জরায়ুতে ফাইব্রয়েড : লক্ষণ ও চিকিৎসা

ফাইব্রয়েড হলো জরায়ুর টিউমার। সাধারণত মধ্য বয়সী নারীদের এ সমস্যা হয়ে থাকে। ফাইব্রয়েডের লক্ষণ ও চিকিৎসার বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. রাইসা সুলতানা।
বর্তমানে তিনি বিআরবি হাসপাতালে গাইনি ও অবস বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩৫৯৩তম পর্বে সাক্ষাতকারটি প্রচারিত হয়।
প্রশ্ন : নারীদের জরায়ুতে সাধারণত কোন কোন সমস্যাগুলো হয়ে থাকে?
উত্তর : যদি আমি টিউমারের কথা বলি, তাহলে সবচেয়ে প্রচলিত যেটি সেটি হলো, ফাইব্রয়েড। এটি এমন একটি টিউমার যেটি জরায়ুর মধ্যে হয়ে থাকে। এটি হলে নারীরা এসে বলেন, আমাদের তো পেট বড় হয়ে যাচ্ছে, তবে আমি গর্ভবতী নই। অথবা বলে আমরা খুব বেশি ভেজাইনাল ব্লিডিং হচ্ছে বা এমন হতে পারে ব্যথা হচ্ছে। তো আমাদের প্রথমে খুব ভালো করে ক্লিনিক্যাল ইতিহাস নিতে হবে। এই টিউমারটি সাধারণত মধ্য বয়সী নারীদের বেশি হয়ে থাকে। তাদের প্রথম যেটি অভিযোগ, সেটি হলো, অনেক ঋতুস্রাব হচ্ছে। ঋতুস্রাবের সময়ও দেখা যায় খুব রক্তপাত হচ্ছে। চাকা যাচ্ছে। তখন পরীক্ষা করে দেখা যায়। আর যদি বড় টিউমার হয়ে থাকে, তাহলে আমরা হাতে ধরলেই বুঝতে পারি। তবে এটি কোথা থেকে শুরু হচ্ছে, এটি নিশ্চিত হতে হবে। সে ক্ষেত্রে আমরা কিছু পরীক্ষার কথা বলি। যেহেতু তার রক্তপাত হচ্ছে, তাহলে তার হিমোগ্লোবিনের মাত্রাটা কত, এগুলো একটু নিশ্চিত হতে হবে। দেখা যায়, ফাইব্রয়েডের ক্ষেত্রে একটি আল্ট্রাসোনো খুব জরুরি। আল্ট্রাসোনোগ্রাফি থেকে ১০০ ভাগ জানা যায়।
প্রশ্ন : ফ্রাইব্রয়েড হলে পরবর্তী পদক্ষেপ কী থাকে?
উত্তর : এরপর বুঝতে হবে কী ধরনের চিকিৎসা আমি দেব। অনেক বেশি লক্ষণ থাকলে এবং পরীক্ষা করে যদি দেখা যায়, বড় একটি টিউমার তাহলে আমরা সার্জারি করি। এর আগে জেনে নেওয়া হয় তার পারিবারিক ইতিহাস। পরিবার সম্পূর্ণ হয়েছে কি না। ক্লিনিক্যাল লক্ষণ যদি তেমন বেশি না থাকে, টিউমার ছোট আকারের থাকে, তাহলে সেটি ফলোআপে রাখা যায়।
প্রশ্ন : কোন আকারের হলে ফলোআপে রাখেন?
উত্তর : অনেক সময় এক থেকে দুই সেন্টিমিটার হলেই রোগীরা ঘাবড়ে চলে আসে। এখানে খুব ভালোভাবেই ফলোআপে থাকা যায়। কারণ, ফাইব্রয়েডের ক্ষেত্রে যদিও ম্যালিগনেন্সি হয়, তবে খুব কম। এটি ক্যানসারে যাওয়ার আশঙ্কা খুব কম। বিনাইন বেশি হয়।
আর যদি দেখা যায়, এটি অনেক বড় হয়ে গেছে, অনেক লক্ষণ প্রকাশ করছে, সেক্ষেত্রে আবার দেখতে হবে তার সমস্যাটি কতটুকু। একটা/ দুটো থাকলে আমরা ফেলে দিলাম। সে অল্প বয়সের মেয়ে, পরিবার সম্পূর্ণ করেনি, আর যদি উনি পরিবার সম্পূর্ণ করে ফেলেন, বয়স হয়ে গেছে, উনার আর বাচ্চা নেওয়ার দরকার নেই, ৪৫ এর ওপর বয়স হয়ে গেছে- সমস্যা হচ্ছে, ব্যথা হচ্ছে, তখন আমরা সার্জারি করি। সেক্ষেত্রে বলে রাখতে চাই, তার ওভারি দুটোকে ভালো করে সংরক্ষণ করতে হবে। সেক্ষেত্রে তার পোস্ট মেনোপোজাল সিনড্রমটা আগেই চলে আসবে এবং সে ভুগবে।
প্রশ্ন : ফাইব্রয়েড হওয়ার পেছনে কোনো কারণ রয়েছে কি? সেগুলো কী কী?
উত্তর : একদম নির্দিষ্টভাবে কোনো কারণ নেই। হয়তো পারিবারিক ইতিহাস রয়েছে, মা- খালা তাদের এমন ছিল, এ কারণে তার হয়েছে। টিউমারের কোনো কারণ আসলে সে ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
প্রশ্ন : ঝুঁকিপূর্ণ কারা?
উত্তর : মধ্য বয়সী নারীরাই আসলে ঝুঁকিপূর্ণ।
প্রশ্ন : সময়মতো চিকিৎসা করা না হলে, কী কী ঝুঁকি রয়েছে?
উত্তর : একটি সুবিধা হলো এটি ক্যানসার হয় না। তবে একদম যে হয় না, সেটি বলা যাবে না। চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে এবং তার পরামর্শমতো চলতে হবে।
আর খুব রক্তপাত হলে রক্ত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়ার কারণে যদি জটিল রক্তস্বল্পতা হয়, তাহলে সার্জারি করতে হবে। হয়তো পরিবার পরিপূর্ণ হলো না, তিনি আরেকটি সন্তান নিতে চাচ্ছেন, সেক্ষেত্রে হয়তো টিউমার ধরা পড়ল। টিউমার যদি ছোট থাকে, ফলোআপে থাকলে অনেক সময় সফল হয়। আর যদি দেখা যায়, বড় হয়ে গেছে, তাহলে মায়োমেক্টোমি নিয়ে, কেবল টিউমারকে ফেলে, গর্ভধারণ করা যেতে পারে।
প্রশ্ন : সার্বিকভাবে কী পরামর্শ থাকে?
উত্তর : সব ব্যপারেই আমি বলব, আপনি নিজে নিজের প্রতি সচেতন থাকবেন এবং যদি কোনো জটিলতা মনে হয় যে আপনার কোনো পরিবর্তন হয়েছে, যেখানেই হোক না কেন শরীরের দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কখনো কখনো দেখা যাবে, কিছু হয়েছে, কখনো কখনো দেখা যাবে কিছু হয়নি। সতুরাং এ বিষয়ে সচেতন হওয়া,কোনো কিছুকে এড়িয়ে না যাওয়া, কোনো রোগকে এড়িয়ে না যাওয়া এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চলা- এগুলোই করতে হবে।
প্রশ্ন : স্ক্রিনিংয়ের বিষয়ে আপনার পরামর্শ কী?
উত্তর : মেডিকেল স্ক্রিনিং খুব জরুরি। সাধারণ রোগ, শোক রয়েছে কি না আমি অবশ্যই দেখে নেব। ডায়াবেটিস, প্রেশারতো খুব প্রচলিত আমাদের দেশে। পাশাপাশি নারী শরীরবৃত্তিয় যে বিষয়গুলো থাকে, সেগুলো চল্লিশের পরে সাধারণত হয়। তাই সার্ভাইকেল কোনো সমস্যা রয়েছে কি না, সেগুলো দেখা প্রয়োজন। সার্ভাইকেল কারসিনোমা খুব প্রচলিত। সবার করে নেওয়া উচিত। এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। স্তনের স্ক্রিনিং করা উচিত।
জরায়ুর বিষয়ে ফাইব্রয়েড খুব ছোট থাকে। এটি তেমন সমস্যা তৈরি করে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বড় হতে পারে। জেনে রাখা ভালো। চিকিৎসকের পরামর্শমতো চলা ভালো।
প্রশ্ন : সার্জারির পরে আবার কোনো সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে কি?
উত্তর : সাধারণত দেখা যায়, সার্জারির পরে কোনো সমস্যা হয় না। এমনকি যে সার্জারিতে দেখা যায়, টিউমার ফেলে দেওয়া হচ্ছে, সেসব সার্জারির পরে গর্ভধারণ করতে পারে। সেটি নিয়ে আতঙ্কে থাকার কিছু নেই।
সার্জারির পর পর একটি ফলোআপতো অবশ্যই করতে হয়। অবস্থা অনুযায়ী আমরা তিন বা চার দিন পরে রোগীকে ফলোআপের জন্য আসতে বলি। ফলোআপ করতেই হবে। প্রেশার কেমন আছে, ডায়াবেটিস কেমন রয়েছে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রয়েছে কি নেই বা সার্জারি যেই জায়গায় করা হলো, সেই জায়গাটা কেমন থাকছে- সবকিছুর জন্যই আমরা ফলোআপে আসতে বলি।
আর ব্যায়ামের তো কোনো বিকল্প নেই, বার বারই বলছি। আর পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
আর কোনো সমস্যা হলে, ব্যথা হলে, জ্বর হলে বা প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া হলে অবশ্যই দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।