বিচ্ছেদের চাপ সামলাতে যা করবেন
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2016/10/19/photo-1476850925.jpg)
মানব সভ্যতার বিবর্তনের সঙ্গে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কগুলো ক্রমেই জটিল হয়ে যাচ্ছে। ভালোবাসার সম্পর্কে যখন বন্ধনগুলো আলগা হয়ে যায়, তখন সম্পর্কে বিচ্ছেদের মতো ঘটনাগুলো ঘটে। সেটা যেমন দীর্ঘমেয়াদি ভালোবাসার সম্পর্কের ক্ষেত্রে হয়, তেমনি বৈবাহিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও। দুজন ব্যক্তির মধ্যে বিশ্বাসের অভাব, শ্রদ্ধাবোধের অভাব, স্বচ্ছতার অভাব, অহংবোধ, অতিরিক্ত রাগ, মতভেদ, ভুল বোঝাবুঝি, ভিন্ন মানসিকতা, বোঝাপড়ার অভাব ইত্যাদি দুটো মানুষের মধ্যকার সম্পর্ক ভাঙার পেছনে ভূমিকা রাখে। যেকোনো বিচ্ছেদই বেদনাদায়ক।
আজকের লেখাটি সেসব ব্যক্তির জন্য, যাঁদের ভালোবাসার সম্পর্কে বা বৈবাহিক সম্পর্কে বিচ্ছেদ হয়েছে এবং তারা এই ঘটনার সঙ্গে খাপ খাইয়ে উঠতে পারছেন না। বুঝে উঠতে পারছেন না, এই কষ্টের থেকে বেরিয়ে কী করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাবেন। কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলে বিচ্ছেদের ফলে যেসব চাপ তৈরি হয়, তা মোকাবিলা করা সম্ভব। এগুলো হলো :
• যেকোনো সম্পর্ক শেষ হওয়ার পর অত্যন্ত কষ্ট হয়। তাই সেই কষ্ট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য নিজেকে ভালোলাগার কাজে ব্যস্ত রাখুন। মনে রাখবেন, এমন সময়ে কখনো কোনো ভালো লাগার কাজ করতে ইচ্ছা হবে না। তবে তার পরও জোর করে করার চেষ্টা করতে হবে।
• কোনো ভালো লাগার জায়গা থেকে কিছুদিনের জন্য ঘুরে আসতে পারেন।
• ফেসবুক ও অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়া মানুষটিকে অপসারণ করুন।
• কেন আমার সঙ্গে এমন হলো বা ও কেন এমন করল—সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর এই প্রশ্নটা অনেকেরই মাথায় ঘোরে। এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা বন্ধ করুন। কারণ, যিনি চলে গেছেন, তাঁর কাছে এর উত্তর চেয়ে লাভ নেই। তিনি এর উত্তর কখনোই দেবেন না।
• অনেকে তাঁর সঙ্গে কেন এমন করল, তাঁর দোষ কী ইত্যাদি জানার জন্য সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়ার পরও ভালোবাসার মানুষটিকে বারবার ফোন দেয়, মেসেজ করে। এটা বন্ধ করুন।
• পুরোনো চিঠি ও ছবি ছিঁড়ে ফেলুন, ই-মেইল, মেসেজ ইত্যাদি ডিলিট করুন।
• সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়া মানুষটিকে ফেসবুকে ফলো করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ, ফেসবুকে ফলো করলে ওই মানুষটিকে সুখী দেখে মনের কষ্টটা বাড়ে। তা ছাড়া এই কাজটি করার ফলে ভেঙে যাওয়া সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার বদলে কষ্টটা ব্যক্তিকে আরো বেশি গ্রাস করে।
• পরিচিত কারো কাছ থেকে সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়া মানুষটি সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া বন্ধ করুন।
• যে কাজগুলো করলে নিজের আবেগকে ধরে রাখা কঠিন, সেগুলো না করা। সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার পর পুরোনো সম্পর্ক নিয়ে পোস্টমর্টেম করা বন্ধ করুন।
অর্থাৎ সে কী বলেছিল, তার জবাবে আপনি কী বলেছিলেন, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ বন্ধ করুন। কারণ, পোস্টমর্টেম করে কোনো লাভ হয় না; বরং পুরোনো বিষয়গুলো থেকে বের হওয়া সম্ভব হয় না, কষ্ট দীর্ঘস্থায়ী হয়।
• নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করুন। কোন পরিস্থিতিতে নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না, তা চিহ্নিত করুন। নেতিবাচক চিন্তাগুলো নেতিবাচক আবেগের জন্ম দেয়। তাই নিজের নেতিবাচক চিন্তাগুলোকে চিহ্নিত করে তা ইতিবাচকে রূপান্তরিত করুন।
• নিজেকে বলুন সম্পর্কটা আপনার জন্য সঠিক ছিল না। যা হয়েছে, তা আপাতত আপনার জন্য কষ্টকর হলেও এটাই আপনার জন্য সঠিক।
• অন্য ব্যক্তির সমালোচনা গঠনমূলকভাবে নিতে হবে। সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে অনেকে কথা বলতে পারে। তবে বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে উপেক্ষা করুন।
অন্যের কথায় নিজেকে হীনমন্য না ভেবে নিজের ওপর আস্থা রাখুন।
• সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়া মানুষটিকে ক্ষমা করুন।
• নিজের ভালো দিকগুলো ও সফলতাগুলো দেখার চেষ্টা করুন।
• আশপাশে অনেক মানুষ আছে, যাঁরা আপনাকে অনেক ভালোবাসে, তাঁদের ভালোবাসা উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন।
• খারাপ লাগাগুলো শেয়ার করতে চাইলে একই জেন্ডারের কারো কাছে শেয়ার করুন। ভিন্ন জেন্ডারের কারো কাছে শেয়ার করতে গেলে অনেক সময় তাঁর দেওয়া আবেগীয় সাহায্যের কারণে তাঁর প্রতি দুর্বলতা তৈরি হতে পারে, আবেগ দ্বারা আচ্ছন্ন থাকায় আবার ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ থাকে।
• কৌশলগুলো একবার-দুবার প্রয়োগ করার চেষ্টা করলেই মন খারাপ থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব নয়। তাই উপরে উল্লেখিত কৌশলগুলো অনুসরণ করতে হবে। যত অনুশীলন করবেন, তত সফলভাবে কৌশলগুলো প্রয়োগ করতে পারবেন।
• নিজেকে গুটিয়ে না রেখে সবার সঙ্গে মিশতে হবে।
• নিজে নিজে চেষ্টা করে সফল না হলে মনোচিকিৎসকের সাহায্য নিন।
• খুব অস্থির লাগলে ব্রিদিং রিলাক্সেশন করুন। নাক দিয়ে ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নিন, বুকের ভেতর সমস্ত খালি জায়গা বাতাসে ভরে ফেলুন। দমটা অল্পক্ষণ আটকে রাখুন, তারপর মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। এভাবে পর পর তিনবার করুন।
লেখক : ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট, ন্যাশনাল ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টার।