ঘাড় ও মাথাব্যথায় কখন ফিজিওথেরাপি নেবেন?

বিভিন্ন কারণে ঘাড় ও মাথাব্যথা হয়। এর মধ্যে একটি কারণ হলো সারভিকোজেনিক হেডেক। এই সমস্যা হলে ফিজিওথেরাপি নিতে হয়।
এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২৩৯২তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক আলতাফ হোসেন সরকার। বর্তমানে তিনি পান্থপথ ফিজিওখেরাপি সেন্টারের পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন।
প্রশ্ন : মাথা ও ঘাড় ব্যথা কেন হয়?
উত্তর : মাথা এবং ঘাড় ব্যথা হওয়ার কারণ অসংখ্য। এই অসংখ্য কারণের মধ্যে যেগুলো খুব প্রধান কারণ—এর মধ্যে একটি হলো, আমি যে ধরনের মাথাব্যথার চিকিৎসা করি। এটা ঘাড় থেকে হয়। একে বলা হয় সারভিকোজেনিক হেডেক। যদি ১৮ ভাগ লোক মাথাব্যথায় ভুগে থাকে, তার ১৪ ভাগ লোক সারভিকোজেনিক হেডেকে ভোগেন। সারভিকোজেনিক বলতে বোঝা যায় যে ঘাড় থেকে এসেছে। এটা ঘাড়ের উপরিভাগ থেকে আসে। আমরা বলি এটা সি-ওয়ান, সি-টু ও সি-থ্রি পর্যায় থেকে আসে।
এই সার্ভিকোজেনিক হেডঅ্যাক কেন হয়? যদি ঘাড়ের পেশি দুর্বল থাকে, তাহলে সমস্যা হতে পারে। যদি গাঁটের নড়াচড়া কোনো কারণে কমে যায়, সে কারণে হতে পারে। যদি সি-টু, সি-থ্রি পর্যায়ের ডিস্কে সমস্যা হয় সে কারণে হতে পারে। ঘাড়ে ডুরা থাকে, সেখানে যদি সমস্যা হয়, সে ক্ষেত্রে হতে পারে। এ রকম অসংখ্য কারণ আছে। এর মধ্যে এগুলো প্রধান। এই কারণ থেকে মাথাব্যথা হয়।
অসুস্থতা থাকে ঘাড়ে। ব্যথা হয় মাথায়। কেন ঘাড় থেকে মাথাব্যথা হয়? তাহলে তো ঘাড়েই ব্যথা হওয়ার কথা ছিল। মাথায় কেন হয়? কারণ, ঘাড় থেকে যে স্নায়ুগুলোর উৎপত্তি হয়, এগুলো মাথার সি-ওয়ান, সি-টু, সি-থ্রি পর্যায়গুলোতে পরিবহন হয়। তাই স্নায়ুর চাপটা যেই পর্যায়ে থাকে, সেই পর্যায়ে আমরা মাথাব্যথা অনুভব করি।
প্রশ্ন : মাথাব্যথার ঠিক কোন পর্যায়ে ফিজিওথেরাপিস্টের কাছে যেতে হয়?
উত্তর : আমার মনে হয়, মাথাব্যথা হলেই আমাদের চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন। বের করা উচিত যে কেন মাথাব্যথা হচ্ছে? আমাদের দেশে সাধারণত মাথাব্যথা হলে মাথার পরীক্ষার মধ্যে এক্স-রে করা হয়। এতে কিছু না পেলে এমআরআই, সিটি স্ক্যান করা হয়। আমি যে মাথা ব্যথার চিকিৎসা করি সেটা এক্সরে, এমআরআই সিটিস্ক্যানে কিছু পাওয়া যায় না। কারণ, হলো এর উৎপত্তি তো ঘাড়ে। পেশির দুর্বলতার জন্য মাথা ব্যথা হচ্ছে, সেটি এক্সরে করলে দেখা যাবে না। আপনার ভেতরে ডুরাল কমপ্রেশন আছে এটি এক্সরে করলে বোঝা যাবে না। এটা তাহলে কীভাবে বোঝা যাবে? একমাত্র পদ্ধতি হলো হাত। হাত দিয়ে আপনি যখনই ধারণা করবেন, যখনই পরীক্ষা করবেন, তখনই আপনি বুঝবেন, হাত দিয়ে দেখলেন টেন্ডার পয়েন্ট আছে কি না? হাত দিয়ে দেখলেন পেশির শক্তি কেমন? আপনি হাত দিয়ে ঘুরিয়ে দেখলেন এখানে যে নড়াচড়া হয় সেটা কতটুকু আছে? এখান থেকেই আপনি বুঝতে পারবেন যে তার মাথাব্যথা হচ্ছে কি না। এটা কেবল মাত্র চিকিৎসকের কাছে গেলেই তো বোঝা যায়। তা ছাড়া রোগী বুঝতে পারবে না।
প্রশ্ন : এই ধরনের মাথাব্যথার ক্ষেত্রে চিকিৎসার কী কী সুযোগ রয়েছে?
উত্তর : অনেক সুযোগ রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে হাতেই চিকিৎসাটা হয়ে যায়। আবার অনেক সময়, আমি যখন দেখি ঘাড়ে হাত দিতে দিতে বোঝা যায়; রোগী হয়তো বলে আমার তো একটু আগে এখানে ব্যথা ছিল এখন তো ব্যথা নেই। তার মানে দেখার সময় আমি যে নড়াচড়া করেছি, এই সময় চাপ যেটা ছিল, এটা কমে গেছে। কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যথাটা চলে গেল।
যদি ব্যথা হয় ডান দিকে, বাম দিকে যদি আমি মাথা ঘুরাই সি-ওয়ান, সি-টু বা সি-থ্রি পর্যায়ে ঘুরিয়ে অপর অবস্থায় চলে যাই, সঙ্গে সঙ্গে এটা ফাঁকা হয়ে যায়। ওই জায়গাটা ফাঁকা হয়ে যায়। ফাঁকা হয়ে গেলেই চাপ থাকে না। রোগীর সঙ্গে সঙ্গে ব্যথা চলে যায়। কিন্তু একটু পরে আবার ব্যথা ফিরে আসবে। কারণ এটা স্থিতিস্থাপক হয়নি। কয়েকটি সেশন করলে, এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় সে স্থিতিশীল হয়ে গেছে। রোগী বলে, আমার এখানে ব্যথা নেই। আমি বলব, এটা খুবই সুন্দর চিকিৎসা। মাথাব্যথায় যারা ভুগছেন, আমি বিশ্বাস করি, সার্ভিকোজনিক হেডেক হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যথা ভালো হবে। দু-তিন সপ্তাহের মধ্যে এটা স্থিতিশীল হয়ে যাবে। আর ব্যথা তার কখনোই হবে না। কারণ, আমরা স্থিতিশীল করে দিই। এরপর প্রতিরোধের জন্য কিছু জিনিস শিখিয়ে দিই।
প্রশ্ন : এই ক্ষেত্রে কি কোনো ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেন?
উত্তর : যে কারণের জন্য তার ব্যথা হয়, সেই কারণের জন্য কোনো ওষুধ নেই। যেমন, একটি কারণ তার নড়াচড়ার সীমাবদ্ধতা আছে। সেখানে রেঞ্জ (পরিমাপ) একটু কমে গেছে। কোনো ওষুধ নেই এই পৃথিবীতে যে ওষুধ খেলে রেঞ্জ বাড়বে।
কী কারণে হয়েছে? পেশির দুর্বলতার কারণে হয়েছে। পেশি দুর্বলতা কমানোর জন্য কোনো ওষুধ নেই যে এটা খেলে পেশি শক্তিশালী হবে। পেশির দুর্বলতা কমানোর এক মাত্র ওষুধ হলো একে হাত দিয়ে শক্তিশালী করানো। এই জন্য সারভিকোজনিক হেডেকের কারণ অনুযায়ী ওষুধ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সেই ক্ষেত্রে এসব জায়গায় ফিজিওথেরাপিই একমাত্র ওষুধ।
প্রশ্ন : এই ধরনের মাথাব্যথা প্রতিরোধ করতে হলে রোগীকে কী কী করতে হবে?
উত্তর : প্রতিরোধ করতে পেশির সে নড়াচড়া আছে সেগুলো যেন প্রতিদিনই আমরা করি। যেমন, নামাজ একটি ব্যবস্থা। এতে ঘাড় নড়াচড়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে আমরা মাথা ওপর থেকে নিচে করতে পারি। প্রতিদিন সকাল-বিকেল করতে পারি।
এ ছাড়া হাত দিয়ে মাথার পেছনে, সামনে চাপ দেবে। এটা রোগী নিজেই করবে। এটা করলে পেশি শক্তিশালী থাকবে। এতে তার সার্ভিকোজনিক মাথাব্যথা হওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে।
প্রশ্ন : রোগী যখন চিকিৎসা নিচ্ছে তখন কতদিন পরপর আপনাদের কাছে আসবে?
উত্তর : প্রথমত এটা নির্ভর করবে তার অবস্থার ওপর। যদি তার মাথাব্যথা বেশি হয়, তাহলে পরপর এক থেকে দুই সপ্তাহ চিকিৎসা নিতে হয়। যদি তার মাথাব্যথা কম হয়, পরপর এক সপ্তাহ নিয়ে দ্বিতীয় সপ্তাহতে গিয়ে দেখতে হবে কতটুকু কমেছে। সাধারণত কমে যায়। তৃতীয় সপ্তাহে গিয়ে এক-দুদিন এসে আর আসতে হয় না। বেশি হলে তিন সপ্তাহ লাগতে পারে। এটা নির্ভর করে জটিলতা কেমন, কতদিন ধরে উনি কষ্ট পাচ্ছেন, এর তীব্রতা কেমন এসবের ওপর নির্ভর করে।
আরেকটি জিনিস আমি বলি, অ্যান্টিরিওর হেড পোশচার বলে একটি শব্দ আছে। আমরা অনেক সময় সামনের দিকে ঝুঁকে গিয়ে কাজ করি। তখন আমাদের চিবুক সামনে চলে আসে। এই চাপ থাকার জন্যও অনেক সময় মাথাব্যথা হয়। তবে এর চিকিৎসায় একটু সময় লাগে।