পুরুষের ক্যানসার ঝুঁকির তথ্য জানা যাবে মুখের লালা পরীক্ষায়

সারাবিশ্বে প্রতিবছর ফুসফুস ক্যানসারের পরই প্রোস্টেট ক্যানসারে সবচেয়ে বেশি পুরুষের মৃত্যু হয়। এই বিশাল প্রাণহানি কমানো সম্ভব যদি প্রাথমিক অবস্থায় এই ক্যানসার শনাক্ত করা যায়। বর্তমানে প্রোস্টেট ক্যানসার শনাক্ত করা হয় 'প্রস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন টেস্ট' বা পিএসএ টেস্টের মাধ্যমে। এই পদ্ধতিটি অনেক সময় ভুল তথ্য দিতে পারে, তখন উপকারের চেয়ে বরং ক্ষতিই বেশি হয়ে যায়।
যুক্তরাজ্যের একদল বিজ্ঞানী এই প্রোস্টেট ক্যানসার শনাক্তে একটি নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। এ পদ্ধতিতে মুখের লালা পরীক্ষা করেই জানা যাবে কেউ এই মারাত্মক রোগটির ঝুঁকিতে আছেন কিনা। যার মাধ্যমে মানুষ এই রোগটি মোকাবিলা করার জন্য যথেষ্ট সময় পাবেন।
যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, এটি প্রোস্টেট ক্যানসার পরিস্থিতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। এই গবেষণায় পুরুষদের ডিএনএ বিশ্লেষণ করে দেখা হয়, কারা জন্মগতভাবে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। এই ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের যখন বায়োপসি এবং এমআরআই স্ক্যান করা হয় তখন কিছু আগ্রাসী ধরনের ক্যানসার শনাক্ত হয়েছে, যা অন্যভাবে হয়তো এত তাড়াতাড়ি ধরা পড়ত না।
তবে এখনো এই পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাণ বাঁচানো সম্ভব কিনা, তা প্রমাণিত হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের পরীক্ষা হাসপাতালগুলোতে নিয়মিত চালু করতে আরও কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।
যুক্তরাজ্যে প্রতি বছর প্রায় ১২ হাজার পুরুষ প্রোস্টেট ক্যানসারে মারা যান। সম্প্রতি দেশটির অলিম্পিক সাইক্লিস্ট স্যার ক্রিস হয় প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুপথযাত্রী হওয়ার খবর আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এরপর দেশটিতে স্বাস্থ্যবান পুরুষদের নিয়মিত ক্যানসার স্ক্রিনিং টেস্ট করার দাবি জোরালো হয়েছে। এই প্রোস্টেট ক্যান্সার শুধু যুক্তরাজ্যেই পুরুষদের মৃত্যুর অন্যতম বৃহৎ কারণ নয় বরং এশিয়া মহাদেশের দেশগুলোর জন্যও অন্যতম একটি কারণ।
নতুন উদ্ভাবিত এই মুখের লালা পরীক্ষা দেহে ক্যানসারের চিহ্ন আছে কি নাই তা খুঁজে দেখা হয় না, বরং প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায় পুরুষদের ডিএনএতে এমন ১৩০টি মিউটেশন শনাক্ত করা হয়।
গবেষণায় ৫৫-৬৯ বছর বয়সি পুরুষদের পরীক্ষা করে তাদের ঝুঁকি নির্ধারণ করা হয়। যারা ঝুঁকির শীর্ষ ১০ শতাংশে ছিলেন তাদের আরও পরীক্ষার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। এই পরীক্ষার মধ্যে ছিল বায়োপসি এবং এমআরআই।
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, প্রোস্টেট ক্যানসারের উচ্চ ঝুঁকির ৭৪৫ জন পুরুষের মধ্যে ৪৬৮ জন অতিরিক্ত পরীক্ষা করিয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৭৭ জনের প্রোস্টেট ক্যানসার শনাক্ত হয়েছে। যার মধ্যে ৭৪ জনের ক্যানসার প্রচলিত পরীক্ষায় এই পর্যায়ে ধরা পড়তো না।