সাইনোসাইটিসের চিকিৎসায় এন্ডোনেজাল এন্ডোস্কোপিক সার্জারি
এন্ডোনেজাল এন্ডোস্কোপিক সার্জারি নাক কান গলা রোগের একটি আধুনিক সার্জারি।এই বিশ্বমানের সার্জারিটি কম খরচে এখন বাংলাদেশে করা হচ্ছে।
আজ ৩০ জানুয়ারি এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২২৮২তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. শেখ হাসানুর রহমান। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাক, কান ও গলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : এন্ডোনেজাল এন্ডোস্কোপিক সার্জারি আসলে কী?
উত্তর : এন্ডোনেজাল এন্ডোস্কোপিক সার্জারি আধুনিক একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। যার মাধ্যমে আমরা নাকের ভেতরের, সাইনাসের, চোখের এমনকি স্কালবেজের (মস্তিস্কের নিচের হাড়ের অংশ) অত্যন্ত জটিল কিছু অস্ত্রোপচার অতি সহজে করতে পারি। এই অস্ত্রোপচারে সময় কম লাগে। রোগীর অনেক ধরনের জটিলতা এড়িয়ে যেতে পারি এই সার্জারির মাধ্যমে।
প্রশ্ন : সাধারণত এই সার্জারিগুলো কোন কোন ক্ষেত্রে করার পরামর্শ আপনারা দেন?
উত্তর : যেমন ধরেন সাইনোসাইটিস। আমরা আগে দেখতাম সাইনাস এন্ট্রাল ওয়াশ করা হচ্ছে। রোগীর অনেক কষ্ট হচ্ছে। আবার সমস্যা হচ্ছে। সেটা না করে যদি একটি স্বাভাবিক পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা অস্ত্রোপচার করি তাহলে ভালো হয়। একে আমরা ফাংশনাল এন্ডোস্কোপিক সাইনাস সার্জারি বলি। সাইনাসের মুখকে আমরা খুলে দেই। যাতে আবার কখনো জমে যেতে না পারে।
আবার নাকের ভেতরে অ্যান্ড্রিওফাইব্রোমা হতো। এটি বড় ধরনের একটি টিউমার, রক্তনালির টিউমার। এটি নাক কান গলার চিকিৎসকদের জন্য অত্যন্ত জটিল একটি পদ্ধতি ছিল। আজকাল আমরা এই সার্জারির মাধ্যমে টেলিভিশন পর্দায় দেখে দেখে নিখুঁতভাবে করতে পারি। এতে কম রক্তক্ষরণ হয়।
প্রশ্ন : আপনি এখন কী নিয়ে কাজ করছেন?
উত্তর : আমি মূলত এন্ডোস্কোপিক স্কালবেজের সার্জারি করছি। মস্তিস্কের ভেতরে একটি পানি থাকে, আমরা একে সিএসএফ বলি। সিএসএফ নাক দিয়ে পড়তে থাকে। এতে মস্তিস্কের জটিল কিছু সমস্যা হতে পারে। এর কারণে রোগী মারাও যেতে পারে। এন্ডোস্কোপির মাধ্যমে অতি সহজে সেই পানি পড়ার ছিদ্রটা ব্ন্ধ করে দিতে পারি। এতে অনেক জটিলতা এড়ানো যায়। এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে এই অস্ত্রোপচার হয়ে যায়।
প্রশ্ন : এই যে আধুনিক মানের চিকিৎসাগুলোর কথা আপনি বললেন, কোথায় গেলে এটি পাওয়া যাবে?
উত্তর : এসব সার্জারিগুলো অনেক হাসপাতালেই পাওয়া যায়। বিশেষ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, শহীদ সোহরাওয়ার্দি হাসপাতাল, জাতীয় ইএনটি ইনস্টিটিউট এগুলোতে পাওয়া যায়। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে যেহেতু অত্যাধুনিক যন্ত্র রয়েছে, সেখানে এই অস্ত্রোপচারগুলো বেশি হচ্ছে।
প্রশ্ন : ফলোআপে কতদিন পর রোগীদের আসতে বলেন?
উত্তর : ফলোআপের বেলায় আমরা প্রথমদিকে রোগীকে ঘন ঘন আসতে বলি। দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর পর। পরের দিকে যখন রোগী ভালো থাকে, তখন দুই থেকে ছয় মাস পর আসতে বলি।
প্রশ্ন : কোনো পরামর্শ কী থাকে রোগীদের জন্য?
উত্তর : এখানে রোগীদের বলা হয় তারা যেন কিছুদিন ভারী কোনো কাজ না করে। কোনো ওজন না তোলে। কোষ্ঠকাঠিন্য যেন না হয়। হাঁচি কাশি যেন বেশি না হয়। তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চলতে বলি।
প্রশ্ন : সার্জারিসহ হাসপাতালে থাকার সময়টা কতদিন হয়?
উত্তর : আনুমানিক ১০ থেকে ১২ দিন হাসপাতালে থাকতে হতে পারে।
প্রশ্ন : এটি করতে খরচ কেমন লাগে?
উত্তর : অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশের খরচ অনেক কম। এসব অস্ত্রোপচার করার জন্য আগে অনেক রোগী বিদেশে চলে যেত। আজকাল যাওয়ার প্রয়োজন হয় না।