সাতক্ষীরায় রায়ের পর আওয়ামী লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি মিছিল
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলায় বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে ১০ বছরসহ ৫০ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. হুমায়ূন কবীর এই রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পাল্টাপাল্টি মিছিল বের করে।
সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ডা. আ ফ ম রুহুল হক এবং সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে দলীয় নেতাকর্মীরা তাৎক্ষণিক আনন্দ মিছিল বের করে। রায়কে যুগান্তকারী বলে আখ্যায়িত করে তারা। তারা জানায়, এতে সাতক্ষীরার জনগণ কলঙ্কমুক্ত হলো। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
অপরদিকে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারিকুল ইসলাম, কামরুজ্জান ভুট্টোর নেতৃত্বে দলীয় আইনজীবী ও নেতাকর্মীরা আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে এবং সমাবেশ করে। তারা রায় প্রত্যাখ্যান করে জানায়, রায়ে আসামিরা ন্যায়বিচার পাননি।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট সাতক্ষীরায় একজন মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে দেখে মাগুরায় ফিরে যাচ্ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আসামিরা অত্যন্ত দুর্দান্ত, গুণ্ডা ও আগ্নেয়াস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, দলীয় ক্যাডার। মামলার ঘটনার দিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিল। তৎকালীন সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতি মো. হাবিবুল ইসলাম হাবিবের পরামর্শে ও নির্দেশক্রমে শেখ হাসিনাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে আসামিরা বেআইনি জনতাবদ্ধ হয়ে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, হাত বোমা, রামদা, লোহার রড, বাঁশের লাঠি, শাবল ইত্যাদি মারাত্মক অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে গুরুতর জখম ও খুন করার প্রস্তুতি নিয়ে সাতক্ষীরা জ-০৪-০০২৯ বাসটি দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। কলারোয়ায় পৌঁছালে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে তিনি প্রাণে রক্ষা পেলেও তাঁর সফরসঙ্গী জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগনেতা ফাতেমা জামান সাথী, আব্দুল মতিন, জোবায়দুল হক রাসেল ও শহীদুল হক জীবনসহ অনেকেই আহত হন। একইসময় সাতক্ষীরার বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও হামলার শিকার হন। এ ঘটনায় কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. মোসলেমউদ্দিন ২৭ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। এ মামলা থানায় রেকর্ড না হওয়ায় তিনি নালিশী আদালত সাতক্ষীরায় মামলাটি করেন। পরে এ মামলা খারিজ হয়ে গেলে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর ফের মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়। ২০১৫ সালে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। এর মধ্যে হত্যাচেষ্টা মামলায় এক আসামি রকিব ওরফে রাকিবুর রহমানের বয়স ঘটনার সময় ১০ বছর ছিল উল্লেখ করে হাইকোর্টে মামলা বাতিলের আবেদন করা হয়। ২০১৭ সালে ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ২৩ আগস্ট হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দিয়ে রুল জারি করেন। এ রুলের ওপর শুনানি শেষে গত বছরের ৮ অক্টোবর রুলটি খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।
আজ যে ৫০ আসামির রায় হয়েছে তাঁরা হলেন—সাবেক সংসদ সদস্য মো. হাবিবুল ইসলাম হাবিব, কলারোয়া পৌরসভার দুইবারের সাবেক মেয়র বিএনপিনেতা গাজী আক্তারুল ইসলাম, সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার, সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট আব্দুস সামাদ, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফ হোসেন ও আবদুর রকিব মোল্লা, মো. আব্দুল কাদের বাচ্চু, মো. আরিফুর রহমান ওরফে রঞ্জু, মো. নজরুল ইসলাম, রিপন, মো. আব্দুল রাজ্জাক, শেখ তামিম আজাদ মেরিন, মো. মফিজুল ইসলাম, মো. আব্দুল মজিদ, মো. হাসান আলী, মো. ইয়াছিন আলী, ময়না, মো. আব্দুস সাত্তার, খালেদ মঞ্জুর রোমেল, মো. তোফাজ্জেল হোসেন সেন্টু, মো. মাজহারুল ইসলাম, মো. আব্দুল মালেক, আব্দুর রব, মো. জহুরুল ইসলাম, মো. রবিউল ইসলাম, মো. গোলাম রসুল, রিংকু, মো. আব্দুল সামাদ, মো. আলাউদ্দিন, মো. আলতাফ হোসেন, সঞ্জু, মো. নাজমুল হোসেন, শাহাবুদ্দিন, মো. সাহেব আলী, মো. সিরাজুল ইসলাম, টাইগার খোকন ওরফে বেড়ে খোকন, জাবিদ রায়হান লাকী, রকিব, ট্রলি শহিদুল, কনক, শেখ কামরুল ইসলাম, মো. মনিরুল ইসলাম, মো. ইয়াছিন আলী, শেলী, মো. শাহিনুর রহমান, বিদার মোড়ল, মো. সোহাগ হোসেন, মো. মাহাফুজুর রহমান মোল্লা, মো. আব্দুল গফফার গাজী ও মো. মাহফুজুর রহমান সাবু।