স্ট্রোকের চিকিৎসা
স্ট্রোক একটি স্নায়ুর পদ্ধতিগত (নার্ভাস সিস্টেম) রোগ। এই রোগের লক্ষণ দেখার সাথে সাথে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। আজ ১৬ মার্চ এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২০০৭তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. আফজাল মমিন।
প্রশ্ন : স্ট্রোক রোগটি আসলে কী, একটু বুঝিয়ে বলবেন?
উত্তর : স্ট্রোক হচ্ছে স্নায়ুর পদ্ধতিগত (নার্ভাস সিস্টেম) রোগ। এটি হৃদযন্ত্রের কোনো রোগ না। স্ট্রোক হলো হঠাৎ করে হওয়া স্নায়ুবৈকল্য, যার স্থায়িত্বকাল হবে ২৪ ঘণ্টা। এই স্নায়ুবৈকল্যটি প্রকাশ পায় একপাশ অবশ হয়ে, কথার জড়তা হয়ে, পুরোপুরি অজ্ঞান হয়ে।
স্ট্রোক নিয়ে ভুল ধারণা রয়েছে। অনেকে বলেন ব্রেন স্ট্রোক, হার্ট স্ট্রোক-এগুলো আসলে কিছুই না। দুটো বিষয়কে মিলিয়ে ফেলেন। এ জন্য ডব্লিউএইচও একটি ধারণা নিয়ে আসছে, ব্রেইন অ্যাটাক এবং হার্ট অ্যাটাক। ফলে ভুল ধারণাগুলোর হয়তো অনেক সমাধান হবে।
প্রশ্ন : স্ট্রোকের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কারা?
উত্তর : স্ট্রোক দুই ধরনের হয়। একটিকে বলা হয় ইসকেমিক স্ট্রোক, যেখানে রক্তনালি বন্ধ হয়ে যায়, এটি শতকরা ৮৫ ভাগ ক্ষেত্রে হয়। আরেকটি হচ্ছে রক্তনালি ফেটে গিয়ে হয়-হেমোরোজিক স্ট্রোক, এটি শতকরা ১৫ ভাগ হয়। তবে এর ভেতরে আরো অনেক ভাগ আছে। বলা হয়, স্ট্রোক বৃদ্ধ বয়সের অসুখ। তবে স্ট্রোক তরুণদের হবে না সেটি নয়, বয়স্ক লোকদের বেশি হয়।
এবার আসা যাক কাদের হবে এই বিষয়ে। কিছু ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় আছে যাকে আমরা বদলাতে পারব না। একে বলে অপরিবর্তনযোগ্য (ননমোডিফায়েবল)। অন্যটি হলো পরিবর্তনযোগ্য (মোডিফায়েবল)। বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্ট্রোকের আশঙ্কা বাড়ে, আপনি যদি পুরুষ হন তবে আশঙ্কা রয়েছে, নারীর বেলায় কম হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গদের বেশি হয়, এগুলো হলো অপরিবর্তনযোগ্য ঝুঁকি। আর হৃদরোগী, উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী, কোলেস্টেরল হলে , স্থূল হলে, ধূমপান করলে, জীবন-যাপনে যদি অ্যাকটিভ না হন, বসে কাজ করা হয়, তাহলে ঝুঁকিতে থাকে- এগুলো হলো পরিবর্তনযোগ্য (মোডিফায়েবল) ঝুঁকি।
তবে এর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকে হৃদরোগী, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী, উচ্চরক্তচাপের রোগী ও ধূমপায়ীরা। এই চারটি বিষয় যার আছে, তার স্ট্রোক হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি।
প্রশ্ন : সাধারণত কী ধরনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে? সাধারণত কেমন অবস্থা হলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত?
উত্তর : ‘স্ট্রোক’ শব্দটি এসেছে ‘স্ট্রাইক’ থেকে। স্ট্রাইক মানে হচ্ছে আঘাত করা। আর স্ট্রোকের মানে হচ্ছে আঘাত হয়ে গেছে। তার মানে এটি এমন একটি রোগ, যেটা হঠাৎ করে হয়েছে এবং কিছুক্ষণ আগেও আপনি বুঝতে পারেননি। তার মানে হচ্ছে, এটা হঠাৎ। পৃথিবীতে যা হঠাৎ করে হয় সেটা সবার চোখ এড়িয়ে যায়। স্ট্রোক হলে হঠাৎ করে তার কথাটা জড়িয়ে গেল, হঠাৎ করে তার কোনো পাশ অবশ হয়ে গেল-এ রকম হবে। এই জিনিসগুলো যখন আসছে, তখন বুঝতে হবে স্নায়ুবৈকল্য হচ্ছে। এই পর্যায়টাকে আমরা বলি অ্যাকিউট। তখনই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
প্রশ্ন : এসব সমস্যায় তারা কোন চিকিৎসকের কাছে যাবেন এবং যাওয়াটা কতটা জরুরি?
উত্তর : স্ট্রোক সব সময় একটি জরুরি বিষয়। এটা কতটুকু হলো বা কত অল্প হলো বিষয়টি তা নয়। এটা বেড়ে যেতে পারে। সাধারণত স্ট্রোকের সঙ্গে একটি শব্দ চলে আসে- ট্রানজিয়ান ইসকেমিক অ্যাটাক। এখানে ২০ থেকে ৩০ মিনিটে হয়তো রোগী ভালো হয়ে যায়। কিন্তু যখন অ্যাকিউট স্ট্রোক পাচ্ছেন, তখন অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে না, আমি বলব হাসপাতালে যেতে হবে। অ্যাকিউট ব্যবস্থাপনা (ম্যানেজমেন্ট) একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে আমাদের দেশে দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই ব্যবস্থাপনাটি আসেনি।
স্ট্রোকের ক্ষেত্রে বলা হয়ে থাকে, তিন ঘণ্টার মধ্যে রোগী চিকিৎসা নিতে চলে আসলে ভালো হয়। চিকিৎসকের কাছে আসার পর যদি লক্ষণগুলো আমরা পাই এবং যদি সিটি স্ক্যান করে নির্ণয় করতে পারি স্ট্রোক হয়েছে, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করি। স্ট্রোক হলে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে যেতে হবে।
প্রশ্ন : স্ট্রোক প্রতিরোধে পরামর্শ কী?
উত্তর : যেগুলো পরিবর্তন করতে পারব না সেগুলো সে রকমই থাকবে। কিন্তু যেগুলো পরিবর্তন করতে পারব সেগুলোর ক্ষেত্রে, জীবনযাত্রার পরিবর্তন আনব, সচল জীবনযাপন করব, মোটা হব না, ডায়াবেটিস থাকলে সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, ধূমপানের মতো বাজে অভ্যাস ছাড়তে হবে, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, কোলেস্টেরল থাকলে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। পাশাপাশি নিয়মিত চেকআপ করাতে হবে।