হিটস্ট্রোক প্রতিরোধে
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/05/06/photo-1430906775.jpg)
প্রচণ্ড গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত। তার ওপর আছে লোডশেডিং। বাইরে সূর্যের প্রচণ্ড উত্তাপ। গরমে অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন হিটস্ট্রোকে। আমাদের না জানার ফলে অনেক প্রাণ ঝরে যায়, এই সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে। সচেতনতাই হতে পারে এ প্রাণগুলোর রক্ষক।
দেহে আপনা আপনিভাবে তাপ উৎপন্ন হয়। এ তাপ আবার ঘাম, শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে দেহ থেকে বের হয়ে যায়। হিটস্ট্রোক হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে দেহের তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। কিন্তু দেহ থেকে তাপ বেরোনোর পদ্ধতিগুলো কাজ করতে পারে না। যেমন : ঘাম হয় না। ফলে বাড়তে থাকে দেহের তাপমাত্রা। দেখা দেয় বিভিন্ন রকমের উপসর্গ। যদি সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে মৃত্যু হতে পারে চোখের পলকে। রোদে যারা বেশি ঘোরাঘুরি করেন, বৃদ্ধ এবং শিশুদের এই সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে হিটস্ট্রোকের উপসর্গ দেখা গেলেও অনেক সময় তা দেখা যায় না। এ উপসর্গের মধ্যে আছে দেহের তাপমাত্রা অত্যধিক বেড়ে যাওয়া, ঘাম বন্ধ হওয়া ফলে শরীর লালচে হয়ে যাওয়া, দ্রুত হৃদস্পন্দন, শ্বাসকষ্ট, আচার-আচরণে পরিবর্তন, যেমন হঠাৎ রাগান্বিত হওয়া, অস্থিরতায় ভোগা, পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকা, খিচুনি এবং অজ্ঞানও হতে পারেন অনেকেই।
হিটস্ট্রোকের প্রথম ও প্রধান চিকিৎসা হলো আক্রান্ত ব্যক্তির দেহের তাপমাত্রা কমাতে হবে। এ জন্য কোনো ধরনের উপসর্গ দেখা দেওয়া মাত্রই আক্রান্ত ব্যক্তিকে রোদ থেকে সরিয়ে ঠাণ্ডা জায়গায় নিতে হবে। শরীরের কাপড় যতটুকু সম্ভব খুলে ফেলে শরীরে ঠাণ্ডা পানি ঢালতে হবে। তবে বরফ শীতল পানি ঢালা যাবে না। কারণ এতে রক্তনালিগুলো সংকোচন হয়ে দেহের তাপমাত্রা কমার পরিবর্তে আরো বাড়বে, রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হবে। রোগীকে বাতাস করতে হবে। কুচকি ও বোগলের নিচে আইস প্যাক রাখলে তাপমাত্রা দ্রুত কমে আসবে।
হিটস্ট্রোক থেকে রক্ষা পাবার জন্য বাইরে রোদে বেশি ঘোরাঘুরি ও রোদে একটানা বেশি শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করা যাবে না। বেশি বেশি করে পানি, শরবত, স্যালাইন ও তরল জাতীয় পদার্থ পান করতে হবে। গরমকালে অ্যালকোহল, চা-কফি কম পান করতে হবে। কারণ এগুলো পানিশূন্যতার মাধ্যমে হিটস্ট্রোককে তরান্বিত করে। গরমকালে স্যালাইন বেশি করে পান করতে হবে।
রোদে বেশিক্ষণ থাকবেন না। রোদে বাইরে রেরোলে ছাতাও ব্যবহার করুন। গরমের সময় সুতি, হাল্কা রঙের ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করুন। কেননা সাদা কাপড়ের ওপর তাপ পড়লে তা প্রতিফলিত হয়ে ফিরে যায় ফলে দেহের তাপমাত্রা কম থাকে। তবে রঙিন কাপড় পড়লে তা তাপ শোষণ করে দেহের তাপকে বাড়িয়ে দেয়।
শিশুদের ক্ষেত্রে হিটস্ট্রোক থেকে রক্ষার জন্য বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। তাদের পানি ও অন্যান্য তরল খাবার বেশি পরিমাণে দিতে হবে। রোদে যেন খেলাধুলা না করে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু : মেডিকেল অফিসার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।