ডায়াবেটিস রোগীদের চর্মরোগ

ডায়াবেটিস রোগে অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি কখনো কখনো ত্বকেও সমস্যা হয়। এ সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। নয়তো রোগ জটিল হয়ে চিকিৎসা কঠিন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
আজ শুক্রবার (২০ মার্চ-২০১৫) এনটিভির ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ১৯৮০ পর্বে এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বারডেম হাসপাতালের চর্মরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. রেজা বিন জায়েদ।
প্রশ্ন : ডায়াবেটিস রোগে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়। ডায়াবেটিসে কী কী ধরনের চামড়ার সমস্যা হয়, সেটি যদি আমাদের একটু বলেন?
উত্তর : ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ, যার প্রভাব থেকে আমাদের শরীরের কোনো অংশই বাদ থাকে না। ডায়াবেটিস হলো রক্তে শর্করার আধিক্য। অর্থাৎ এ রোগে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। আমাদের ত্বকে রক্তের যে প্রবাহ আছে, সেখানেও শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। তখন ত্বক আস্তে আস্তে জটিলতায় ভুগতে শুরু করে। সব জটিলতার মতোই ডায়াবেটিসের জটিলতাও সময় নিয়ে ধীরে ধীরে ঠিক হয়। তাই ত্বকের ক্ষেত্রেও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন : ডায়াবেটিস রোগীরা চোখ, কিডনি বা অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে যতটা ভাবেন, অতটা হয়তো ত্বক নিয়ে ভাবেন না। কিন্তু ত্বকেও বেশ সমস্যা হয় এর ফলে। কোন কোন বিষয় আসলে এ ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে বলে মনে করেন?
উত্তর : আসলে অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মধ্যে যে ধরনের জটিলতা তৈরি হয়, ত্বকেও একই রকম জটিলতা তৈরি হয়। যে কারো ক্ষেত্রেই ত্বকে প্রভাব পড়তে পরে। তবে যে নিয়ন্ত্রণ কম করে, তার জটিলতা তত তাড়াতাড়ি হতে পারে।
প্রশ্ন : কী কী ধরনের জটিলতা দেখা যায়?
উত্তর : আমাদের ত্বক বাইরের সব ধরনের জীবাণুর সংক্রমণের জন্য সব সময় প্রতিরক্ষা দেয়। রক্তে যদি শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়, তার প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এই ক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে সহজে সংক্রমণ (ইনফেকশন) হতে পারে। এটা আরো দ্রুত হয় যদি ত্বকে কোনো কারণে চর্মরোগ দেখা দেয়। এই চর্মরোগের ওপরে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়, তার ফলে আরো জটিলতা দেখা দেয়। সহজে এই ক্ষতগুলো তখন সারতে চায় না।
প্রশ্ন : যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তবে ত্বকের ওপরে বিভিন্ন রোগ হওয়ার প্রকোপ কত শতাংশ বেড়ে যাবে এবং জটিলতা হিসেবে আসলে আর কী কী বিষয় আসবে?
উত্তর: ডায়াবেটিস যদি নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তাহলে প্রথম ত্বক যে সমস্যায় ভোগে সেটা হলো শুষ্কতা। যাদের ডায়াবেটিস নেই, তাদের তুলনায় যাদের আছে তাদের ত্বক সব সময় একটু শুষ্ক থাকে। যখনই ত্বক শুষ্ক হয়, তখনই পুরো শরীরে চুলকানি শুরু হয়। চুলকানোর ফলে ত্বকের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হয়। এ থেকে ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে। আবার ডায়াবেটিসের প্রভাবে সরাসরি ত্বকে কিছু উপসর্গ বা রোগ দেখা যায়।
প্রশ্ন : কীভাবে সেটি প্রকাশ পাবে?
উত্তর : হঠাৎ করে ত্বকে একটা ফুসকুরির মতো উঠে তার পরে ওখানে ক্ষত হয়। ক্ষত থেকে এক ধরনের হলুদ সেমিসলিড পদার্থ বের হয়। এটাকে নেক্রোবায়াসিস লিপারটিকা বলে। যাঁরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, এই রোগের জন্য তাঁরাই ঝুঁকিপূর্ণ থাকে। আবার আরেকটি রোগ আছে, কোনো সময় ফোস্কা নিয়ে ওঠে। একে বুলাস ডায়াবেটিক ওরাম বলে। এটা মূলত হাত-পায়ের শেষ অংশে হয়ে থাকে। ডায়াবেটিসের ফলে রক্তের নালি সরু হয়ে যায়। এ সমস্যা সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষেত্রেই হয়। এই সরু হয়ে যাওয়ার ফলে রক্তের যে পুষ্টি পাওয়ার কথা, সেটি পাওয়া যায় না। ত্বকের ক্ষেত্রেও সেটি হয়। ত্বক তখন ভুগতে থাকে বিভিন্ন রকম রোগে।
প্রশ্ন : এ জাতীয় সমস্যা নিয়ে রোগীরা এলে তখন কী কী পরামর্শ দেন এবং কীভাবে চিকিৎসা দেন?
উত্তর : মূল কথা হলো, যদি প্রথমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তখন নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। আর রোগীরা যেসব উপসর্গ নিয়ে আসে, সেগুলো বুঝে চিকিৎসা করা হয়। কিন্তু এটা শুধু প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়লে। তাই যত তাড়াতাড়ি পারা যায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। পায়ে বা হাতের ত্বকে রোগ-সংক্রান্ত চিহ্ন যখনই পাচ্ছেন, তখনই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অনেক সময় দেখা গেছে, গ্যাংরিনের মতো অবস্থায় পড়লে পা কেটে ফেলতে হয়।
প্রশ্ন : ডায়াবেটিস রোগীদের ত্বকের যত্ন কীভাবে নেওয়া উচিত?
উত্তর : নিয়মিত নিজের ত্বকের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। অনেকে খেয়াল রাখেন না। এটা বিশেষভাবে পায়ের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। পায়ের তলায় অনেক সময় ঘা সৃষ্টি হয়, তারা হয়তো টের পায় না। ডায়াবেটিস রোগে ত্বকের অনুভূতিও কমে যায়। যার ফলে ক্ষত সৃষ্টি হলে ব্যথা হওয়ার বোধটা পাওয়া যায় না। এই ক্ষত ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। তাই পায়ে কোনো ক্ষত সৃষ্টি হচ্ছে কি না, তা নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে। এ জাতীয় উপসর্গ হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।