ভুল লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নেমে হারল বাংলাদেশ
বৃষ্টি আইনে ১৬ ওভারে ১৪৮ রানের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ। ম্যাচের এক ওভার খেলা শেষও হয়েছিল। এমন সময় জানতে পারে লক্ষ্যটা আসলে ১৪৮ নয়, ১৭১ রানের। এমন ভুল লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নেমে চাপ সামলে ভালোভাবেই শুরু করে বাংলাদেশ। রান তাড়া করতে নেমে ঝড়ো শুরু এনে দেন বাঁহাতি ওপেনার সৌম্য সরকার। তাঁর ব্যাটে আশা জাগে বাংলাদেশের। কিন্তু এত রানের চাপ শেষ পর্যন্ত সামলাতে পারেনি বাংলাদেশ। তাই সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেও হেরে গেল বাংলাদেশ। ২৮ রানের জয় নিয়ে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নিল নিউজিল্যান্ড।
নেপিয়ারে আগে ব্যাট করে ১৭.৫ ওভারে পাঁচ উইকেটে ১৭৩ রান করে নিউজিল্যান্ড। তবে বৃষ্টি আইনে ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে ১৬ ওভারে বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৭১। সে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৪২ রানে থেমে যায় বাংলাদেশ।
বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ডানহাতি ওপেনার লিটন দাসকে হারায় সফরকারীরা। হামিশ বেনেটের করা বল পুল করেছিলেন লিটন। স্কয়ার লেগ দিয়ে বল চলে যায় সীমানার কাছে। সেখানে ছিলেন গ্লেন ফিলিপস। ক্যাচ নিতে ভুল করেননি তিনি। ধারাবাহিক ব্যর্থ থাকা লিটন পাঁচ বলে করেন ছয় রান।
লিটনকে হারানোর ধাক্কা ভালোভাবেই সামলান সৌম্য সরকার। মোহাম্মদ নাঈমের সঙ্গে দ্বিতীয় জুটিতে ঝড় তোলেন তিনি। পাওয়া প্লেতে খুব একটা রান না আসলেও মাঝপথে রানের গতি বাড়ান সৌম্য।
সৌম্য খেলেছেন আগ্রাসীভাবে। তাঁকে ভালো সঙ্গ দেন নাঈম। এই জুটিতে আশা জাগায় বাংলাদেশের। ছুটতে থাকা সৌম্য মাত্র ২৫ বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে তুলে নেন হাফসেঞ্চুরি। ৫২ টি-টোয়েন্টি খেলে এই নিয়ে নিজের তৃতীয় হাফসেঞ্চুরির দেখা পান তিনি।
কিন্তু বেশি দূর যেতে পারেননি সৌম্য। টিম সাউদির দ্বিতীয় স্পেলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়লেন লং অনে। ২৭ বলে ৫১ রান করেন তিনি।
সৌম্যের পর সাজঘরের পথে হাঁটেন নাঈমও। ৩৫ বলে ৩৮ রানে থামেন নাঈম। সৌম্য-নাঈমের জুটিতে জয়ের আশা কিছুটা জাগলেও শেষ পর্যন্ত আর সম্ভব হয়নি। এই জুটি ভাঙলে নির্ধারিত ১৬ ওভারে ১৪২ রানে থেমে যায় বাংলাদেশ।
নেপিয়ারে ফিল্ডিংয়ে নেমেও শুরুটা ভালো হয় বাংলাদেশের। ইনিংসের চতুর্থ ওভারেই বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন তাসকিন আহমেদ। নিজের স্পেলের প্রথম ওভারে বোলিংয়ে এসে মার্টিন গাপটিলের ব্যাটে দুটি ছক্কা হজম করেন তিনি। শেষ বলেই তুলে নেন ওপেনার ফিন অ্যালেনের উইকেট।
তাসকিনের বলে প্রথমে জীবন পান অ্যালেন। তবে জীবন পেয়েও থিতু হতে পারেননি। ফের শট খেলতে গিয়ে বল উঁচুতে তুলে দেন অ্যালেন। স্কয়ার লেগে ক্যাচ ধরে নেন নাঈম শেখ। ফলে ১০ বলে ১৭ রান করে থামতে হয় অ্যালেনকে।
অ্যালেনের পর গাপটিলের ক্যাচটিও তাসকিনই ধরেন। ষষ্ঠ ওভারে সাইফউদ্দিনের বলে ঝাপিয়ে পড়ে গাপটিলকে ফিরিয়ে দেন তিনি। এরপর গত ম্যাচে অভিষেক হওয়া শরিফুল ইসলাম তুলে নেন ডেভন কনওয়ের উইকেট। দলীয় ৫৫ রান তুলতে তিন উইকেট হারিয় স্বাগতিকেরা।
নিউজিল্যান্ড চার উইকেট হারানোর পর ম্যাচ জমে উঠে। এমন সময়ে শুরু হয় বৃষ্টি। ১৩তম ওভারে বৃষ্টি শুরু হলে খেলা ২৫ মিনিটের মতো বন্ধ থাকে। বৃষ্টির পর খেলা শুরুর পরপরই বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন মেহেদি হাসান। বৃষ্টির পর দ্বিতীয় বলেই নিজের বলে নিজেই ক্যাচ ধরে চ্যাপম্যানকে সাজঘরে পাঠান মেহেদি। ১১১ রানের মাথায় পঞ্চম উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড।
পরপর উইকেট হারানোর ধাক্কা অবশ্য সামলেছেন ফিলিপস। ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন তিনি। ২৭ বলে চার বাউন্ডারি দুই ছক্কায় তুলে নেন ব্যক্তিগত হাফসেঞ্চুরি। ফিফটি ছোঁয়ার পরের বলেই আবার হাঁকান বাউন্ডারি। শেষ পর্যন্ত বাকিদের নিয়ে নিউজিল্যান্ডকে ১৭.৫ ওভারে ১৭৩ রানের সংগ্রহ এনে দেন। এরপর বৃষ্টি শুরু হলে কার্টেল ওভারে বাংলাদেশের সামনে ১৬ ওভারে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৭১।
বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে ৪৫ রান দিয়ে দুটি উইকেট নেন মেহেদি। ৪৯ রান দিয়ে একটি নেন তাসকিন। সমান একটি করে শিকার করেন সাইফউদ্দিন ও শরিফুল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
নিউজিল্যান্ড : ১৭.৫ ওভারে ১৭৩/৫ (গাপটিল ২১, অ্যালেন ১৭, কনওয়ে ১৫, উইলি ১৪, ফিলিপস ৫৮, চ্যাপম্যান ৭, মিচেল ৩৪ ; নাসুম ৪-০-২৫-০, তাসকিন ৩.৫-০-৪৯-১, সাইফউদ্দিন ৩-০-৩৫-১, শরিফুল ৩-০-১৬-১, মেহেদি ৪-০-৪৫-২)।
বাংলাদেশ : ১৬ ওভারে ১৪২/৭ (লিটন ৬, সৌম্য ৫১, নাঈম ৩৮, মাহমুদউল্লাহ ২১, আফিফ ২, মিঠুন ১, মেহেদি ১২, সাইফউদ্দিন ৩, তাসকিন ০ ; সাউদি ৪-০-২১-২, অ্যাডাম ৩-০-২০-১, ইশ শোধি ৩-০-২১-০)।
ফল : ২৮ রানে হারল বাংলাদেশ।
সিরিজ : ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতল নিউজিল্যান্ড।