শিশুদের চোখে ছানি কেন হয়?
শিশুদের চোখের ছানি একটি জটিল রোগ। সময়মতো এর চিকিৎসা না করা হলে শিশুটি চিরদিনের মতো দৃষ্টি শক্তি হারাতে পারে। আজ ৪ এপ্রিল এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ১৯৯৫তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক, শিশু চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. ফরহাদ হোসেন।
প্রশ্ন : বয়স্কদের ছানি আমরা অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে ধরে নেই। তবে শিশুদেরও চোখে ছানির সমস্যা হয়। শিশুদের চোখে ছানি পড়ে কেন সেটা যদি একটু বলেন....
উত্তর : আমাদের দেশে এবং সমগ্র বিশ্বে ছোটদের চোখের ছানি অত্যন্ত জটিল একটি বিষয়। সেটা যদি সঠিক সময়ে নির্ধারণ করা না যায়, তাহলে এ সমস্যার কারণে শিশুটিকে অনেক সময় অন্ধত্ব ভোগ করতে হয়, সেটি জাতির জন্য অভিশাপ। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে চোখের ছানি বেশির ভাগ সময় জন্মগত হয়ে থাকে। জন্মের পরও বিভিন্ন কারণেও ছানি হয়। জন্মগত কারণে যেটা হয়, মায়ের গর্ভাবস্থায়, বিশেষ করে প্রথম তিন মাসে মা যদি ভাইরাস জাতীয় কোনো রোগে আক্রান্ত হয়, অর্থাৎ তার যদি জ্বর হয়, র্যাশ উঠে, যদি রুবেলা ভাইরাসে আক্রান্ত হয় তাহলে এই শিশুর চোখে জন্মগত ছানি হতে পারে। জন্মগত ছানির সঙ্গে তার হার্টের সমস্যা দেখা দেয়। কানের সমস্যা দেখা দেয়। ভাইরাসের কারণে বাচ্চাদের জন্মগত ছানি খুব বেশি হয়ে থাকে। শারীরিক অন্যান্য ত্রুটিও এই ভাইরাসের কারণে হয়।
এ ছাড়া যদি দেখা যায়, গর্ভাবস্থায় মা পুষ্টির সমস্যায় ভোগে, ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, ভিটামিন ডি- এগুলোর অভাবের কারণে ছানি বেশি হয়। তা ছাড়া দেখা যায়, অপ্রয়োজনীয়, অহেতুক কিছু ওষুধ খাওয়া হয়, যেমন, স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ যদি সর্বত্র অহরহ ব্যবহার করা হয়; গর্ভবতী মা যদি স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করেন বা খান তাহলে শিশুর জন্মগত ছানি হতে পারে। আরো কিছু কারণ আছে, বাচ্চার নিজস্ব কারণে, যেমন, বার্থ ট্রমা থেকে ছানি হতে পারে; মেটাবলিক কিছু রোগ রয়েছে সেগুলো থেকেও জন্মগত ছানি হতে পারে। জন্মের পরে যেটাকে বলা হয় ডেভোলোপেন্টাল ক্যাটারেক্ট। এই প্রক্রিয়াটি হয়তো মায়ের পেটেই হয়েছে কিন্তু জন্মের পর থেকে ধীরে ধীরে এটি বাড়তে থাকে। এ ছাড়া চোখে আঘাতজনিত সমস্যা থেকেও ছানি পড়তে পারে।
প্রশ্ন : শিশু তো কিছু বলতে পারবে না সমস্যা হলে, তাহলে অভিভাবকরা কীভাবে বুঝবে শিশুটি ছানির সমস্যায় আক্রান্ত?
উত্তর : চোখের মধ্যে কালো মনির ভিতরে ছোট্ট একটা গোল আছে যাকে বলা হয় পিউপিল। পিউপিলের ভেতর সাদা দেখা যায়। তাৎক্ষণিকভাবে যদি শিশু চক্ষুরোগ চিকিৎসককে দেখানো হয় তাহলেও এর নির্ণয় করা সম্ভব। এ ছাড়া দেখা যায়, শিশু হয়তো মুখের দিকে ঠিক মতো তাকায় না। এ রকম হলে বাচ্চার চোখে কোনো সমস্যা আছে কি না দেখতে হবে। চিকিৎসকের কাছে আনলে চিকিৎসক পরীক্ষা করে নিশ্চিত করবেন ছানি বড় হয়েছে কি না।
প্রশ্ন : মায়েরা সমস্যা দেখে চিকিৎসকের কাছে হয়তো নিয়ে এলেন। সেই ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা কীভাবে চিকিৎসা করে থাকেন ?
উত্তর : এর চিকিৎসা খুবই জরুরি। আমরা এর অস্ত্রপচার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে করে থাকি। এ ছাড়া ইসলামীয়া চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে এই অস্ত্রপচার করে থাকি। অস্ত্রপচার যত তাড়াতাড়ি করা যায় তত ভালো। তাহলে আর দৃষ্টিহানি হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।
প্রশ্ন : আর যদি সময় মতো চিকিৎসা না হয়.........
উত্তর : যদি সময়মতো চিকিৎসা না করানো হয়, অর্থাৎ যদি সময় মতো অস্ত্রপচার না করানো হয়, তাহলে অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। যেহেতু এই রোগের একমাত্র চিকিৎসা অস্ত্রপচার তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এটা করতে হবে। যদি না করা হয় সেক্ষেত্রে বাচ্চার চোখে এমব্লায়োপিয়া বা স্থায়ী দৃষ্টিহানি ঘটার একটি আশঙ্কা দেখা যায় বা দৃষ্টিহানি হয়ে যায়।
প্রশ্ন : এই বাচ্চাদের অস্ত্রপচার আপনারা সাধারণত কোন পদ্ধতিতে করে থাকেন? চোখের চিকিৎসার ক্ষেত্রে বর্তমানে আমরা লেজারের কথা শুনি।বাচ্চাদের চোখে অস্ত্রপচারে লেজারের ব্যবহার কতটা করা যায়?
উত্তর : বড়দের ক্ষেত্রে আমরা যেমন অস্ত্রপচার করে লেন্স সংগ্রহ করি, বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও আমরা তেমন ফোল্ডেবল লেন্স ব্যবহার করে থাকি। যদি এক চোখে ছানি হয় তাহলে চিকিৎসাটা একটু অন্য ধরনের, দুই চোখে ছানি হলে চিকিৎসা পদ্ধতি আরেকটু ভিন্ন । যদি এক চোখে ছানি হয়, তাহলে আমরা ছানিটাকে অস্ত্রপচার করে সঙ্গে সঙ্গে লেন্স দিয়ে দিই; কৃত্রিম লেন্স সংযোজন করে দিই। উন্নত দেশগুলোতে যেখানে কনটাক্ট লেন্সের সুবিধা আছে সেই সব ক্ষেত্রে কনটাক্ট লেন্স ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। আর যদি দুই চোখেই ছানি থাকে, দুই চোখই আমরা অস্ত্রপচার করি, সেই ক্ষেত্রে সাধারণত দু্ই বছরের নিচের শিশুদের লেন্স সংযোজন করি না। লেন্সে সংযোজন না করে চশমা ব্যবহার করতে দিই। যেহেতু বাচ্চা দেখে তাই চশমা দিলে বাচ্চা ছাড়তে চায় না।
তিন বছরের বাচ্চা যদি দুই চোখে ছানি নিয়ে আসে সেই ক্ষেত্রে দুই চোখে লেন্স সংযোজন করি। এটি অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে করে থাকি। খুব ছোট্টভাবে ফেকোমেশিনের মাধ্যমে ছানি কেটে লেন্স সংযোজন করি। ইদানীং লেজারের মাধ্যমেও এই চিকিৎসা করা হচ্ছে। এই আধুনিক চিকিৎসা এখন বাংলাদেশেই হচ্ছে।