সাংবাদিকদের নেতৃত্ব দিয়ে রিয়াজ উদ্দিন সবার হৃদয়ে স্থান নিয়েছেন
দেশবরেণ্য সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের জীবন ও কর্ম নিয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও প্রবীণ সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকতাকে সবকিছুর ওপরে স্থান দিতেন। তিনি ছিলেন একজন পেশাদার সাংবাদিক। সাংবাদিকদের সব ধরনের সমস্যা দূরীকরণসহ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি সাংবাদিকদের নেতৃত্ব দিয়ে সবার হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সম্পাদক পরিষদ ও সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। একুশে পদক পাওয়া সাংবাদিক ও দ্য ফিন্যান্সিয়াল হেরাল্ডের সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াবের অন্যতম সদস্য এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের চারবারের নির্বাচিত সভাপতি। গত শনিবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
স্মরণসভায় বক্তব্য দেন নোয়াব সভাপতি এ কে আজাদ, ডেইলি অবজারভার সম্পাদক ইকবাল সোবাহান চৌধুরী, দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম, দৈনিক সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন, সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল, বিএফইউজে সভাপতি ওমর ফারুক, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের ছেলে মাসরুর রিয়াজ প্রমুখ।
অবজারভার সম্পাদক ইকবাল সোবাহান চৌধুরী বলেন, রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ একজন খ্যাতনামা সাংবাদিক ছিলেন। পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে তিনি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ছিলেন। তিনি একজন সাংবাদিক হিসেবেই মৃত্যুবরণ করেছেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমরা একে একে অভিভাবক শূন্য হয়ে যাচ্ছি। রিয়াজ উদ্দিন ভাই শুধু একজন খ্যাতিমান সাংবাদিকই ছিলেন না, তিনি একজন দায়িত্বশীল অভিভাবক ছিলেন। কিছুদিন আগেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, রিয়াজ ভাইকে প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য করব।’
সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন বলেন, রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকতার সব কিছু অর্জন করেছেন। তিনি রিপোর্টার থেকে সম্পাদক হয়েছিলেন। উচ্চ স্লোগান না দিয়েও কীভাবে সমস্যার সমাধান করা যায়, আমরা তাঁর থেকে শিখেছি। তিনি পেশাগত মূল্যবোধ ধারণ করতেন।
বিএফইউজের সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ একজন আপাদমস্তক সাংবাদিক ছিলেন। তিনি ছিলেন সাংবাদিকদের বন্ধু। দল-মত নির্বিশেষে সবার কথা বলতেন। তিনি প্রেসক্লাবের চারবারের সভাপতি ছিলেন। সাংবাদিক সংগঠন বিএফইউজে দুভাগ হলেও তিনি কখনো দলকে প্রাধান্য দিতেন না, সব সাংবাদিকদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতেন।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন একাধারে ভালো মানুষ, ভালো সাংবাদিক, ভালো নেতা। তিনি শুধু পেশাগত দিকই খেয়াল রাখতেন না, ব্যক্তিগত-পারিবারিক বিষয়েও সাংবাদিকদের খোঁজ নিতেন। কোনো সংকটে রিয়াজ উদ্দিন ভাই থাকলে আমরা জানতাম এর সমাধান হবে।
যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন পেশাদারিত্ব বজায় রেখে কাজ করেছেন। সাংবাদিকদের মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক মতানৈক্য থাকতে পারে, কিন্তু তিনি পেশাদারিত্ব বজায় রেখে কাজ করেছেন। তিনি সবার শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। তিনি বিভক্ত সাংবাদিক ইউনিয়নের অবিভক্ত মানুষ ছিলেন। মতানৈক্য থাকতে পারে কিন্তু তাতে দূরত্ব বাড়ে না, এটা তিনি তাঁর আচরণ ও কর্মে প্রমাণ করেছেন। মেরুদণ্ড সোজা রেখে কথা বলার মতো সাহসী মানুষ ছিলেন তিনি।
রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের ছেলে মাসরুর রিয়াজ বলেন, ‘বাবা সব সময় আমাদের আদর্শিক একটা চেতনায় বড় করেছেন। সৎ পথে চলা, মানুষকে ভালোবাসার শিক্ষা দিতেন। তিনি পরিবার ও সংবাদমাধ্যম কর্মীদের সমানভাবে দেখতেন। বরং সংবাদকর্মীদের প্রতি বেশি উদার ছিলেন।’