জরায়ুমুখের ক্যানসারে ভ্যাকসিন দেওয়ার সময় কখন
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2016/02/09/photo-1455015093.jpg)
জরায়ুমুখের ক্যানসার বেশ প্রচলিত একটি ক্যানসার। তবে ক্যানসার প্রতিরোধে ভ্যাকসিন বা টিকা রয়েছে। এটি দিলে খুব ভালোভাবে জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব।
আজ ৯ জানুয়ারি এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২২৯২তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. লুৎফা বেগম লিপি। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের গাইনি এবং অবস বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : জরায়ুমুখের ক্যানসার বলতে আমরা কী বুঝি?
উত্তর : নারীদের যত ধরনের ক্যানসার হয়ে থাকে, এর মধ্যে জরায়ুমুখের ক্যানসার একটি অন্যতম ক্যানসার। মাতৃমৃত্যুর অন্যতম কারণ হলো জরায়ুমুখের ক্যানসার। জরায়ুর দুটি অংশ থাকে। একটি জরায়ু, আরেকটি হলো জরায়ুর মুখ, যেটা বাইরের দিকে যোনিপথের মধ্যে থাকে। এই মুখের মধ্যে ক্যানসার হয়ে থাকে। একেই বলা হয় জরায়ুমুখের ক্যানসার।
প্রশ্ন : কীভাবে বোঝা যাবে জরায়ুমুখের ক্যানসার হয়েছে?urgentPhoto
উত্তর : ক্যানসার হওয়ার আগে একটি পর্যায় থাকে, যাকে আমরা বলি প্রি ক্যানসারস স্টেজ। ওই পর্যায়ে তেমন কোনো লক্ষণ থাকে না। ক্যানসার হয়ে গেলে দেখা যায় দুর্গন্ধযুক্ত সাদা স্রাব হচ্ছে, অনেক সময় ভাতের মাড়ের মতো বা চাল ধোয়া পানির মতো স্রাব হয়। অনিয়মিত রক্তপাত হতে পারে। সহবাসের পরে রক্ত যায়। এধরনের সমস্যা নিয়ে রোগীরা সাধারণত আসে। যখন আরো অগ্রবর্তী পর্যায়ে চলে যায়, তখন দেখা যায় যে, তলপেটে ব্যথা, লো ব্যাক পেইন- এ ধরনের সমস্যা হচ্ছে।
আরো যখন অগ্রবর্তী পর্যায়ে চলে যায়, মূত্রথলি, মল ত্যাগের রাস্তায়ও সমস্যা দেখা যায়।
প্রশ্ন : জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধের কী কোনো ব্যবস্থা রয়েছে?
উত্তর : প্রতিরোধের সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে। যদি কারো প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে, তাদের আমরা অস্ত্রোপচার করে থাকি। অস্ত্রোপচারের পরও রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়।
অন্যান্য ক্যানসার যখন ধরা পড়ে, তখন ক্যানসার অবস্থায় ধরা পড়ে। তবে জরায়ুমুখের ক্যানসারের বেলায় ক্যানসার হওয়ার ১০ বছর আগেই আমরা ধরতে পারি। এ জন্য বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা রয়েছে। যাকে আমরা স্ক্রিনিং টেস্ট বলি।
ধরুন একজন সুস্থ নারী, তার ৩০ বছর হয়ে গেলেই সে আসবে আমাদের কাছে, স্ক্রিনিং টেস্ট করার জন্য। তখনই আমরা ধরে ফেলতে পারি তার নয় থেকে ১০ বছর পরে ক্যানসার হওয়ার আদৌ আশঙ্কা আছে কি না। যদি আশঙ্কা থাকে, তখনই আমরা তাকে উপযুক্ত চিকিৎসা দিয়ে দিই।
প্রশ্ন : স্ক্রিনিংয়ে বিষয়টি আমরা কীভাবে করতে পারি?
উত্তর : আমাদের দেশে এখন একটি জাতীয় অনুষ্ঠান হয়। যেটা অন্যান্য দেশে হয়তো বা হয় না। আমাদের দেশে এটি বিনামূল্যে হয়। আমরা মেয়েদের ভায়া টেস্ট করে থাকি।
আমরা খাবারের মধ্যে ভিনেগার ব্যবহার করি। এ রকম একটি ভিনেগার এক শতাংশ আমরা জরায়ুমুখের মধ্যে এক মিনিট রাখি। এক মিনিট রাখার পর দেখা যায় তার কিছু পরিবর্তন হয়। এটি দেখে আমরা বুঝতে পারি, এটি কি ক্যানসারের পর্যায়ে আছে কি না? যদি দেখি কোনো লক্ষণ নেই, তাহলে আমরা তাকে প্রতিতিন বছর পরপর এই পরীক্ষা করতে বলি।
এ ছাড়া টাকা দিয়ে করতে পারে। যেমন : প্যাপসমেয়ার পরীক্ষা রয়েছে। কলকোস্কোপি পরীক্ষা রয়েছে। যে ভাইরাস দিয়ে এই রোগটি হয়ে থাকে, সেটি হলো হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস। এই ভাইরাসটি আমরা শনাক্ত করতে পারি। এইচপিভি ডিএনএ পরীক্ষা বলে একে। যদিও এটি একটু ব্যয়বহুল। তবে তারপরও এটি করে আমরা আগে থেকে জানতে পারি জরায়ুমুখে কতটুকু এই ভাইরাস আছে বা আদৌ এখান থেকে ক্যানসার হবে কি না?
প্রশ্ন : জরায়ুমুখের ক্যানসারের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনেশনের কথা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। এর সম্বন্ধে কিছু বলুন।
উত্তর : আসলে যেকোনো রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে কতগুলো ধাপ রয়েছে। প্রাইমারি প্রিভেনশন, সেকেন্ডারি প্রিভেনশন, টারসিয়ারি প্রিভেনশন। কিছু ঝুঁকির বিষয় রয়েছে। যেমন : বহুবিবাহ, যৌন সংক্রামক রোগ, ধূমপান। আমরা ভ্যাকসিনেশন দিয়ে রোগ প্রতিরোধ করতে পারি।
ভ্যাকসিন দিলে শরীরে আগে থেকে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হয়। এটি আসলে টিকা। যেমন ছোটবেলায় বাচ্চাদের আমরা টিকা দিই, তেমন।
প্রশ্ন : বাংলাদেশে কি ভ্যাকসিন সচরাচর পাওয়া যায়?
উত্তর : জরায়ুমুখের ক্যানসারের জন্য দায়ী এইচপিভি ভাইরাসের অনেকগুলো প্রকার রয়েছে। এর মধ্যে নয়টি রয়েছে যেগুলো ক্যানসার তৈরি করবেই। এই নয়টির মধ্যে দুটির বিরুদ্ধে সারভারিক্স নামে ভাইভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন রয়েছে। আরেকটি রয়েছে কোয়াড্রিভেলেন্ট ভ্যাকসিন। ছয়, ১১, ১৬, ১৮ এই চারটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর এটি।
সারভারিক্সের দাম একটু কম। এটি দুই হাজার থেকে দুই হাজার ২০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। আর কোয়াড্রিভেলেন্টের দাম একটু বেশি। চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত।
প্রশ্ন : এই ভ্যাকসিনগুলো দেওয়ার জন্য কী করতে হয়?
উত্তর : আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজে কাজ করি। এখানকার সন্ধানীতে সারভারিক্স পাওয়া যায়। প্রতিটিরই হলো তিনটি ডোজ। একটি প্রথমে দেব। এক থেকে দুই মাস পরে আরেকটি দেব। ছয় মাস পরে আরেকটি দেব।
প্রশ্ন : ভ্যাকসিনেশনের সময়টি কেমন হবে?
উত্তর : সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলে বিবাহিত জীবন বা যৌনজীবন শুরুর আগে। আমরা বলি, ৯ থেকে ১৩ হলো উপযুক্ত সময়।
৯ থেকে ১৩ বছর বয়সের একটি মেয়েকে যদি ভ্যাকসিন দেওয়া হয়, তাহলে তাকে দুটো ডোজ দিতে হবে। তখন একটি ডোজের দাম তার এমনিতেই কমে যাচ্ছে। তারপরও সে দিতে পারবে; বিবাহিত মেয়েরা দিতে পারবে। কারণ, ভ্যাকসিন দিলে জরায়ুমুখ ক্যানসারের আশঙ্কাও কমে আসবে।
প্রশ্ন : নির্দিষ্ট সময়ের পরও কী ভ্যাকসিন দেওয়া যাবে? না কি কোনো বাধা রয়েছে?
উত্তর : না, কোনো বাধা নেই। যেকোনো সময়েই দিতে পারে। স্ক্রিনিং পরীক্ষার জন্য আমরা একটি সময় বেঁধে দিই। মেনোপজের আগ পর্যন্ত সে স্ক্রিনিং করবে। যদি ৫০ বছর হয়ে যায়, তার আর ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
প্রশ্ন : আপনারা জনসচেতনতা বাড়াতে কী করছেন?
উত্তর : জানুয়ারি মাস ছিল জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধে একটি সচেতনতা মাস। আমরা কিন্তু ১৭ থেকে ২৪ জানুয়ারি একটি সপ্তাহ পালন করেছি জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধের জন্য। এ জন্য আমরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে একটি র্যালি বের করেছি। যার স্লোগান ছিল ‘আর নয় জরায়ুমুখের ক্যানসার’। এ রকমভাবে বিএসএমএমইউ থেকে, জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউট থেকে বিভিন্ন ধরনের র্যালি বের করে।