এফডিসিতে নায়ক জসিমকে স্মরণ করে ‘নায়ক জসিম উৎসবের’ আয়োজন করা হয় গতকাল শুক্রবার। অনুষ্ঠানটির আয়োজক ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা চিত্রনায়ক জসিম স্মৃতি একাডেমি’ নামের একটি সংগঠন। 

গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এফডিসির মান্না ডিজিটাল কমপ্লেক্সের সামনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল উৎসবটি।

অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন নায়িকা একা ও ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা চিত্রনায়ক জসিম স্মৃতি একাডেমি’র সভাপতি সোহেল হক। 

অনুষ্ঠানে অপ্রাসঙ্গিক আলোচনা দর্শকদের মাঝে হাস্যরসের সৃষ্টি করেছিল। অনুষ্ঠানে ছিল না চলচ্চিত্র অঙ্গনের ১৮টি সংগঠনের কেউই। নায়ক জসিমের পরিবারের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। 

এদিকে, অনুষ্ঠানটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নায়ক জসিমের ছেলে এ কে রাহুল। এনটিভি অনলাইনকে জসিমের ছেলে এ কে রাহুল বলেন, ‘গত বছর যখন এই অনুষ্ঠান করা হয়েছিল তখন সবাইকে আমি অনুরোধ করে বলেছিলাম, আবার বাবাকে যেন আর অনুষ্ঠানের নামে এভাবে অপমান করা না হয়। গতকাল আবারও দ্বিতীয় বারের মতো একই ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। আমি মনে করি, এভাবে এফডিসিতে অনুষ্ঠান করে নায়ক জসিমকে অপমান করা হয়েছে।’

চলচ্চিত্রকর্মীদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে রাহুল আরো বলেন, ‘আমি সবসময় শুনে এসেছি আমার বাবা চলচ্চিত্রের জন্য অনেক কিছু করে গেছেন। অথচ আমার বাবার নামে অনুষ্ঠান করছে রাস্তার একটি সংগঠন। সেটাও আবার এফডিসির সবার সামনে। এটাও কী দেখার কেউ নেই? আমি খবর পেয়েছি বাবার সঙ্গে যাঁরা কাজ করতেন বা এখন যাঁরা চলচ্চিত্রে কাজ করছেন তাঁদের কেউ এই অনুষ্ঠানে ছিলেন না। আমি জানতে চাই, এই অনুষ্ঠানটি যারা করছে, তারা আসলে কারা? এফডিসিতে তারা কীভাবে অনুষ্ঠান করে? এসব দেখার কি কেউ নেই আমাদের শিল্পী সমিতিতে? এভাবে সম্মান দিতে হবে না নায়ক জসিমকে। প্লিজ, আপনারা শুধু খেয়াল করবেন আপনাদের সামনে যেন আবার বাবাকে বাইরের কেউ এসে অপমান করতে না পারে।’ 

অনুষ্ঠানের বিষয়ে আগে থেকে জানতেন কি-না জানতে চাইালে রাহুল বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে অনুষ্ঠান নিয়ে যোগাযোগ করেছিলেন কয়েকজন। কিন্তু আমরা আগেই বলেছিলাম যে, গত বছরের অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা খারাপ ছিল। যদি এবার অনুষ্ঠান করা হয় তাহলে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট গুণীব্যক্তিসহ আমাদের সঙ্গে বসার জন্য। কিন্তু এরপর তাদের সঙ্গে আর কথা হয়নি।’ 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি গতকাল অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম কিন্তু অনুষ্ঠানের অবস্থা এতটা বাজে হবে আমি ভাবতে পারিনি। আমি আশা করেছিলাম, জসিম ভাইয়ের সঙ্গে যাঁরা কাজ করেছেন তাঁদের দেখতে পাব। পরে জানতে পরলাম এই অনুষ্ঠানের বিষয়ে অনেকেই জানেন না। আমি শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে চলচ্চিত্র পরিবারের পক্ষ থেকে জসিম ভাইয়ের ছেলে ও তাঁর পরিবারের কাছে লজ্জিত ও ক্ষমা প্রার্থী। এরপর এফডিসিতে আর এমন অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হবে না।’ 

বাংলা চলচ্চিত্রে জসিমের আবির্ভাব ও উত্থান আশির দশকে। খলচরিত্র দিয়ে চলচ্চিত্র যাত্রা শুরু করলেও তিনি নায়ক হিসেবেই তুমুল সাফল্য অর্জন করেন। দেওয়ান নজরুল পরিচালিত ‘দোস্ত দুশমন’ ছবি দিয়ে তিনি চলচ্চিত্র যাত্রা শুরু করেন। এই ছবিটি ছিল রমেশ সিপ্পির বিখ্যাত ছবি ‘শোলে’-র রিমেক, আর এতে জসিম অভিনয় করেছিলেন খলচরিত্রে। বলিউডের কিংবদন্তি খলনায়ক আমজাদ খানের ‘গব্বর সিং’ চরিত্রটিকেই বাংলায় বড়পর্দায় তুলে ধরেছিলেন জসিম। প্রায় ৩০০ ছবিতে অভিনয় করা এই অভিনেতা ১৯৯৮ সালের ৮ অক্টোবর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।