মায়ের চরিত্রে যারা দর্শক নন্দিত
খুব মিষ্টি ও শ্রুতিমধুর শব্দ ‘মা’। মায়ের সঙ্গে কোনো কিছুর তুলনা হয় না- এ কথা আমরা মানি এক বাক্যে। ‘মা’ প্রত্যেক সন্তানের জন্য এক অপার আশ্রয়স্থল। মায়ের চিরন্তন রূপ পর্দায় খুব দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন অভিনেত্রীরা। এই মা চরিত্রে যাঁরা অভিনয় করেন, তাঁদেরকে মায়ের শক্তি ও মমতা ধারণ করতে হয়। এই মায়ের চরিত্রে অভিনয় করে যে সকল গুণী অভিনেত্রীরা দর্শক নন্দিত হয়েছেন। মা দিবসে তাদের সম্পর্কে আমরা জানব-
আনোয়ারা
ঢালিউডের অসংখ্য ছবিতে মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী আনোয়ারা। পর্দায় দেশের অধিকাংশ নায়ক-নায়িকারই মা হতে দেখা গেছে এই গুণী অভিনেত্রীকে। তিনি মোট আটবার জাতীয় পুরস্কার লাভ করেছেন। মায়ের চরিত্রে অভিনয় করা উল্লেখযোগ্য সিনেমা হচ্ছে- ‘মায়ের স্বপ্ন, সমাধি,‘মায়ের হাতে বেহেস্তের চাবি’ 'গোলাপি এখন ট্রেনে', মায়ের চোখ, 'দাঙ্গা', 'রাধা কৃষ্ণ', 'ভাত দে', 'বর্তমান', 'শ্রাবণ মেঘের দিন।
খালেদা আক্তার কল্পনা
মায়ের ভূমিকায় আরেকজন বেশ জনপ্রিয় অভিনেত্রী হচ্ছেন খালেদা আক্তার কল্পনা। তিনি অসংখ্য সিনেমাতে মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। পর্দায় মা হিসেবে বেশ সফল একজন অভিনেত্রী তিনি। সিনেমাতে তার চোখের পানি দেখে অনেক দর্শক তাদের চোখের পানি ধরে রাখতে পারতেন না।
১৯৮৯ সালে জিনের বাদশা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। মায়ের চরিত্রে অভিনয় করা উল্লেখযোগ্য সিনেমা হচ্ছে- তিনি কন্যা, আনন্দ অশ্রু, কেয়ামত থেকে কেয়ামত, আমার প্রাণের প্রিয়া, ৭১ এর গেরিলা, পদ্মা মেঘনা যমুনা ও জিনের বাদশা।
ডলি জহুর
ঢালিউড সিনেমার আরেক জনপ্রিয় মা হলো ডলি জহুর। মা চরিত্রে অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী হয়েছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মায়ের চরিত্রে তিনি দাপটের সঙ্গে বড় ও ছোট পর্দায় বিচরণ করছেন। কুলি,বাবা কেন চাকর, স্বপ্নের ঠিকানা, চাওয়া থেকে পাওয়া,আনন্দ অশ্রু ও আমার মা, রাস্তার ছেলে, শ্বশুরবাড়ী জিন্দাবাদ,চাঁদের মত বউ ।
দিলারা জামান
দিলারা জামান হলেন বাংলাদেশি নাট্য ও চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। ষাটের দশকে কেন্দ্রীয় চরিত্রগুলোতে অভিনয়ের মাধ্যমে ক্যারিয়ার শুরু করলেও পরবর্তী সময়ে মা চরিত্রে পর্দায় জনপ্রিয় উঠেন এই অভিনেত্রী। ছোটপর্দায় বেশি অভিনয় করে মায়ের ভূমিকায় অনেক খ্যাতি অর্জন করেছেন তিনি। তবে বড় পর্দাতেও অভিনয় করতে দেখা গেছে একুশে পদকে ভূষিত এই অভিনেত্রীকে।
শাবানা
বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী শাবানা। তার প্রকৃত নাম আফরোজা সুলতানা রত্না। তিনি তার ৩৬ বছর কর্মজীবনে ২৯৯টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তুমুল জনপ্রিয় এই নায়িকাকে ‘সত্যের মৃত্যু নেই’ সিনেমায় প্রথমবারের মতো মায়ের ভূমিকায় দেখা যায়। এই সিনেমায় খুব প্রশংসিত হন এই অভিনেত্রী। তবে মা হিসেবে অভিনয় করা সিনেমার সংখ্যা খুব একটা বেশি নয়। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি অভিনয়ের জন্য ৯ বার ও প্রযোজক হিসেবে ১ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন এবং ২০১৭ সালে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন। বর্তমানে অভিনয়কে বিদায় জানিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন যুক্তরাষ্ট্রে।
সুচরিতা
ঢালিউডের জনপ্রিয় নায়িকা সুচরিতা নব্বই দশকের শেষে এসে মায়ের ভূমিকায় নিয়মিত অভিনয় শুরু করেন। চাষী নজরুল ইসলামের ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ ছবিতে অভিনয় করে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। ছবিটিতে দেশের জন্য নিজের সন্তানকে উৎসর্গের দৃশ্যটি দর্শকদের হৃদয়ে দাগ কেটে যায়।
ববিতা
ঢাকাই সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেত্রী ববিতা। তার পুরো নাম ফরিদা আক্তার পপি। সত্তরের দশকের সেরা অভিনেত্রী ছিলেন ববিতা। ক্যারিয়ার জুড়ে ববিতা ৩৫০-এর বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। সাতবার জাতীয় পুরস্কারজয়ী এই অভিনেত্রী নব্বই দশকের মাঝামাঝি এসে নিয়মিত মায়ের চরিত্রে অভিনয় করা শুরু করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- 'মহামিলন', 'মায়ের অধিকার', 'প্রাণের চেয়ে প্রিয়', 'অবুঝ বউ', 'খোদার পরে মা', 'মনের জ্বালা', সবাইতো ভালবাসা চায়’, ও ‘ওরা আমাকে ভাল হতে দিল না’। ২০১৬ সালে তাঁকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আজীবন সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করা হয়।
রাশেদা চৌধুরী
নব্বই দশকের শেষে এসে বাংলা চলচ্চিত্র মায়ের ভূমিকায় নিজেকে আবিষ্কার করেন রাশেদা চৌধুরী। এই পর্যন্ত তিনি দুই শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হচ্ছে ভেজা বেড়াল, টাকা, ম্যাডাম ফুলি, কাল সকালে ও ক্ষুদে যোদ্ধা।
এ ছাড়া ওয়াহিদা মল্লিক জলি, মায়া হাজারিকা, শর্মিলী আহমেদ, রেহানা জলি, শারমিন আক্তার,নূতন, শবনম, মিনু রহমান, অরুনা বিশ্বাস, সাবেরী আলম, রেবেকা ও সাবিহা জামান’সহ অনেক অভিনেত্রী মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন।