পরীক্ষায় যত ভয়
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/04/05/photo-1428232663.jpg)
চারদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা। তার মাঝেই শুরু হলো উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। বিশাল অনিশ্চয়তা আর উৎকণ্ঠর মাঝে বড় পরীক্ষার সম্মুখীন হচ্ছে পরীক্ষার্থীরা। নিজেদের মানসিক ভয়-ভীতি তো আছেই, তার ওপর অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা। কিন্তু বাবা-মায়ের এই দুশ্চিন্তা সন্তানকে যেন স্পর্শ না করে। প্রথমেই বলে রাখা ভালো, সন্তানকে খুব বেশি জবরদস্তি করা যাবে না।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ও বিশিষ্ট মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আহমেদ হেলাল বলেন, ‘এ কয়েকটা দিন অতিরিক্ত চাপ দিলে বাড়তি কোনো ফল আসবে না, উল্টো ক্ষতি হতে পারে। কোনো পরীক্ষার পর প্রশ্নপত্র নিয়ে সন্তানকে জেরা করা যাবে না। অন্য লোকজনের সামনে সন্তানের পরীক্ষা প্রস্তুতিবিষয়ক কোনো সমালোচনা করা উচিত নয়। এতে কিন্তু তার মনোবল নষ্ট হয়ে যায়। জানা প্রশ্নও ভুলে যায়।’
পরীক্ষার সময় ছেলেমেয়েরা খাওয়া-দাওয়া একদম করতে চায় না। কিন্তু খাওয়া-দাওয়া না করলে তো শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে। আর মগজের দরকার যে ফুয়েল বা জ্বালানি, তা আসে মূলত গ্লুকোজ থেকে। এ সময় অন্যান্য খাবারের সঙ্গে সঙ্গে শর্করাজাতীয় খাবার ভাত, রুটি, চিনির শরবত খাওয়াতে হবে। পরীক্ষার আগে অরুচির কারণে ছেলেমেয়েরা শক্ত খাবার খেতে চায় না। তাই তরল ও নরম খাবার-ফলের জুস, দুধে ভেজানো রুটি, কর্নফ্লেক্স, কোয়াকার বা যব বা ভুট্টার গুঁড়ো, নরম খিচুড়ি ভালো কাজ দেবে। অনেকেই পরীক্ষার সময়ে পরীক্ষার্থীকে কুসংস্কারবশত ডিম খাওয়ান না, পাছে ফলাফল খারাপ হয় সেই ভয়ে। ডিম হলো প্রোটিন, কোলেস্টেরল আর ভিটামিনের অফুরন্ত উৎস। কুসংস্কারবশত আপনি আপনার সন্তানকে এভাবে অযথা পুষ্টিকর খাবার থেকে দূরে রাখবেন কেন?
পরীক্ষার এই সময়ে কিন্তু আইসক্রিম বা ফ্রিজের ঠান্ডা পানি একদম দেওয়া যাবে না। পরীক্ষা শেষে বাইরের খাবার আচার, ফুচকা চটপটি একদম বারণ। এসব খাবার খেয়ে পেটের পীড়াজনিত অসুস্থতার শিকার হতে পারে। পরীক্ষার সময় রাত জেগে পড়া অনেকেরই অভ্যাস। তবে মস্তিষ্ককে বিশ্রামের সময় বেশি না দিলে কোনো পড়াই স্মরণে থাকবে না।
পরীক্ষার সময় কোনো অস্থিরতা নয়। অস্থিরতায় মস্তিষ্ক থেকে এপিনেফ্রিন নামক এক ধরনের কেমিক্যাল নিঃসৃত হয়। ফলে সিমপেথেটিক সিস্টেম সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং মানুষের অস্থিরতা আরো বাড়তে থাকে। অস্থিরতায় পড়াশোনা গুলিয়ে যায়, জানা উত্তরও ভুল হয়। তাই যত দ্রূত সম্ভব একজন পরীক্ষার্থীকে এ ধরনের নার্ভাসনেস বা মানসিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হবে।
পরীক্ষার সময় সন্তানের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ওপর বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। ঠান্ডা, জ্বর, ভাইরাস, গলার গ্লান্ড ফুলে যাওয়া এসব মৌসুমি অসুখের লক্ষণ। এসব যেন শিশুকে সহজে কাবু করতে না পারে, সে জন্য সামান্য লক্ষণ দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, যাতে অসুখের কারণে পরীক্ষাটাই মাটি হয়ে না যায়। মোট কথা, শারীরিক ও মানসিকভাবে এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে যেন আপনার সন্তান সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা দিতে পারে।
ডা. আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার, সহকারী অধ্যাপক, শিশু কার্ডিওলজি বিভাগ, হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল