ওয়ার্ল্ড ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোম ডে
দীর্ঘমেয়াদে অবসাদগ্রস্ততার লক্ষণ

আজ ওয়ার্ল্ড ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোম ডে বা দীর্ঘ মেয়াদে অবসাদগ্রস্ততা দিবস। ছয় মাসের বেশি সময় ধরে কোনো মানুষ অবসাদগ্রস্ততায় ভুগলে ধরে নেওয়া যায়, তিনি ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোমে ভুগছেন। এসব রোগী প্রতিদিনের স্বাভাবিক কাজকর্ম করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। এ ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি দীর্ঘ সময় ধরে ক্লান্তি অনুভব করেন এবং বিশ্রাম নেওয়ার পরেও এই ক্লান্তি থেকে যায়।
দীর্ঘ মেয়াদে অবসাদগ্রস্ততা কাদের বেশি হয়?
পুরুষের তুলনায় নারীদের এই রোগ বেশি হয়। ২৫ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের মধ্যে এ রোগে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি।
দীর্ঘ মেয়াদে অবসাদগ্রস্ততার লক্ষণ
- সব সময় ক্লান্ত লাগা এবং কোনো ধরনের শরীরচর্চা করতে ইচ্ছে না করা।
- একটু ব্যায়াম করলেই শরীর ঘেমে যাওয়া এবং সহজেই ঠান্ডা লেগে যাওয়া।
- শরীরচর্চার চেয়ে সব সময় শুয়ে থাকতে বা বসে থাকতে ভালো লাগা।
- কিছুই করতে ইচ্ছে না করা।
- ঘুম ভালো না হওয়া। সব সময় দুঃখের স্বপ্ন দেখা এবং দীর্ঘদিন ধরে অনিদ্রার সমস্যায় ভোগা।
- এ ছাড়া অনেক দিন ধরে মন খারাপ থাকা।
- স্মৃতি বা মনোযোগের সমস্যা হওয়া।
- মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, বমিবমি ভাব।
- অবসাদ, চাপ, উদ্বেগ, মনোবল কমে যাওয়া ইত্যাদি এই রোগের লক্ষণ।
কারণ
অনেক গবেষণার পরও গবেষকরা এর সঠিক কারণ নির্ধারণ করতে পারেননি। তবে কিছু সম্ভাব্য কারণের মধ্যে রয়েছে :
- হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, ভাইরাসের সংক্রমণ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া।
- লো প্রেশার।
- পুষ্টির অভাব।
- প্রচণ্ড মানসিক চাপ বা উদ্বেগ থেকেও এটা হতে পারে।
রোগনির্ণয়
এই রোগ নির্ধারণের জন্য কোনো নির্দিষ্ট ল্যাবরেটরি টেস্ট নেই। একেক ব্যক্তির ক্ষেত্রে লক্ষণগুলো একেক রকম হয়। একজন ব্যক্তি ছয় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতরভাবে ক্লান্তিতে ভুগলে, স্মৃতির সমস্যা থাকলে, অবসাদগ্রস্ত থাকলে, মানসিক চাপ ও উদ্বেগের মধ্যে থাকলে ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোম হওয়ার উচ্চ আশঙ্কা থাকে। এই রোগনির্ণয়ে রোগীর পরিপূর্ণ মেডিকেল ইতিহাস, শারীরিক ও মানসিক অবস্থা জানা জরুরি।
চিকিৎসা
নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। একজন ডাক্তার রোগীর শারীরিক, মানসিক অবস্থা, ঘুমের সমস্যা, হতাশা, বমিবমি ভাব, যন্ত্রণা ও উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রোগীকে সাহায্য করতে পারেন। একজন মনোরোগ কাউন্সিলর রোগীর সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দিতে পারেন।
দীর্ঘ মেয়াদে অবসাদগ্রস্ততা কমাতে যা করা যেতে পারে
• ঘুমানোর নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা। সে অনুযায়ী ঘুমাতে যাওয়া।
• নিয়মিত ব্যায়াম করা।
• গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করা, উদ্বেগ ও মানসিক চাপ কমাতে ধ্যান করা।
• রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখা।
• নিয়মিত পুষ্টিকর সুষম খাবার খাওয়া।
• শারীরিক কোনো রোগ থাকলে তার চিকিৎসা নেওয়া।
• একা একা না থেকে বেশি বেশি সামাজিক কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ, সাভার।