ডায়াবেটিস ও মুখের রোগ
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/04/30/photo-1430386772.jpg)
ডায়াবেটিস শব্দটি বা এই রোগ সম্পর্কে কম বেশি সবারই ধারণা রয়েছে। আমাদের দেশে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যাও অনেক। তবে রোগটি যে কেবল আধুনিক সভ্যতার, বিষয়টি এমন নয়। এ রোগ প্রাচীন। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ বছর আগে ভারতবর্ষের চিকিৎসকরা এ রোগকে ‘মধুমেহ’ বলে নাম করণ করেছেন। গ্রিক চিকিৎসাবিদ ক্যাপাডেসিয়ার এরোটিউস গ্রিক শব্দে এ রোগের নাম দেন ডায়াবেটিস। মুসলমান চিকিৎসা বিজ্ঞানী আবিসিনা ১০০০ সালে এ রোগের বিষয়ে বই লিখেন, সেখানে তিনি চমৎকারভাবে এর বর্ণনা দিয়েছেন। এরপর অনেক সময় পার হলেও ১৯২১ সালে টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জন ফ্রেডরিক প্রান্ট বেন্টিং, অধ্যাপক কেজেআর মার্কলিওড এবং টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র চার্লস হার্বাট বেস্ট ডায়বেটিসের সঙ্গে অগ্নাশয়ের সম্পর্ক অনুসন্ধান শুরু করেন এবং অগ্নাশয় কোষ থেকে হরমোন ইনসুলিন পৃথক করেন। ‘হরমোন ইনসুলিনের অভাবে এ রোগ ’ এ তথ্য তাঁদের গবেষণায় প্রমাণিত হয়।
ডায়াবেটিসের উপসর্গ
অতিরিক্ত প্রস্রাব, প্রচণ্ড তৃষ্ণা, প্রচুর ক্ষুধা, ওজন কমতে থাকা, ক্লান্তি বোধ করা ,গা চুলকানো,চোখে অস্পষ্ট দেখা, নারীর ঋতুচক্রের সমস্যা, কেটে গেলে শুকাতে অনেক সময় লাগা ইত্যাদি। প্রস্রাব ও রক্তের রুটিন পরীক্ষায় ডায়াবেটিসের উপস্থিতি বোঝা যায়। বহুমূত্র যে কেবল বড়দের রোগ তা নয়, শিশু-কিশোরদের মধ্যেও এ রোগ হতে পারে। এ রোগ একবার হলে সম্পূর্ণ উপশম হয় না, তবে নিয়ন্ত্রণে রাখলে স্বাভাবিক সুস্থ জীবনযাপন করা সম্ভব।
ডায়াবেটিস রোগটির সঙ্গে মুখের রোগগুলো এখনো গবেষণার বিষয়বস্তু। এর মধ্যে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য মিল খুঁজে পাওয়া গেছে। এ রোগের কারণে মুখের ভেতরে যেসব রোগ হতে পারে, সেগুলো হলো- ডেন্টাল ক্যারিজ, মাড়ির রোগ, মুখের বিভিন্ন ধরনের সাদা ঘা, দাঁতের ক্ষয়, কোষ প্রদাহ, আঁকাবাঁকা দাঁত ইত্যাদি। এসব রোগ অপুষ্টি বা বিপাকজনিত কারণেও হতে পারে। দেহের অন্যান্য রোগের লক্ষণ অনেক সময় মুখের ভেতর দেখা যায়। মুখ ও দাঁতের রোগগুলোর মধ্যে ডেন্টাল ক্যারিজ ও মাড়ির প্রদাহই পৃথিবীর সব দেশে বেশি দেখা যায়।
দেহে রক্তপ্রবাহের কাজ হচ্ছে কোষে অক্সিজেন ও অন্যান্য উপকরণ বহন করা এবং অবশিষ্ট অংশ বের করে আনা, তবে ডায়াবেটিসের কারণে রক্তপ্রবাহের নালি চিকন বা সরু হতে থাকে। ফলে দেহে রক্তের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হয় এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এ সময় মাড়িতে কোনো আঘাত লেগে প্রদাহ হলে সেখান থেকে রক্ত বের হতে দেখা যায়। এ ছাড়া মাড়ির রোগ থাকলে সংক্রমণ আরো বেড়ে যায়।
ডায়াবেটিস রোগীদের মাড়ির প্রদাহ বেশি হয় যেসব কারণে
১. এ রোগ দেখা দিলে দেহে ইনসুলিনের ঘাটতি হয়। এর ফলে আমিষেরও ঘাটতি দেখা দেয়, এ জন্য কোষকলার স্বাভাবিক বৃদ্ধি, সংস্কার ও উৎপাদন ব্যাহত হয়। তাই মুখে ঘা বা প্রদাহ হলে তা শুকাতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সময়ের প্রয়োজন হয়।
২. দেহে রোগ প্রতিরোধ শক্তি কমে যায়।
৩। দাঁতের গোড়ায় প্লাক জমে কিছুদিন পর তা শক্ত পাথরে রূপ নেয় এবং সহজেই মাড়ির প্রদাহ রোগ হয়। ডায়াবেটিস রোগীর দাঁতে ডেন্টাল ক্যারিজ বেশি দেখা যায়। এর কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে
ক. মুখের লালার সঙ্গে থাকা গ্লুকোজ মুখে জীবাণুর সঙ্গে মিশে এসিড তৈরি করে। এই এসিড দাঁতের শক্ত আবরণ এনামেলকে ধীরে ধীরে ক্ষয় করতে থাকে। একপর্যায়ে দাঁতের ভেতরে ক্ষয় তৈরি করে।
খ. এই রোগের প্রভাবে মুখের লালার পরিমাণ কমে যায়। মুখ শুঁকনো থাকার কারণে আহারের অতিরিক্ত কণাগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার হয় না। মুখে লেগে থাকা অতিরিক্ত খাদ্য কণাগুলো অনেক দিন দাঁতের গোঁড়ায় বা ফাঁকে জমে থাকে- যা মাড়ি প্রদাহ রোগের অন্যতম প্রধান কারণ।
এর প্রভাবে দাঁত দিয়ে খাদ্যদ্রব্য চিবানোর কর্মক্ষমতা কমে যায়। তাই খাবার চিবিয়ে খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়ভ। এর জন্য তাদের মুখে প্লাকের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
করণীয়
- চিনি বা শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যেমন : চকোলেট, বিস্কুট, লজেন্স, কেক, টফি, টুইংগাম, আইসক্রিম, মিষ্টি ইত্যাদি।
- খাবারের পর হালকা গরম পানি ও লবণ দিয়ে কুলি করতে পারেন। এতে মুখের ভিতর লেগে থাকা খাবারের অতিরিক্ত কণা বের হয়ে যাবে।
- ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করতে পারেন, এতে দুই দাঁতের মাঝখানে খাবার জমবে না।
- দুই বেলা সকাল ও রাতে খাবারের পর আঙুলের সাহায্যে অন্তত ২-৩ মিনিট মাড়ি মাসাজ করা যেতে পারে, এতে মাড়ির ফাঁকে ফাঁকে জমে থাকা খাদ্যকণাগুলো বেরিয়ে আসে এবং রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকে।
- প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ডা. আহমাদ বুলবুল : পিজিটি ট্রেইনি, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ