ঘুমের সমস্যার কারণ কী?
স্লিপ ডিসঅর্ডার বা ঘুমের সমস্যা অনেকের ক্ষেত্রেই হতে দেখা যায়। এই সমস্যা হলে দেহে বিভিন্ন রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায় এবং কাজের গতি কমে যায়। এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ১৯৮৯তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন নাক কান গলা রোগ বিশেষজ্ঞ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাক কান গলা রোগ বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান তরফদার।
প্রশ্ন : ঘুমের সমস্যা নানা কারণে হয়। এটি যেমন মেডিক্যাল সমস্যা, তেমনি একই সঙ্গে নাক কান গলার সমস্যাও এটি। একজন মানুষ এই স্লিপ ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত হয় কেন? এবং এর সঙ্গে নাক কান গলার কী সম্পর্ক?
উত্তর : প্রশান্তির ঘুম মানে স্বাস্থ্যকর জীবন। আপনার যদি রাতে ভালো ঘুম না হয়, তাহলে পরের দিনটা ভালো যাবে না। কাজে মনোযোগ থাকবে না। কোনো উৎসাহ থাকবে না। সারা দিন ঝিমঝিম ভাব থাকবে। কর্মক্ষমতা কমে যাবে। আমরা ঘুমের সমস্যার বিষয়টিকে এভাবে ভাগ করি, অনিদ্রা, স্নোরিং বা নাক ডাকা এবং স্লিপ এপনিয়া। হয়তো ব্যক্তির শারীরিক সব কিছুই ঠিক আছে কিন্তু ঘুম হচ্ছে না; নাক ডাকছে। কখনো কখনো নাক ডাকতে ডাকতে বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যাচ্ছে। এই সমস্যাগুলোর ওপর ভিত্তি করে আমরা স্লিপ ডিসঅর্ডার বা ঘুমের সমস্যাকে ভাগ করি। সমস্যাগুলো অনেক সময় ইএনটি বা নাক কান গলার সঙ্গে সম্পৃক্ত।
প্রশ্ন : গলা ও নাকের কী ধরনের সমস্যা বা কী পরিবর্তন হলে একজন লোকের স্লিপ এপনিয়া হয়?
উত্তর : আসলে আমরা একটা মাত্রা (স্কেল) নির্ধারণ করে নিই। যে ব্যক্তি নাক ডাকছে, সে হয়তো জানে না সে নাক ডাকছে। তার সঙ্গে যে ঘুমাচ্ছে, স্বামী বা স্ত্রী তারা হয়তো এসে বলছে ওই ব্যক্তি ঘুমের মধ্যে নাক ডাকছে। শুধু নাকই ডাকছে না, মাঝে মাঝে বিকট শব্দ করছে। তবে ব্যক্তি ঠিকমতো ঘুমাতে পারছে না, এর চেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এর সঙ্গে শারীরিক কিছু সমস্যা দেখা দেবে।
প্রশ্ন : কী ধরনের সমস্যা দেখা দেবে?
উত্তর : ধরেন একটি সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের আট ঘণ্টা ঘুমের দরকার। সারা দিন শরীর যে কাজ করছে, সেই শক্তি পুষিয়ে নিতে ঘুমের দরকার। ঠিকমতো ঘুম না হলে সেই শক্তির ঘাটতি থেকেই যায়। এতে সমস্যা হবেই। একটি শিশুর ১২ ঘণ্টা ঘুম দরকার। এখন যদি একটি শিশু ঠিকমতো ঘুমোতে না পারে, ঘুম ভেঙে যায়, ঘুমের মধ্যে কেঁদে ওঠে, ঘুম থেকে লাফ দিয়ে দরজা-জানালার দিকে দৌড় দেয় তখন সে দিনের বেলা হয়তো হা করে থাকবে, মুখ দিয়ে লালা পড়ে বা ক্লাসের পারফরমেন্স কমে যায়- এসব সমস্যা হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের ঘুমের সমস্যার সঙ্গে হৃৎপিণ্ডের সমস্যা জড়িত।
যদি কারো কিছুক্ষণের জন্য গলার ভেতরে অক্সিজেন যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়, নাক বাঁকা হয় অথবা টনসিলের সাইজ বেশ বড় হয়, অথবা তার আলাজিহ্বা বেশ লম্বা হয়, জিহ্বা বেশ মোটা হয়। অথবা ধরেন চায়নিজ লোক বা ককেশিয়ানদের মধ্যে অনেক পার্থক্য দেখবেন। ককেশিয়ান লম্বা সুঠাম স্বাস্থ্য কিন্তু একজন চায়নিজ দেখবেন ঘাড় ছোট, গলা ছোট, দেহের আকৃতি মোটা। এ রকম লোক ঘুমালে জিহ্বা উল্টে যায়। জিহ্বা যে অবস্থানে থাকার কথা, এর থেকে আরো পেছনে এবং নিচের দিকে নেমে যায়। তাঁরা যখন মাথা উঁচু করে ঘুমাচ্ছেন, জিহ্বা উল্টে যাচ্ছে। মস্তিষ্কের জরুরি খাবার হচ্ছে অক্সিজেন। আর মস্তিষ্ক অক্সিজেনের ব্যাপারে খুব স্পর্শকাতর। তিন মিনিটের বেশি শ্বাস বন্ধ থাকলে মস্তিষ্কে ক্ষতি হয়ে যায়। ব্যক্তির শ্বাস বন্ধ হয়ে এলে সে ঘুমের মধ্যে অক্সিজেন নিতে পারে না। তখন হয়তো ধড়ফড় করে জেগে ওঠে। আবার ঘুম থেকে উঠে শ্বাস নিয়ে আবার ঘুমিয়ে যাচ্ছে।
যেহেতু ব্যক্তিটি রাতে ঘুমায়নি। তখন সে হয়তো অফিসে গিয়ে ঝিমাতে থাকে, কাজে মনোযোগ দিতে পারে না। বাসে বা গাড়িতে চড়লে ট্রাফিক জ্যামে হয়তো ঘুমিয়ে পড়ছে। তা ছাড়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো উন্নত বিশ্বে ড্রাইভিং অ্যাক্সিডেন্ট। ওখানে তারা ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার আগে ঘুমের সমস্যার বিষয়টি আছে কিনা তা জেনে নেয়। কেননা এই গাড়িচালক যদি গাড়ি চালায় সে দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে।
ঘুমের সমস্যার কারণে অনেক রোগ হতে পারে। হার্ট অ্যাটাক হতে পারে, অবিসিটি বা ওজনাধিক্য হতে পারে, ডায়াবেটিস হলে ইনসুলিন রেজিটেন্স হতে পারে। এসব কারণে রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
প্রশ্ন : স্নোরিং বা নাক ডাকার সমস্যাটি কি চিকিৎসা করে নিরাময়যোগ্য?
উত্তর : এটি অবশ্যই নিরাময়যোগ্য। যেমন- একটি শিশুর ক্ষেত্রে যদি টনসিল, এডিনয়েড, ঠান্ডার সমস্যার কারণে ঘুমের সমস্যা থাকে তার চিকিৎসা করলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। ঘুমের এসব সমস্যার অনেক উন্নত চিকিৎসাই এখন বাংলাদেশে করা হচ্ছে।