক্রান্ত হয়ে থাকে, তবে ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে ফুসফুসবহির্ভূত যক্ষ্মা আক্রান্তের হার অনেক বেশি। যদি কোনো ডায়াবেটিস রোগী দুই সপ্তাহের বেশি কাশিতে ভোগেন এবং এর সঙ্গে জ্বর থাকে, জ্বর নাও থাকতে পারে, বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের পরও অবস্থার উন্নতি না হয়, তখন যক্ষ্মারোগের বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে। বিশেষ করে ফুসফুসের যক্ষ্মার ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগীদের অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বনের দরকার হয়।
সঠিক নিয়মে পূর্ণ মাত্রায় ওষুধ সেবন করলে ডায়াবেটিস রোগীদের বেলায়ও যক্ষ্মারোগের ওষুধ সমানভাবে কাজ করে। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ খুবই জরুরি। কারণ রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি হলে যক্ষ্মা বিভিন্ন অঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং যক্ষ্মারোগের ওষুধ সঠিকভাবে কাজ নাও করতে পারে। সাধারণত বেশির ভাগ যক্ষ্মা রোগীর ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য ইনসুলিন প্রয়োজন হয়।
ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যার মাধ্যমে শরীরের বেশির ভাগ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার যক্ষ্মারোগও অনেক সময় শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসার সময় অতিরিক্ত সাবধানতা প্রয়োজন। কোনো ডায়াবেটিস রোগীর যক্ষ্মা হলে রোগের ব্যাপকতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে তাই দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং কার্যকর চিকিৎসা প্রয়োজন। ওষুধের মাধ্যমে ছয় থেকে ১২ মাস চিকিৎসা করা প্রয়োজন। তবে এ ক্ষেত্রেও ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসার পূর্বশর্ত।
বিভিন্ন কারণে যেমন কায়িক পরিশ্রম কম করা, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, বংশগত এবং অন্যান্য কারণে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে যক্ষ্মা, যেটি একটি জীবাণুঘটিত রোগ এবং প্রধানত দরিদ্র শ্রেণি বেশি আক্রান্ত হয়। এক পরিসংখ্যানে দেখা যা, প্রতিবছর প্রায় তিন লাখ লোক যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয় এবং তার মধ্যে প্রায় ৭০ হাজার মৃত্যুবরণ করে। যথেষ্ট চেষ্টা সত্ত্বেও যক্ষ্মারোগ এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। বরং ইদানীংকালে বিশ্বব্যাপী যক্ষ্মারোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে। তাই ডায়াবেটিস এবং যক্ষ্মারোগের ক্ষেত্রে কার্যকর চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলা প্রয়োজন।
লেখক : বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ