বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস
অটিজমের কোনো ওষুধ হয় না
আজ ২ এপ্রিল বিশ্ব অটিজম দিবস। এ উপলক্ষে আজকের আলোচনার বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে অটিজম। এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ১৯৯৩ তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু নিউরোলোজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. মিজানুর রহমান।
প্রশ্ন : সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে বিশ্ব অটিজম দিবস। পাশাপাশি বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে দিবসটি। দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় কী নির্ধারণ করা হয়েছে?
উত্তর : এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো স্টপ ডিসক্রিমিনেশন। কথাটির অর্থ হলো, সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষা, চাকরি, সামাজিকভাবে অটিস্টিক মানুষকে আলাদা করে না দেখা। তাদের একীভূত করা। বৈষম্যের দৃষ্টিতে না দেখা।
প্রশ্ন : অটিজম বলতে আমরা কী বুঝি?
উত্তর : অটিজম হলো শিশুর মানসিক বিকাশে প্রতিবন্ধকতা। শারীরিক গঠনে তার হয়তো কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু সমস্যা মানসিক বিকাশে। এর ফলে যেটি বেশি হয় সেটি হলো যোগাযোগে সমস্যা। কথা বলার মাধ্যমে হোক বা কথা না বলা হোক অন্যের সঙ্গে যোগাযোগে তার প্রচণ্ড সমস্যা থাকে। অন্যরা কী বলছে, পারিপার্শ্বিকভাবে কী হচ্ছে, এ বিষয়ে সে সতর্ক থাকে না। নিজের অনুভূতিও বুঝতে পারে না ; অন্যেরটাও বুঝতে পারে না। সামাজিক আচার-আচরণে সমস্যা হয়। সামাজিকতা যে রকম আমরা বুঝি, সেটা তারা বুঝতে পারে না। হয়তো পরিবারে কোনো দুর্ঘটনা ঘটছে বা ভালো ঘটনাই ঘটছে- এ বিষয়ে শিশুটির কোনো প্রতিক্রিয়া থাকে না। আরেকটি সমস্যা হচ্ছে, এরা হয়তো একটা কাজ অনেকক্ষণ ধরে করতে থাকে, যেটা হয়তো অনেক্ষণ ধরে করার নয়। হয়তো তার একটা গাড়ি নিয়ে খেলার কথা কিন্তু তা না করে সে হয়তো অনেক্ষণ ধরে গাড়ির চাকা ঘুরাচ্ছে।
অনেক ক্ষেত্রে যে কথা সে আগে বলত বা বলা শুরু করেছিল সেটা আর বলতে পারে না। এটা সাধারণত দেড় থেকে দুই বছর বয়স থেকে হয়ে যায়। তিন বছরের মধ্যে শিশুটি যে অটিস্টিক তা পুরোপুরি বোঝা যায়।
প্রশ্ন : মা-বাবা যখন শিশুটিকে আপনাদের কাছে নিয়ে আসেন তখন আপনারা শিশুটির ক্ষেত্রে প্রথমে কী দেখেন?
উত্তর : আমরা দেখি সে যোগাযোগ করতে পারে কি না। প্রয়োজন হলে সে কথা বলে কি না। সবচেয়ে বেশি যে সমস্যা হয় সে হয়তো কথা বলতে পারত এখন আর বলতে পারে না।
প্রশ্ন : এই শিশুটির স্বাভাবিক জীবন গঠনের ক্ষেত্রে কতটুকু ভূমিকা রয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর : যে কারণেই হোক কোনো শিশুর সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে শিশু বিশেষজ্ঞকে দেখাতে হবে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা যেগুলো করানো দরকার সেগুলো করাতে হবে। পরীক্ষা করে যদি অটিজম পায় তাহলে স্পিচ থেরাপিস্ট, সাইকোলোজিস্টের কাছে নিতে হবে। তারা বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন, কীভাবে এই শিশুটির সঙ্গে কথা বলতে হবে, তাকে কীভাবে কথা শিখাতে হবে, খেলাধূলা, দৈনন্দিন কাজগুলো কীভাবে করবে সেগুলো শেখানো হয়। শিখে নিয়ে সেভাবে কাজ করা হয়। এটিকে এক ধরনের বিহেভিয়ার মোডিফিকেশন থেরাপি বলা হয়। তার যেই আচরণ ছিল সেটাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসা। একটি শিশুর বিকাশ কোন পর্যায়ে আছে সেটি দেখে তাকে উন্নত করা। এ ছাড়া তাকে বিশেষ স্কুলে নেওয়া যেতে পারে যেখানে কীভাবে এগুলো করতে হবে এগুলো শেখানো হয়ে থাকে। সেখানে ওয়ান–টু-ওয়ান টিচিং করা হয়। একটি শিশুর জন্য একজনই শিক্ষক থাকেন।
প্রশ্ন : আমরা বলছি, বৈষম্যহীন সামাজিক অবস্থানের কথা কিন্তু তাকে আবার বিশেষ স্কুলে পাঠানোরও কথা বলছি। তাহলে কী বৈষম্য হচ্ছে না?
উত্তর : অনেক স্কুলে যেখানে ৩০ থেকে ৪০ জন শিশু রয়েছে ওখানে অটিস্টিক শিশুদের ভর্তি করা হলে, তাদের যেহেতু যোগাযোগের সমস্যা থাকে তখন সেই শিশুটি তো যোগাযোগ করতে পারবে না শিক্ষকের সঙ্গে। শিক্ষকের নির্দেশ শুনবে না। তাই প্রাথমিক অবস্থায় তাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে একটা পর্যায়ে আনতে হবে যখন সে সবার সঙ্গে যোগযোগ করতে পারবে। এ রকম নয় যে সে সারা জীবনই বিশেষ স্কুলে থাকবে কিন্তু তাকে সাধারণ স্কুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি করতে হবে। সাধারণ স্কুলে তাদের বিশেষ যত্ন নিয়ে দেখতে গেলে অনেক প্রশিক্ষিত শিক্ষক দরকার, যেটা আমাদের দেশে এখনো হচ্ছে না। এ জন্যই এবারের স্লোগান যাতে এ ধরনের সুবিধা করা হয়। যাতে অটিস্টিক শিশুরা সবার সঙ্গে মিশে স্বাভাবিকভাবে চলতে পারে।
প্রশ্ন : এ জাতীয় চিকিৎসার পাশাপাশি কি কোনো ধরনের মেডিকেশন দেওয়া হয়?
উত্তর : আসলে এই রোগ ভালো করতে পারে এর জন্য কোনো ওষুধ নেই। আচরণগত প্রশিক্ষণ শেখানোর মাধ্যমেই তাদের ধীরে ধীরে ঠিক করা হয়।