লক্ষ্মীপুরে জোড়া খুনের রহস্য উদঘাটন, গ্রেপ্তার ৫
লক্ষ্মীপুরে জোড়া খুনের রহস্য উদঘাটন এবং পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একটি অডিও কল রেকর্ডের সূত্র ধরে হত্যার ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) দুপুরে পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে টাকা ও স্বর্ণালংকারের লোভেই বাসায় ঢুকে ব্যবসায়ী আবু ছিদ্দিক (৭৩) ও তাঁর সহধর্মিণী আতেরুন নেছাকে হত্যা (৬৫) করা হয় বলে দাবি করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সহকারী পুলিশ সুপার (রামগতি সার্কেল) সাইফুল আলম চৌধুরী ও সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসলেহ উদ্দিন।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন কামরুল হাসান, রুবেল, জুয়েল, কাউছার হোসেন ও আবুল কাশেম খোকন ওরফে দুদু মিয়া । এ ছাড়া বাহার নামে এক জন মাদক মামলায় গ্রেপ্তার কক্সবাজার কারাগারে রয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্রেপ্তার হওয়া হাসানের সদর উপজেলার শাকচর ইউনিয়নের কাচারিবাড়ি এলাকায় একটি ইলেক্ট্রিক সরঞ্জামের দোকান রয়েছে। তিনি নিজেও ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি। জুয়েল, বাহার, রুবেল ও কাউছার তাঁর বন্ধু। তাঁরা একসঙ্গেই শাকচর গ্রামের ছইমিঝি বাড়িতে আড্ডা দিতেন। ওই বাড়ির সামনেই একটি একতলা পাকাভবনে আবু ছিদ্দিক ও তাঁর স্ত্রী আতেরুন নেছা একা বসবাস করতেন। একমাত্র পালকপুত্র আলমগীর তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। এদিকে ছিদ্দিক ও তার স্ত্রীর একাকীত্বের সুযোগ নিয়ে দুদু মিয়া তাঁদের বাসা থেকে টাকা-স্বর্ণালংকার লুটের পরিকল্পনা করেন। এটি তিনি হাসান ও তাঁর বন্ধুদের জানান। ঘটনার কিছুদিন আগেই আবু ছিদ্দিক জমি বিক্রি করেন। দুদু মিয়া সেই তথ্যও তাঁদের কাছে উপস্থাপন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এরপর অন্যদের না জানিয়েই হাসান, রুবেল ও বাহার রাতের অন্ধকারে জানালার গ্রিল টপকে ছিদ্দিকের বাসার ছাদে ওঠেন। একপর্যায়ে ছাদের দরজার তালা ভেঙে তাঁরা বাসায় ঢুকেন। তখন হাসানের সঙ্গে দুদু মিয়ার কথা হয় মোবাইলফোনে। এর পরই ছিদ্দিক ও তাঁর স্ত্রীর হাত-মুখ বেঁধে খাটে ফেলে রাখেন তারা। এতে ধস্তাধস্তিতে খাট ভেঙে যায়। পরে তারা আলমিরা ভেঙে কিছু না পেয়ে ছিদ্দিক ও তার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেন কোথায় কী আছে? কিন্তু বৃদ্ধ দম্পতির তখন কোনো সাড়া-শব্দ ছিল না। এরপর হাসানসহ তার বন্ধুরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, ঘটনাটি নিয়ে পরের দিন আলোচনা করলে হাসানসহ তাঁর বন্ধুদের দুদু মিয়া চুপ থাকার জন্য পরামর্শ দেন। দুদিন পর গত বছরের ১৮ অক্টোবর রাতে তালাবদ্ধ ঘর থেকে ছিদ্দিক ও তার স্ত্রীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর পরই তারা আত্মগোপনে চলে যান। পরিকল্পনা অনুযায়ী জুয়েল ও কাউছারও টাকার ভাগ চান। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। সেই ঘটনার একটি কল রেকর্ড পুলিশের হাতে আসে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে গতকাল সোমবার (৯ জানুয়ারি) দিনগত মধ্যরাতে হাসানকে জেলা শহরের মাদাম ব্রিজ এলাকা থেকে আটক করে। পরে হাসান আদালতে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। পরে জুয়েল, কাউছার, রুবেল ও দুদু মিয়াকে আটক করা হয়। তাদের হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে লক্ষ্মীপুর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসলেহ উদ্দিন জানান, সম্প্রতি একটি মাদক মামলায় বাহার কক্সবাজারে গ্রেপ্তার হন। তিনি এখন কক্সবাজার কারাগারে রয়েছে। সেখান থেকে আবেদন করে তাকে আনার প্রস্তুতি চলছে। আদালতে তার বিরুদ্ধে রিমান্ড চাওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, সদর উপজেলার শাকচর গ্রামে গত বছরের ১৮ অক্টোবর মধ্য রাতে তালাবদ্ধ ঘর থেকে অর্ধগলিত আবু ছিদ্দিক ও তার স্ত্রী আতেরুন নেছার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় তার ভাই খোকন বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় মামলা করেন।