ধানের চেয়ে খরচ কম হওয়ায় ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় এবার রেকর্ড পরিমাণ জমিতে চাষ হচ্ছে ভুট্টা। দাম ভালো ও খরচ কম হওয়ায় ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন স্থানীয় চাষিরা। চলতি বছর এ উপজেলায় ২ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালে ২ হাজার ৭৩ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়। বিগত বছরগুলোর পরিসংখ্যান বলছে, এ বছর উপজেলাটিতে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে ভুট্টা চাষ হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ধান উৎপাদনের চেয়ে ভুট্টার খরচ কম হওয়ায় চাষিরা ভুট্টা চাষের দিকে ঝুঁকছেন। ধান যেখানে বিঘা প্রতি ২০ থেকে ৩০ মণ পাওয়া যায়, সেখানে ভুট্টা বিঘা প্রতি ৪০ থেকে ৫০ মণ পাওয়া যায়। বাজারে ধান প্রতিমণ ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা বিক্রয় হলেও কাঁচা ভুট্টা প্রতি মণ ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আর শুকনা ভুট্টা প্রতি মণ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ধান উৎপাদনে সেচ খরচ বেশি লাগলেও ভুট্টা ক্ষেতে সেচ খরচ কম লাগে। তাছাড়া ধান উৎপাদনে যে পরিমাণ সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয়, সে তুলনায় ভুট্টা ক্ষেতে সার ও কীটনাশক ব্যবহার কম হয়।
সরজমিনে দেখা যায়, এ বছর উপজেলার রায়গ্রাম, নিয়ামতপুর, মালিয়াট ইউনিয়নে অধিক পরিমাণে ভুট্টা চাষ হচ্ছে। তাছাড়া উপজেলার সবকটি ইউনিয়নে ভুট্টা চাষ করছেন চাষিরা।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য থেকে জানা গেছে, ২০২৪ সালে উপজেলাটিতে ৩১ হাজার ৯৫ টন ভুট্টা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল। আর এ বছর ৩১ হাজার ১২৫ টন ভুট্টা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
উপজেলার সিংগী গ্রামের ভুট্টা চাষি অচিন্ত চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘আমি আগে কখনো ভুট্টার চাষ করিনি। তবে খোঁজ নিয়ে দেখলাম ধানের তুলনায় ভুট্টা চাষে খরচ কম। তাই এবার ২ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি।’
নরেন্দ্রপুর গ্রামের ভুট্টা চাষি আহাদ আলি বলেন, ‘হিসাব করে দেখেছি ভুট্টা চাষ লাভজনক। গত বছর আমার ভুট্টা ছিল ৪ বিঘা। আর এ বছর ৬ বিঘা ভুট্টা লাগিয়েছি। সব ঠিকঠাক থাকলে আশা করি লাভই হবে।’
কালীগঞ্জ উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাকারিয়া মোহন বলেন, ‘সঠিক নিয়মে ভুট্টা চাষ করার জন্য আমরা সবসময় চাষিদের পরামর্শ দিয়ে আসছি। সচেতনতার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও আমরা ব্যবহার করছি।’
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম রনি বলেন, ‘ধানের তুলনায় ভুট্টা চাষে সেচ খরচ কম আর ফলন বেশি। তাই ভুট্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা। তবে ভুট্টার জন্য ধান উৎপাদন কম হচ্ছে না। আশা করছি, সব মিলে উপজেলাটিতে ভুট্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।’