অ্যান্টিবায়োটিক সচেতনতা সপ্তাহ
অযথা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে কী হয়?

আমাদের একটি সাধারণ প্রবণতা হচ্ছে, যেকোনো রোগে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ফার্মেসিতে গিয়ে দোকানির পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খাওয়া শুরু করা। বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।
এভাবে উল্টোপাল্টা অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া মানবদেহে বিভিন্ন তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা তৈরি করে। অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার বন্ধ করা এবং মানুষের সচেতনতা বাড়াতে বিশ্বব্যাপী ১৪ থেকে ২০ নভেম্বর অ্যান্টিবায়োটিক সপ্তাহ পালিত হচ্ছে।
অ্যান্টিবায়োটিক হচ্ছে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ। এটি ব্যাকটেরিয়া দিয়ে সৃষ্ট রোগের চিকিৎসায় এবং রোগ প্রতিরোধে ব্যবহার করা হয়।
অ্যান্টিবায়োটিক রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে অথবা ব্যাকটেরিয়ার বংশবিস্তার কমিয়ে জীবন রক্ষা করে।
আইসিডিডিআরবির এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। গ্রাম্য চিকিৎসক এবং ফার্মেসিতে বিক্রেতারা অবাধে অ্যান্টিবায়োটিক দিচ্ছেন। এর শতকরা ৭৫ ভাগই সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে না।
অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষতিকর দিক
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে : উল্টোপাল্টা বা অযথা অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার শরীরের উপকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে।
২. ওজন বৃদ্ধি করে : অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহারে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় শারীরিক স্থূলতার ঝুঁকি বাড়ে।
৩. পেটের প্রদাহ করে : দীর্ঘস্থায়ী অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারে অন্ত্রের দেয়ালে ঘা সৃষ্টি করতে পারে। এটি হজমে ব্যাঘাত ঘটিয়ে ডায়রিয়া করতে পারে।
৪. লিভারের ক্ষতি করে : লিভারের ক্ষতিসাধনের জন্য অন্যান্য ওষুধের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক সবচেয়ে দায়ী।
৫. টাইপ-২ ডায়াবেটিসের জন্য দায়ী : অ্যান্টিবায়োটিক অগ্ন্যাশয়ের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিয়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়।
৬. অ্যাজমার জন্য দায়ী : অ্যান্টিবায়োটিকের অযথা ব্যবহার অ্যাজমা থেকে রক্ষাকারী ব্যাকটেরিয়া নির্মূল করে। এতে অ্যাজমা হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই বেড়ে যায়।
৭. উপকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে : আমাদের অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া প্রোবায়োটিককে ধ্বংস করে। এ ছাড়া ফটো অ্যালার্জি তৈরি করে।
অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষতিকর দিক রোধে করণীয় :
১. চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া সাধারণ জ্বর, ঠান্ডা, কাশির রোগে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার না করা।
২. চিকিৎসকের পরামর্শমতো ডোজ ও সময় অনুসারে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা।
৩. অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হলে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে যথাযথ অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে।
৪. মেয়াদোত্তীর্ণ অ্যান্টিবায়োটিক সেবন না করা।
৫. অতীতে অসুস্থতার জন্য দেওয়া অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া আবার একই রোগে ব্যবহার না করা।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ, সাভার, ঢাকা।